ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দগ্ধদের বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই

* সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠকে বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা * নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা দেওয়ার অনুরোধ * আমাদের সন্তানদের বিষয়ে তথ্য গোপনের কোনো ইচ্ছা নেই : আইএসপিআর * বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা অসম্ভব : প্রেস সচিব
দগ্ধদের বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই

কয়েকদিন আগেও শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে যে ক্যাম্পাস মুখর ছিল, সেটি এখন এক মৃত্যুপুরী। চারিদিকে পোড়া লাশের গন্ধ, স্বজনদের আহাজারীতে শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। বলা হচ্ছে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের কথা। গত সোমবার দুপুর ১টার পর ছাত্রছাত্রীরা যখন টিফিনের বিরতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই ঘটে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা। বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্য অনুযায়ী মোট নিহতের সংখ্যা ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি আছেন ১৬৫ জন। তারমধ্যে ৪৪ জন দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা ৮, গুরুতর অবস্থা ১৩ ও বাকি ২৩ জন মধ্যবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে আহতদের নতুন করে ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। তিনি আমাদের সরাসরি কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বা রোগীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা রোগী নিয়ে যে আলোচনা করেছি, উনি আমাদের সঙ্গে কিছু মতামত দিয়েছেন। তার মতামতের ভিত্তিতে আমরা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ঠিক করেছি। বার্নের (পোড়া) ম্যানেজমেন্ট একটি ডায়নামিক প্রক্রিয়া, এটি প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তিত হয়। আমরা ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর সিনিয়ররা রোগীদের ব্যাপারে বোর্ড মিটিংয়ে বসব, সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। আমরা শিশুদের সবসময় নিয়মিতভাবে চিকিৎসা করে থাকি। আমরা ওই পয়েন্টগুলো ধরেই তাদের চিকিৎসা করছি। তবে রোগীদের যে কন্ডিশন, তাতে তাদের এই মুহূর্তে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে যারা ভর্তি আছে, তারা যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে আবার ইম্প্রুভও করতে পারে বলে জানান তিনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে একটি টিম আসবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।

সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠকে বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা : উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের চিকিৎসা দিতে সিঙ্গাপুরের একটি মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের বৈঠক হয়েছে। বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বাংলাদেশি মেডিক্যাল টিমকে পরামর্শ ও সহায়তা দিতে ডা. চোং সি জ্যাক বাংলাদেশে এসেছেন। আজ আরও তিনজন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে আসছেন। তারা হলেন-সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ডিরেক্টর বিজয়া রাও, পুন লাই কুয়ান ও লিম ইউ হান জোভান।

মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে কেস রিপোর্ট বিনিময় এবং যোগাযোগের পর চিকিৎসক ও নার্সদের একটি দল বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। আশা করা হচ্ছে, বুধবার থেকেই তারা বার্ন ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসায় অংশ নেবেন।

নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা দেওয়ার অনুরোধ : উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর যেসব নিখোঁজ ব্যক্তির নাম আহত বা নিহতদের প্রকাশিত তালিকায় নেই, তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিবাগে সিআইডি ভবনে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান এক বিবৃতিতে এ অুনরোধ জানান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজদের মধ্যে মাত্র একটি পরিবারের পক্ষ থেকে নমুনা দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজ সব পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা গেলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিএমএইচ মর্গে বর্তমানে রাখা ছয়টি মরদেহ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে এসব মরদেহ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিআইডি ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হবে।

বিমান বিধ্বস্তে মৃত্যু ২৯, চিকিৎসাধীন ৬৯ : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২৯ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৯ জন। এদিন দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এক হালনাগাদ তথ্যে এ কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হাসান মো. মঈনুল আহসান এতে স্বাক্ষর করেছেন। যদিও গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর পর্যন্ত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছিল মৃত্যু ৩১ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএসপিআরের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৪৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২১ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন এবং হিউম্যান এইড রিসার্চ ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন আছেন। আর মৃতদের মধ্যে ১১ জন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, ১৫ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন মারা গেছেন। আইএসপিআরের সঙ্গে তথ্যে গড়মিল কেন হচ্ছে, এর ব্যাখ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল থেকে একজনের মৃতদেহ সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। সেই সংখ্যাটি নিয়ে আমাদের তথ্যের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আমরা বলেছি ১৫ জন, সিএমএইচে ১৫ জনের মৃতদেহ আছে। যদিও আইএসপিআরের তথ্যে ১৬ জন বলা আছে। তথ্যের পার্থক্যগুলো দূর হতে একটু সময় লাগবে। এছাড়া আইএসপিআরের তথ্যে লুবানা হাসপাতাল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওই হাসপাতালের তথ্য সম্পর্কে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের রেজিস্ট্রিতে কোথাও মৃত্যু নেই। কিন্তু তারা মুখে বলছে, দুজনকে মৃত অবস্থায় তাদের অভিভাবকেরা নিয়ে এসেছিলেন। ওই দুজনের নাম পরে কোনও হাসপাতালে আসেনি।

আমাদের সন্তানদের বিষয়ে তথ্য গোপনের কোনো ইচ্ছা নেই- আইএসপিআর : মাইলস্টোন ট্রাজেডি বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনার পরপরই কোনো পূর্ব নির্দেশনা ছাড়াই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত সাড়া দিয়েছে। যেমনটি সব সময় করে থাকে। আমাদের সন্তানদের বিষয়ে কোনো তথ্য গোপন করার ইচ্ছা বা প্রয়াস আমাদের নেই। আমি নিজে এবং আইএসপিআর টিম সরাসরি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।’ গতকাল বুধবার দুপুরে আইএসপিআর পরিচালক গণমাধ্যমে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আইএসপিআরের পরিচালক হিসেবে আমি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি- যেকোনো গণমাধ্যম চাইলেই এ বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। সেনাবাহিনীসহ যে কাউকে বা সংশ্লিষ্ট যেকোনো স্থান পরিদর্শন করতে পারে। আমরা সর্বোচ্চ সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি। পাশাপাশি আপনাদের যেকোনো প্রয়োজনে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। অনেকেই না বুঝে এসব গুজবে বিশ্বাস করছেন।’

বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা অসম্ভব- প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বড় বড় দুর্যোগ নিয়ে রিপোর্ট করা একজন হিসেবে আমি বলে দিতে পারি যে, বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব। গতকাল বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি। পোস্টে প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, ২০০২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অসংখ্য বড় বড় দুর্যোগ নিয়ে রিপোর্ট করা একজন হিসেবে আমি বলে দিতে পারি যে, বাংলাদেশে হতাহতের সংখ্যা গোপন করা কার্যত অসম্ভব। প্রাথমিকভাবে, পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনদের নিখোঁজ হিসেবে রিপোর্ট করে। তবে হাসপাতাল এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেলে তারা সাধারণত তাদের আত্মীয়দের শনাক্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে মাইলস্টোন কলেজ প্রতিদিনের উপস্থিতির রেকর্ড ক্রস-রেফারেন্স করে হিসাব বহির্ভূতদের শনাক্ত করতে পারে। পোস্টে তিনি জানান, গতকাল স্কুল পরিদর্শনের সময় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুজন উপদেষ্টা স্কুল ক্যাম্পাসে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের নির্দেশ দেন। এই সুবিধাটি আহত এবং মৃতদের সংখ্যা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট সরবরাহ করবে, স্কুলের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে পরিসংখ্যান মেলাবে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, উপদেষ্টারা কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রমে বর্তমান শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিলেন। আমরা আশা করছি আজ এটি পুরোপুরি কার্যকর হবে।

তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণকারীদের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট সরবরাহ করছে এবং সেনাবাহিনী এই প্রচেষ্টায় অবদান রাখছে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি যে হতাহতের পরিসংখ্যান কম করে দেখানোর কোনো কারণ সরকারের নেই। তিনি উল্লেখ করেন, গতকাল আমরা ৯ ঘণ্টা স্কুলে ছিলাম। যদিও আমরা আরও আগে চলে আসতে পারতাম, উপদেষ্টারা শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তারা যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ থাকার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। যখন উপযুক্ত সময় হয় তখন আমরা রওনা হই।

প্রাণ হারানো প্রতিটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আমাদের সমবেদনা। এটি একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি এবং তারা সবাই শহীদ। আসুন, আমরা ভবিষ্যতের ট্র্যাজেডি রোধে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে একসঙ্গে কাজ করি। সরকার জাতীয় নিরাপত্তা উন্নত করতে এবং বিমান সম্পর্কিত যেকোনো বিপর্যয় রোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

হতাহত-নিখোঁজদের তালিকা তৈরির জন্য কমিটি গঠন মাইলস্টোনের : রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত, নিহত ও নিখোঁজ শিক্ষার্থীসহ অন্যদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে ঠিকানাসহ তালিকা প্রস্তুত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার এই কমিটি গঠন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন আজ বুধবার প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি গঠনের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। ফেসবুক পেজটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজেরই বলে নিশ্চিত করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন।

ফেসবুক পেজের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দিয়াবাড়ির স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিদ্যালয় ভবনে গত সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটের সময় আকস্মিকভাবে বিমানবাহিনীর একটি বিমান ভূপাতিত হয়। ঘটনাস্থলে অনেক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক আহত ও নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত, নিহত, নিখোঁজ শিক্ষার্থী ও অন্যদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে ঠিকানাসহ তালিকা প্রস্তুত করার জন্য কর্মকর্তা, অনুষদ সদস্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলো। কমিটি কার্য সম্পন্ন করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করবে। কমিটির সভাপতি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন মো. মাসুদ আলম (উপাধ্যক্ষ-প্রশাসন), খাদিজা আক্তার (প্রধান শিক্ষিক), লুৎফুন্নেসা লোপা (কো-অর্ডিনেটর), মনিরুজ্জামান মোল্লা (অভিভাবক), মারুফ বিন জিয়াউর রহমান (শিক্ষার্থী) ও মো. তাসনিম ভূঁইয়া (শিক্ষার্থী)।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। এ ঘটনায় আহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তত ১৬৫। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাঁদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ভিড় নেই জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, প্রবেশে কড়াকড়ি : উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে আহতদের ভর্তি করার পর থেকেই জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে, গতকাল বুধবার সেখানকার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সকাল থেকে হাসপাতালটির সামনে ও আশেপাশে কৌতূহলী মানুষের ভিড় দেখা যায়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রবেশপথে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাসপাতালের বিভিন্ন ফটকে সতর্ক অবস্থানে আনসার, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা।

এমনকি সাংবাদিকদেরও ভেতরে বা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদি কোনো সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, তখন সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। অপ্রয়োজনীয় ভিড় ও কোলাহল এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সে কারণে আজ সকাল থেকেই কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু হাসপাতালের কর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন।’ হাসপাতালের চত্বরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ‘হেল্প ডেস্ক’ লেখা থাকলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।

গত মঙ্গলবার বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবকরা জড়ো হয়েছিলেন। একইসঙ্গে রক্ত দেওয়ার জন্য সেখানে হিজড়া সম্প্রদায়ের উপস্থিতি সচেতনতা ও মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল।

হতাহতদের পরিবারকে ১০ লাখ করে ক্ষতিপূরণ দিতে রিট

এদিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আহত ও নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে বিমানবন্দর এলাকায় ৪ তলার বেশি কোনও বিল্ডিং না নির্মাণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দ এ রিট দায়ের করেন।

এর আগে গত ২২ জুলাই পৃথক আরেকটি রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। সাত দিনের মধ্যে সরকারকে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মাইলস্টোন স্কুলের আহত শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ, নিহত শিক্ষার্থীদের ৫ কোটি টাকা এবং আহত শিক্ষার্থীদের ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের সব জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ বিমান উড্ডয়ন প্রশ্নেও রুল জারি করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত