রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। স্কুলের আশেপাশে ভিড় করেন স্কুল পড়ুয়া শিশুদের অভিভাবক, স্বজন ও উৎসুক জনতা। অভিভাবক ও স্বজনদের বুক ফাটা আর্তনাতে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে। আহতদের চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ইউনিট রক্তাতাদের আহ্বান জানালে হাসপাতালের সামনে ভিড় জমান রক্তদাতারা।
আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছে: এদিকে ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে বিলাপ করতে থাকা নাসিমা বেগমকে সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন আত্মীয়-স্বজনেরা। তার ছেলে রবিউল হাসান রোহান সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় রবিউলের শরীর পুড়ে গেছে। নাসিমা বেগম বলছিলেন, ‘এমন দশা ক্যামনে হইছে রে। কত মায়ের বুক খালি হইছে রে। আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছে রে।’ রোহানের বাবা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, তার ছেলের পুরো শরীর পুড়ে গেছে। তার ছেলে ইংরেজি মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
মেহরিনের দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে: জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর কক্ষের মেঝেতে পড়ে কাঁদছিলেন ফাহাদ নিয়ন। ফাহাদ তার চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া ভাগনি মেহরিনের পোড়া কাপড় ধরে কাঁদছিলেন। ফাহাদ বলেন, ‘ও খুব নিষ্পাপ। ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে। এটা ওর ড্রেস। ও খুব নিষ্পাপ ভাই। ও সারা দিন পড়াশোনা করে।’ মেহরিনের বাসা উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায়। ফাহাদ বলেন, ‘ওর ক্লাসরুমের ওখানে বিমান পড়েছে। আগুনের খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ২-৩ ঘণ্টা খুঁজেছি, পাইনি। পরে ওর শিক্ষক ফোন করে বলেন, মেহরিন বার্ন ইউনিটে। পরে এখানে আসি। দেখি, ওর দুই হাত পুড়ে গেছে। মুখ পুড়ে গেছে।’
হাসপাতালে রক্তদাতাদের ভিড় : আহতদের রক্ত দিতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ব্লাড ব্যাংকের সামনে রক্তদাতা ভিড় করেন। ব্লাড ব্যাংকের সামনে শতাধিক রক্তদাতা লাইনে দাঁড়ান। রক্ত গ্রহণে দায়িত্বশীলরা জানান, ‘এ’ পজিটিভ, ‘বি’ পজিটিভ, ‘ও’ পজিটিভ গ্রুপের রক্তদাতাদের রক্ত নেওয়া হয়। পরপর ‘এ’ নেগেটিভ, ‘বি’ নেগেটিভ, ‘এবি’ নেগেটিভ, ‘এবি’ পজিটিভ এবং ‘বি’ নেগেটিভ রক্ত নেওয়া হয়। তবে, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে রক্তদানের জন্য মাইকিং করতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবকদের। তারা প্লেকার্ড হাতে বিভিন্ন গ্রুপের নেগেটিভ রক্তদাতাদের রক্তদানের জন্য আহ্বান জানান।
ইনস্টিটিউটের বাইরে রক্তদাতা সংগঠন রিদম ব্লাড সেন্টার ফুটপাতেই অস্থায়ী ক্যাম্প খুলেছে। সেখানেই রেজিস্ট্রেশন আর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রক্ত সংগ্রহ করছে স্বেচ্ছাসেবীরা। মোহাম্মদপুর থেকে রক্ত দেওয়ার জন্য আসেন হাসান সাফি। তিনি বলেন, ‘আহতদের রক্তের প্রয়োজন। যাদের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ তারা হাসপাতালে চলে আসুন।’ রিদমের ডেপুটি ল্যাব ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘দগ্ধ রোগীদের জন্য রক্তের প্রয়োজন। আমরা হাসপাতালের বাইরে ফুটপাতেই অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছি। এখানেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রক্ত নেওয়া হচ্ছে।’ এ দিকে রক্তের জন্য উত্তরায় মাইকিং করেছে পুলিশ। সড়কে দাঁড়িয়ে পুলিশের এক সদস্যকে রক্তের জন্য মাইকিং করতে দেখা যায়। পুলিশের ওই সদস্য মাইকে বললেন, রক্তের খুব প্রয়োজন। আহতের জন্য যারা রক্ত দিকে ইচ্ছুক তারা বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল যান।