প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল থমথমে পরিবেশ বিরাজ করেছে। মুহুর্মুহু বজ্রপাতের পর যেমন আকাশ ছেয়ে যায় নিস্তব্ধতায়, ঠিক তেমনই হুলস্থুল প্রচারণার পর ফুরসত পেয়ে জিরিয়ে নিচ্ছিল ঢাবির পথ, ঘাট।
এই কয়দিন অফলাইন প্রচারণার পর ক্লান্ত প্রার্থীরা অনলাইনে সরব ছিলেন গতকাল। কয়েকজনের আইডি ডিজেবল হওয়ার খবরও শোনা গেছে। সবাই অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করেছেন- ‘৯ তারিখের বোমাটা ব্লাস্ট হবে কার নামে’, তা দেখার জন্য।
কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৮টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। যেখানে ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) পদের জন্যই লড়ছেন ৪৫ জন। তবে, আসল লড়াইটা কি ৪৫ জনের মধ্যেই হচ্ছে? উত্তর হবে, ‘না’। লড়াইটা মূলত ৫ জনের মধ্যে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েম, ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান, উমামা ফাতেমা, জালালুদ্দিন মুহম্মদ খালিদ ও শামিম হোসেনের মধ্যে।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এবং নির্বাচন প্রচারকালীন শিবিরের কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের মনে পজিটিভ ‘ভাইব’ দিয়েছে। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে শিবিরের প্যানেলটিও বেশ প্রসংশা কুড়িয়েছে। তারা যে ইনক্লুসিভ প্যানেলের কথা বলেছিলেন, তাদের প্যানেলে সেই ইনক্লুসিভিটির দারুণ প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন হলের প্রজেকশন মিটিং থেকেও শিবিরের প্রতি শিক্ষার্থীদের পজিটিভ ধারণার ঈঙ্গিত পাওয়া গেছে। অপরদিকে ছাত্রদলের জনপ্রিয়তাও কোনো অংশে কম নয়। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনটা মূলত ছাত্রশিবির আর ছাত্রদলের মধ্যে হচ্ছে। এই বক্তব্য কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শীর্ষ পদগুলাতে ছাত্রদল এবং শিবিরের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে শিক্ষার্থীদের অনুমান। জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্য থেকে আরাফাত চৌধুরীকে নিয়েও মাতামাতি হচ্ছে বেশ। তবে, এনসিপির আবু বাকের মজুমদার, শিবিরের এস এম ফরহাদ এবং ছাত্রদলের তানভীর বারি হামিমণ্ড জিএস পদে তাদের নিয়েও আলোচনা কম নয়। জিএস পদের নারী প্রার্থী হিসেবে ছাত্র অধিকারের সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়েও আশা করছেন অনেকে।
এজিএস পদে তাহমিদ আল মোদাস্সির এবং মহিউদ্দিন খানকে এগিয়ে রাখছেন শিক্ষার্থীরা। সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ মনোনীত নারী প্রার্থী ফাতেহা শারমিন অ্যানিকে নিয়েও আশাবাদী নারী শিক্ষার্থীরা। বাকি পদগুলোতেও প্রত্যেকটা প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আনুপাতিক হারে জয় আসবে বলে ধারণা।
হল সংসদগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আধিপত্য বেশি। যেহেতু শিক্ষার্থীরা হলভিত্তিক রাজনীতিতে অনিচ্ছুক, তাই তারা হলকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেছে নেবেন। গত রাতটাই মূলত বিজয়ী নির্ধারণের রাত। ভোটাররা যাচাই-বাছাইয়ে ব্যস্ত- কে প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য, তাকে বেছে নিতে।
অনুমান করা যায়, এখন পর্যন্ত ছাত্রশিবির এগিয়ে। উদ্বেগ্ন-উৎকণ্ঠা নিয়ে নির্ঘুম অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা- ‘আজকের বজ্রপাতটা ঠিক কার দুয়ারে আঘাত হানবে!’