ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গোপালগঞ্জে চার মামলায় আসামি ৩০০৮, গ্রেপ্তার ৩০৬

* প্রয়োজনে নিহতদের ময়নাতদন্ত : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * বন্ধ বেশিরভাগ দোকানপাট জনমনে আতঙ্ক
গোপালগঞ্জে চার মামলায় আসামি ৩০০৮, গ্রেপ্তার ৩০৬

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছে। সদর উপজেলার সাতপাড়ে পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করা হয়। গত শুক্রবার রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন বাদী হয়ে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩৫০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। মামলায় ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে মোট চারটি মামলা করা হলো। গত দুই দিনে সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করে পুলিশ। চারটি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত বুধবার থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩০৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জেলার পাঁচটি থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সদর থানায় নতুন ৪৪ জনসহ ৯২ জন, কাশিয়ানী থানায় নতুন ৩৩ জনসহ ৭৭ জন, মুকসুদপুরে নতুন ২২ জনসহ ৮৮ জন, টুঙ্গিপাড়ায় নতুন ১০ জনসহ ২৭ জন ও কোটালীপাড়ায় নতুন ১০ জনসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

প্রয়োজনে গোপালগঞ্জে নিহতদের ময়নাতদন্ত-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : দরকার হলে গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতদের ময়নাতদন্ত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ময়নাতদন্ত, ঢাকার যেটা আছে, সেটার ময়নাতদন্ত হচ্ছে। আর কয়েকটা ডেডবডি তারা নিজেরা নিয়ে চলে গেছে, ময়নাতদন্ত কীভাবে হবে? ওইগুলোর যদি দরকার হয়, ময়নাতদন্ত হবে। প্রয়োজনে উত্তোলন করেও ময়নাতদন্ত করা যায়। গতকাল শনিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। গত বুধবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। তাতে চারজন নিহত হলেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই শেষ কাজ সম্পন্ন করা হয়। গুলিবিদ্ধ আরেকজন বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে মারা যান, যার ময়নাতদন্তের তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর বলেন, যারা নিউজ লাইভ করেছেন, তাদের মনে হয় এ ধরনের প্রশ্ন থাকবে না। আর যারা ছিলেন না, তাদের বহু ধরনের প্রশ্ন হয়।

যারা লাইভ করেন, অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর সেখানে পাওয়া যায়। তা না হলে স্পেকুলেশন মানে আমরা এসি রুমে বসে অনেক স্পেকুলেট করতে পারি। অনেকে অনেক কথা বলেন।

গোপালগঞ্জে সহিংসতার বিষয়ে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা ছিল কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার ব্যাপারে একটা হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটি নির্ধারণ করবে এটা কার দায়।

গোপালগঞ্জে বন্ধ বেশিরভাগ দোকানপাট, জনমনে আতঙ্ক : গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনার পর জারি করা কারফিউ ১৪ ঘণ্টার জন্য শিথিল করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। কারফিউ শিথিল হলেও শহরটিতে জনমনে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। জরুরি প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কিছু যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে। তবে যাত্রী তেমন নেই। কিছু মানুষ এদিক-ওদিক যাচ্ছেন। লঞ্চঘাট এলাকায় দু-একটি দোকান ছাড়া বাকি দোকানগুলো বন্ধ দেখা গেছে। শহরের চৌরঙ্গী, বটতলা, কালিবাড়ী, বিসিকসহ থানাপাড়া এলাকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে কিছু মানুষ আর কিছু দিনমজুর ঘর থেকে বের হয়েছেন। এর মধ্যে দিনমজুরের সংখ্যাই বেশি।

জেলা শহরের লঞ্চঘাট এলাকার এক যুবক বলেন, জরুরি কাজে শহরে এসেছিলাম। তবে কাজ হবে কি না জানি না। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। এখনো চারদিকে আতঙ্ক। কখন জানি গ্রেপ্তার হই, এই ভয়ে আছি! বিভিন্ন এলাকায় রাতে অভিযান পরিচালনা করায় সাধারণ মানুষ অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া।

এক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, কারফিউ নেই জেনে বাজার করতে এসেছি। শহরে লোকজনের আনাগোনা একদমই নেই। বাজার করছি, তবে ভেতরে ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছে।

এক ইজিবাইক চালক বলেন, গত তিন দিন ধরেই শহরে গাড়ি চালাচ্ছি। তবে ইনকাম নেই। আজকে কারফিউ নাই, ভাবছিলাম কিছু আয় হবে, তবে সেই পরিমাণ ইনকাম হচ্ছে না। মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

জেলা শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. রুহুল আমিন সরকার। তার সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কারফিউ নেই, যার কারণে সাধারণ মানুষ অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আমরা অভিযানও পরিচালনা করছি। তবে অভিযানে যেন নিরপরাধ কেউ আটক না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান।

পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান। রাতেই জারি করা হয় কারফিউ। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হলেও গতকাল সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত