ফিলিস্তিনির গাজায় হাজার হাজার শিশু ও নিরস্ত্র মানুষকে ইসরাইলের জান্তা বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করেছে এবং হত্যা করছে। আর সেই হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, বহু মুসলিম দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আঁতাত করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ফিলিস্তিনির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ফ্রান্স। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাইছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে তার দেশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। গত বৃহস্পতিবার এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাখোঁ এ ঘোষণা দেন। মাখোঁ এক্স পোস্টে লেখেন, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় যুদ্ধের অবসান ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা।’ তিনি আরও লেখেন, ‘শান্তি সম্ভব। আমাদের এখনই একটি যুদ্ধবিরতি দরকার, সব বন্দীর মুক্তি এবং গাজার জনগণের জন্য বিপুল মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।’ মাখোঁ লেখেন, ‘একই সঙ্গে হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে, গাজাকে সুরক্ষিত করতে হবে ও পুর্ণনির্মাণ করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা পুনর্গঠন করতে হবে। আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, তার টিকে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’ মাখোঁ বলেন, এসব করতে হলে ফিলিস্তিনকে নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হতে হবে ও ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে হবে। আর এ পদক্ষেপই এই অঞ্চলের সবার নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মাখোঁ এক্স পোস্টে আরও বলেন, ফ্রান্সের নাগরিকেরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায়। ফরাসি, ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি, ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদার— সবার দায়িত্ব এটা প্রমাণ করা যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ বিষয়ে নিজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা চিঠি লিখে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টকে (মাহমুদ আব্বাস) জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মাখোঁ। ফ্রান্সের ‘ঐতিহাসিক’ স্বীকৃতিকে স্বাগত জানাল সৌদি: সৌদি আরব শুক্রবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যান্য দেশকেও তা অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। রিয়াদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য আমরা প্রশংসা জানাই। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের নিজ দেশে স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার বিষয়ে সকলের ঐকমত্য হওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করেছে।’
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি হতে দেবে না ইসরাইল: ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে ইসরাইল। যার ফলে দেশটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি হতে দেবে না। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এসব মন্তব্য করেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরাইল কাটজ লেখেন, ‘আমরা এমন একটি ফিলিস্তিনি সত্তা তৈরি হতে দেব না যা আমাদের নিরাপত্তার ক্ষতি করে, আমাদের অস্তিত্ব ও ঝুঁকির মুখে ফেলে এবং ইসরাইলি ভূমিতে আমাদের ঐতিহাসিক অধিকার লঙ্ঘন করে। এই গুরুতর হুমকি প্রতিরোধে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ।’
ফরাসি পরিকল্পনা ‘বেপরোয়া সিদ্ধান্ত’: আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। এমন ঘোষণার কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি মাখোঁর এ ঘোষণাকে ‘বেপরোয়া সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে মার্কো রুবিও লিখেছেন, এ বেপরোয়া সিদ্ধান্ত কেবল হামাসের প্রচারণাকে সহায়তা করবে। আর শান্তি প্রতিষ্ঠাকে বিলম্বিত করবে।