ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু কার হাতে- উত্তর মিলবে আজ

২৮ পদের বিপরীতে লড়ছেন ৪৭১ জন
ডাকসু কার হাতে-  উত্তর মিলবে আজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হলের বাইরে আটটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। অন্যবারের তুলনায় এবার ডাকসুতে ব্যালটের আকার বেড়েছে। এবার ডাকসুতে থাকছে পাঁচ পৃষ্ঠার ব্যালট। আর হল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। এ ভোট দিতে হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে। এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে। এরই মধ্যে ভোট দেওয়ার নিয়মকানুন ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস। এই ভিডিও চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোট প্রদানে ছাত্রছাত্রীকে উৎসাহিত করতে তিনটি অনুষদ ও একটি ইনস্টিটিউটে সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব সভায়ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন ভোটারদের ভোটদানের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

এদিকে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনের আগে পুরো ক্যাম্পাস এখন উৎসবের আমেজে ভরপুর। প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার-ব্যানার, মিছিল-মিটিং আর নানান আয়োজন গত রোববার শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় আগেভাগেই নিয়েছে উৎসবের রূপ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর ডাকসুর ভোট ঘিরে তারা ভীষণ উচ্ছ্বসিত। কারণ, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসবে, যা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও সামাজিক পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যেভাবে ভোট দেওয়া যাবে : ভোটার তার সুবিধাজনক সময়ে নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটকেন্দ্রে থাকা পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার তার পরিচয় নিশ্চিত করবেন। ভোটার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হলে তার লাইব্রেরি কার্ড অথবা পে-ইন স্লিপ দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল আইডি কার্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। পরিচয় নিশ্চিতের পর ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেবেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা। ভোটার তালিকায় নিজের নামের পাশে স্বাক্ষর করবেন ভোটার। এরপর পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার নম্বর জানাতে হবে। ব্যালট নিয়ে ভোটার প্রবেশ করবেন গোপন ভোট কক্ষে। মুঠোফোন বা কোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নিয়ে ভোট কক্ষে প্রবেশ করা যাবে না। ব্যালট পেপার থেকে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর খুঁজে বের করবেন ভোটার। এরপর পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশের ঘরে স্পষ্টভাবে ক্রস চিহ্ন দেবেন ভোটার। খেয়াল রাখতে হবে, ক্রস চিহ্নটি যেন ঘরের বাইরে না যায়। পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদান শেষে ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার জমা দেবেন ভোটার। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের জন্য দুটি আলাদা ব্যালট বক্স থাকবে। ব্যালট পেপার ভাঁজ না করে সেগুলো নির্ধারিত বাক্সে ফেলে ভোটার তাঁর ভোটদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট : নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে, আর ব্রেইল পড়তে পারেন, তাঁদের জন্য প্রথমবারের মতো ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে যাঁরা ব্রেইল পড়তে পারেন না, তাঁরা আরেকজনের সহযোগিতা নিয়ে অন্য সবার মতোই ভোট দিতে পারবেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দিতে হল থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পেয়েছে কমিশন। তাঁরা এবার ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর। শারমীন কবীর বলেন, ‘ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট নিতে প্রথমে আমরা হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছিলাম। সাতটি হল থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পেয়েছি। যাঁদের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা আছে, কিন্তু ব্রেইল পড়তে পারেন- এমন শিক্ষার্থীরাই এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। আর যাঁরা ব্রেইল পড়তে পারেন না, তাঁরা আগের নিয়মে একজনের সাহায্য নিয়ে ভোট দেবেন। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত পোলিং কর্মকর্তারাও তাঁদের সাহায্য করবেন।’ ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটদানের পদ্ধতি সম্পর্কে শারমীন কবীর বলেন, এই পদ্ধতিতে ডাকসুর ব্যালট পেপার হবে ৩০ পাতার, যা একটি পাতলা বুকলেটের মতো হবে। ডাকসুর ব্রেইল ব্যালটের শুরুতে পদের নামসহ একটি সূচিপত্র থাকবে, যা থেকে ভোটাররা ব্যালটের কোন পাতায় কোন পদের তালিকা আছে, সেটি সহজেই খুঁজে পাবেন। আর হল সংসদের ব্যালট হবে তিন থেকে চার পাতার।

লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়েও ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষেধ : ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে বৈধ বা লাইসেন্সধারী অস্ত্র নিয়েও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র বহন করতে পারবেন। গতকাল সোমবার ডাকসুর চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৮-১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া অন্য কেউ তার বৈধ বা লাইসেন্সধারী অস্ত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকার মধ্যে বহন করতে পারবেন না। কেউ বহন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলো (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত) সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবেন।

ডাকসু নির্বাচনে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি দেখানো হবে ভোট গণনা : ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহণের আগে সাংবাদিকদের সামনে ফাঁকা ব্যালট বাক্স সিলগালা করা হবে। পরে ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোট গণনা ‘সরাসরি’ এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে। গত রোববার ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্য একটি বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন কমিশন বলেছে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা ব্যাগ, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, পানির বোতল ও তরল কোনো পদার্থ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যা জানালো সেনাসদর : ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে সেনাসদর। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না এবং আজ (মঙ্গলবার) ডাকসুর ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা রাখবে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এর আগেও আমরা আইএসপিআরের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বলেছি ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবুও কিছু স্বার্থন্বেষী মহল প্রোপাগান্ডা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই প্রোপাগান্ডা করে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছে আমরা তাদের সবার মঙ্গল কামনা করি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু পরিবেশে গণতন্ত্র চর্চা চাই এবং নির্বাচনের চর্চা হোক আমরা এটাই চাই।

সাইবার হামলার শিকার ডাকসুর ছাত্রদল-শিবিরের প্রার্থীরা : ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা সাইবার হামলার অভিযোগ এনেছেন। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই উভয়পক্ষ তাদের প্রার্থীদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হওয়ার অভিযোগ আনেন। সকালে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের আইডি ডিজেবল হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে একবার উদ্ধার করলেও দুপুরে পুনরায় তার অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা। একইভাবে প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামীম এবং এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদের অ্যাকাউন্টও ডিজেবল হয়। পরে যদিও সেগুলো ফেরত পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ বলেন, ‘আমার আইডিটিও লক করা হয়েছিল। পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। কতক্ষণের জন্য টিকতে পারবো জানি না। আবিদ ভাই- হামীমের আইডি ভেরিফায়েড ছিল। আমার আইডি ভেরিফায়েডও না। আমাদের এভাবে পরাজিত করা সম্ভব যদি কেউ ভাবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের সাইবার অ্যাটাক আর চলমান সাইবার বুলিংয়ের জবাব দেবে।’

শিবির সমর্থিত ভিপিপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েমের অ্যাকাউন্টও ডিজেবল করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। প্যানেলের গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী সাজ্জাদ হোসাইন খানের অ্যাকাউন্টও ডিজেবল করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিবিরের মহানগর সভাপতি রেজাউল করীম শাকিলের অ্যাকাউন্টও ডিজেবল করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আমার ফেসবুক আইডি সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্যানেলের অন্য প্রার্থীদের আইডিতেও ক্রমাগত সাইবার অ্যাটাক হচ্ছে।

সব মতের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়তে চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট : সব দল-মতের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়তে চায় বলে জানিয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে শেষ দিনের মতো প্রচারের পর গত রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যানটিনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি, প্রচার-প্রচারণাসহ সামগ্রিকবিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এ জোটের নেতারা।

ডাকসু নির্বাচনের জন্য এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি সব শিক্ষার্থীর কাছে যাওয়ার জন্য। সবার কাছে আমাদের মূল বার্তা ছিল, শিক্ষার্থীদের কথাই আমাদের কথা, তাঁদের আকাঙ্ক্ষাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা।’

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা করবেন বলে জানান সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘আগামী এক মাসে কোন কোন কাজ করব, তা ইশতেহারে দিয়েছি। আমরা আমাদের নীতিগত জায়গায় কাজ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করব। শিক্ষক মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করব। লাইব্রেরি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো নিয়ে কাজ করব।’

নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন এই প্রার্থী। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী বোনদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের লড়াই চলবে।

ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে ‘ছাত্রলীগ নেতা’ সিজারের করা রিট খারিজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত চেয়ে এবং এ নির্বাচনে ভিপি পদের প্রার্থিতা ও ব্যালট নম্বর পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদারের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রিট সরাসরি খারিজের আদেশ দেন।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সরদার আবুল হোসেন। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদারের করা রিট শুনতে অপারগতা প্রকাশ করে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট দেখছেন জানিয়ে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন।

গত ৩১ আগস্ট ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদের প্রার্থিতা ও ব্যালট নম্বর পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় তার নাম ও ব্যালট নম্বর পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই রিটে।

ডাকসু নির্বাচনে মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর গত ২৬ আগস্ট নির্বাচন কমিশন ডাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। চূড়ান্ত তালিকায় ভিপি প্রার্থী হিসেবে জুলিয়াস সিজার তালুকদারের নাম ছিল। তার ব্যালট নম্বর ছিল ২৬। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের হাউজ টিউটর ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনে জুলিয়াস সিজার তালুকদারের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ দেন। পরে অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে শুনানি হয়। কিন্তু নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল তার প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ পাঠায়। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন জুলিয়াস সিজারের প্রার্থিতা ও ব্যালট নম্বর বাদ দেয়। অভিযোগের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে গত ২৭ আগস্ট চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান জুলিয়াস সিজার তালুকদার। এতে সাড়া না পেয়ে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন জুলিয়াস সিজার তালুকদার।

ডাকসু নির্বাচনে এক প্রার্থীকে শুভকামনা জানালেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার : ডাকসু নির্বাচনের ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী মুহাইমেনুল ইসলাম তকি। সুদূর পাকিস্তান থেকে এক ভিডিও বার্তায় তাকে শুভকামনা জানিয়েছেন দেশটির সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। গত রোববার এক ভিডিও বার্তায় মিসবাহ-উল হক বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম তকি ভাই, আমি আশা করি আপনি ভালো আছেন। আপনার জন্য আমার শুভকামনা থাকবে। আপনি অনেক ভালো ক্রিকেটার এবং ভালো মানুষ। আমার আশা আপনি ৯ সেপ্টেম্বর অনেক ভালো করবেন। সবাই আপনার সঙ্গে আছে। আমার তরফ থেকে আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া। ভালো থাকবেন, ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন।’

এবারের ডাকসুতে সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে লড়ছেন তকি। তিনি ঢাকা লিগ খেলা এবং জাতীয় স্পিন ক্যাম্পে অংশ নেয়া একজন ক্রিকেটার। ক্রীড়া সম্পাদক পদে তকি লড়ছেন আরও ১২ জনের সঙ্গে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭২-৭৯ সময়কালে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন ভণ্ডল হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম ২ নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদণ্ডছাত্রলীগের এবং বাসদণ্ডছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান। ১৯২২ সালে ডাকসু সৃষ্টি হওয়ার পর বিগত ৯৬ বছরে ডাকসুর ইতিহাসে পরপর দুটি মেয়াদে লাগাতার ডাকসুর ভিপি এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামান। যে দুটি মেয়াদে তারা নির্বাচিত হন সে দুটি মেয়াদ ছিল (১) ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এবং ১৯৮১-৮২। ১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৯৮৯-৯০ সেশনে দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মুশতাক আহমেদ। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। সবশেষ ২০১৯ সালের ১১ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ডাকসু নির্বাচন, যেটি ছিল ১৯৯০-এর পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর সভাপতি (ভিপি), বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত