
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। রাত পোহালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার ১৭৩ শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। ঐতিহাসিক এই নির্বাচন ঘিরে ব্যানার, পোস্টার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ঢাবি ক্যাম্পাস, যেন জাতীয় নির্বাচনের আবহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন আবাসিক হলগুলোর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার, বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের। এছাড়া সড়কের উপরে ও আশপাশে ব্যানার-ফেন্টুন সাঁটানো ও টানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে সব দলের প্রার্থীর কম-বেশি ব্যানার-ফেস্টুন থাকলেও ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীদের আধিক্য স্পষ্ট। মধুর ক্যান্টিন, টিএসসিসহ প্রতিটি চা-স্টলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নির্বাচনি আলাপ। এসব আলাপের সারাংশ, কোন প্রার্থী কেমন ফলাফল করবে। আর ভোটকে কেন্দ্র করে কোনো সংঘাত হবে কি না? তবে, সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারেন প্রার্থীরা। গতকাল শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীরা ছুটেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। জানিয়েছেন প্রতিশ্রুতি আর নানা কর্মণ্ডপরিকল্পনা।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানান তিনি।
নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার শপথ ছাত্রদলের : ডাকসু নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিনে ‘আনন্দময় ও নিরাপদ ক্যাম্পাস’ গড়ার শপথ নিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এ শপথপাঠ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে ডাকসু ও হল সংসদের দলীয় প্রার্থীদের শপথপাঠ করান ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তাদের শপথে ৮টি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়-
১) আমরা শপথ করছি যে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি আনন্দময়, বসবাসযোগ্য এবং নিরাপদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের ঘৃণিত গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বাধ্য করানো এবং ভিন্নমতের জন্য অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যেকোন মূল্যে আমাদের ক্যাম্পাসে তা আর কখনো ফিরে আসতে দেব না। (২) আমরা শপথ করছি যে, যেভাবে আমরা বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ২০২৪ এর জুলাইয়ের রক্তঝরা দিনগুলোতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, যেভাবে আমাদের অগ্রজেরা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও সাতচল্লিশের দেশভাগের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন- ঠিক একইভাবে ভবিষ্যতে যদি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিংবা জনগণের মুক্তির পথ আবারও কোনো কালো শক্তির দ্বারা অবরুদ্ধ হয়, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
(৩) আমরা শপথ করছি যে, আমাদের বোনদের তথা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক এবং সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত করব, যেখানে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সমণ্ডঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।
(৪) আমরা শপথ করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর জন্য হলগুলোতে প্রশাসনের মাধ্যমে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সহজ-সুবিধাজনক পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
(৫) আমরা শপথ করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সুরক্ষা প্রদানের জন্য আমরা সাইবার বুলিং, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেইক নিউজসহ অনলাইনভিত্তিক সব ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
(৬) আমরা শপথ করছি যে, আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আমরা শিক্ষা, গবেষণা ও পড়াশোনার পরিবেশের মানোন্নয়ন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনমূলক কার্যক্রমগুলো গতিশীল করতে নিজেদের সর্বোচ্চ নিয়োজিত রাখব।
(৭) আমরা শপথ করছি যে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলে, আমরা ডাকসুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে শিষ্টাচার, সৌজন্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখব এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ও আচরণে সর্বদা সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাব।
(৮) আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে বলতে চাই যে, আমাদের প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থী এই শপথের প্রতিটি শব্দ অক্ষরে-অক্ষরে মনে প্রাণে ধারণ করি এবং আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে প্রত্যেকের জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আপনাদের সামনে এই প্রতিটি শপথ বাস্তবায়িত হবে।
শিক্ষার্থীকে ফোন দিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা ফ্যাসিবাদী কায়দা -সাদিক কায়েম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিক্ষার্থীকে ফোন দিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা ফ্যাসিবাদী কায়দা বলে মন্তব্য করেছেন ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। গতকাল রোববার এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ডোর টু ডোর যেতে চাই, তাদের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার কথা শুনতে চাই। কোনো বড় নেতা এলাকার বাইরে থেকে ফোন দিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা একটি ফ্যাসিবাদী কায়দা।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আমরা কনফিডেন্ট, তারা সৎ, দক্ষ ও যোগ্যপ্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। কেউ কাউকে ফোন দিয়ে ভোট দিয়ে বাধ্য করা, কাউকে পরিচিত করা, এ ধরনের কাজ যারা করছেন, প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের ক্ষতি করছেন।’
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন কমিশন অপেশাদার আচরণ করছে। আমরা অনেকগুলো অভিযোগ দিয়েছি তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার কথা বলছি; কিন্তু বহিরাগতদের এনে কীভাবে নিরাপদ ক্যাম্পাস হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে সাদিক কায়েম বলেন, ‘প্রতি বছর ক্যাম্পাসে যেভাবে পরীক্ষা হয়, ডাকসুকেও আমরা ক্যালেন্ডারের মতো নিয়মিত করব। প্রতি বছর যেন একই সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই কাজ করব। ডিপার্টমেন্টে ভালো রেজাল্ট ও একাডেমিক উৎকর্ষতা যার থাকবে, তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করব। অতীতে রাজনৈতিক মতাদর্শের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে- এটা বন্ধ করব।’ তিনি শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাবার ও স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আবাসনসংকট দীর্ঘমেয়াদি। এ সংকট নিরসনে হল নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাধ্য করব। স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করব। যে আশা নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, সেই আশা পূরণ করব।’
ডাকসু নিয়ে ১০ দফা দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল রবিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়। সংগঠনের নেতারা বলেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ করে নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এবারের নির্বাচনেও তারা শুরু থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রশাসনকে নানা প্রস্তাব দিয়ে আসছে।
তারা জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ১৩ দফা দাবি ও স্বাধীন পর্যবেক্ষণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও তার কিছু অংশ বাস্তবায়িত হয়েছে; কিন্তু বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো পুনর্বিবেচনা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের উত্থেপিত ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- প্রবেশপথ বন্ধ না করে কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে ও প্রবেশপথে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে, নারী ভোটার যাচাইয়ে নারী শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে, পোলিং অফিসার নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, ভোটগ্রহণের সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাড়াতে হবে, পোলিং এজেন্টদের ভেতরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, গণমাধ্যমকর্মী ও এজেন্টদের জন্য গাইডলাইন প্রকাশ করতে হবে, বুথের বাইরে লাইন ব্যবস্থাপনায় শিক্ষক ও অফিসার নিয়োগ দিতে হবে, গুজব বা আতঙ্ক ছড়ালে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, পর্যবেক্ষক ও এজেন্টদের জন্য বিশ্রামকক্ষ নির্ধারণ করতে হবে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা থাকলে প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে।
ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের এর পক্ষে ভোট চাইলেন নাহিদ : আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) মনোনীত ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের জন্য ভোট চেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গত শনিবার রাতে নিজ ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই ভোট চান তিনি। পোস্টে নাহিদ লিখেন, আব্দুল কাদের কখনও সমীকরণে থাকে না। গণঅভ্যুত্থানের সময়গুলোতে আমরা কখনও ভাবিনি কাদের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কাদের নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছে সব সময়। জুলাইয়ের আগে ও পরে কাদের সমানভাবে কাজ করে গেছে। কাদেররা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে যখন জাতির প্রয়োজন পরে। তিনি লিখেন, গত ১ বছরে অনেকে অনেক কিছু হয়েছে। সবাই গণঅভ্যুত্থানের হিস্যা বুঝে নিয়েছে। কিন্তু কাদের সযত্নে নিজেকে আলাদা করছে সবকিছু থেকে। যদিও অনেক কিছুর দায়ভার কাদেরদের উপরে এসে পড়েছে। নাহিদ আরও লিখেন, ৯ তারিখ ডাকসু নির্বাচনে কাদের ভিপি পদে নির্বাচন করছে। সব সমীকরণ পাল্টে দিয়ে কাদের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবে সেই প্রত্যাশা রাখি। মাটি থেকে উঠে আসা নেতা আব্দুল কাদের! সাহস ও দেশপ্রেমের প্রতীক আব্দুল কাদেরের জয় হোক!
‘আপনারা ভোট দিতে আসুন, তাহলেই সমীকরণ বদলে যাবে’-কাদেরকে বললেন মেঘমল্লার
নির্বাচনের এক দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষ আরজি পেশ করেছেন বাম জোট সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা ভোট দিতে আসুন, তাহলেই সমীকরণ বদলে যাবে।’ তিনি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ হল ও নারীদের ৫টি হলের শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, ‘আমি আমার জগন্নাথ হলের ভাইদের, পাঁচটা হলের বোনদের মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারাও মনে রাখুন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থী সংসদ আছে, সেখানে বসে কারা নারীদের মোরাল পুলিসিং করত। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে, কারা অ্যাডভোকেট আলিফের মৃত্যুর পর জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে মিছিল দিয়ে গেছে ‘দিল্লি যাদের মামাবাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি’, আপনারা আপনাদের দুঃখ, গ্লানিগুলো মনে রাখুন।’ তবে তিনি বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন হলে না থাকা অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রতি। তার বিশ্বাস তারা ভোট দিতে এলেই সব ধরনের সমীকরণ বদলে যাবে।
মেঘমল্লার বলেন, ‘আমরা অনাবাসিক ভাই ও বোনদের আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিন; কিন্তু প্লিজ প্লিজ প্লিজ ৯ তারিখ ভোট দিতে আসুন। আপনারা ভোট দিতে এলেই সমীকরণ বদলে যাবে। যত সমীকরণ হচ্ছে, কোনো সমীকরণ দাঁড়াবে না। স্বাধীনতাবিরোধীরা একটা পোস্টেও জিতে আসতে পারবে না। আপনারা শুধু আপনাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন, আপনাদের শেষ ভোটটা দিয়ে যান।’ শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছুতে পারেননি। সেজন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। তবে মেঘমল্লার বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন, তার এ অক্ষমতা যেন তার ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, ‘আর যারা আমাকে ভোট দিবেন না, তারা তো দিবেনই না, কিন্তু অনেক মানুষ আছে যারা আমাদের পছন্দ করেন, ব্যক্তিগতভাবে আমাকে পছন্দ করেন; কিন্তু এই চিন্তা করছেন যে যে ব্যক্তি আমার কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি, সে নির্বাচনে জয়ী হলে কীভাবে আমার কাছে আসবে।
তাদের বলতে চাই, আমি শেষ পাঁচ দিনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলামই যেন শেষ মানুষটা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে আমি সেটা পারিনি, আমি সেটা মাথাপেতে নিচ্ছি। কিন্তু একই সঙ্গে যে অনুরোধটা করছি, যদি মনে করেন, সামনের দিনের যে পরিস্থিতি, তাতে শিক্ষার্থীদের লড়াইয়ের যোগ্য জিএস ক্যান্ডিডেট আমি, উপযুক্ত প্রার্থী আমাদের প্রার্থীরা, তাহলে প্লিজ আমি আপনার কাছে শারীরিকভাবে পৌঁছাতে পারিনি, শুধু এই কারণে আমাকে আপনার ভোটটা থেকে বঞ্চিত করবেন না। যদি মনে করেন আমি যোগ্য প্রার্থী, তাহলে আমাকে এই গ্রেইসটুকু দিন, সামনের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর জনে জনে পৌঁছানোর যে দায় সেটা আমি পূরণ করব, এই ওয়াদা আমি এখানে বসে করলাম।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭২-৭৯ সময়কালে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন ভণ্ডল হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম ২ নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদণ্ডছাত্রলীগের এবং বাসদণ্ডছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান। ১৯২২ সালে ডাকসু সৃষ্টি হওয়ার পর বিগত ৯৬ বছরে ডাকসুর ইতিহাসে পরপর দুটি মেয়াদে লাগাতার ডাকসুর ভিপি এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামান। যে দুটি মেয়াদে তারা নির্বাচিত হন সে দুটি মেয়াদ ছিল (১) ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এবং ১৯৮১-৮২।
১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৯৮৯-৯০ সেশনে দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মুশতাক আহমেদ। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন।
সবশেষ ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ডাকসু নির্বাচন, যেটি ছিল ১৯৯০-এর পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর সভাপতি (ভিপি), বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।