
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কথা ছিল গতকাল শুক্রবার সকালে। কিন্তু পরে জানানো হয় দুপুরে হবে ফল প্রকাশ। এরপর আবার নির্বাচন কমিশন জানায় ফল প্রকাশে রাত হয়ে যাবে। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও ফল না পেয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দেয়। গতকাল সকালে চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর কারণ হিসেবেও নির্বাচনের আয়োজনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন অনেকে। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং অফিসার সুলতানা আখতার সিনেট ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জান্নাতুলের মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলেন, ‘আমার সহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস ভোট গণনার চাপ সহ্য করতে না পেরে মারা গেছেন। তিনি যথেষ্ট বিশ্রাম পাননি, রাতে ঘুমাতে পারেননি, তাকে জোর করে অফিসে এনে ভোট গুণতে বাধ্য করা হয়।’
‘নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানায় ভোট গণনা হবে ওএমআর মেশিনে। কিন্তু পরে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে ম্যানুয়াল গণনার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ভোট গণনা যদি ম্যানুয়ালেই করতে হয়, তবে তা হলভিত্তিক করা হলো না কেন,’ প্রশ্ন করেন তিনি।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ সিকদার শাওন বলেন, ‘৩৩ বছর পর আমরা অনেক আশা নিয়ে ভোট দিয়েছি। কিন্তু ফল ঘোষণায় এত দেরি সেই আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন কারচুপির ব্যাপারে। যদি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়, তাহলে ১১ হাজার ভোট গুনতে এত সময় লাগছে কেন? আমরা হতাশ।’
শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ হাজার ভোটার ছিল, সেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হয়। অথচ এখানে মাত্র ১১ হাজার ভোট, তারপরও গণনায় এত দেরি। আমরা সারারাত এজেন্টসহ অপেক্ষা করেছি। এখন সবাই ক্লান্ত আর হতাশ। প্রয়োজন হলে আরও জনবল নিয়োগ দিয়ে দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করতে হবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশিদুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ভোট গণনায় দেরির প্রাথমিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা গেছে। রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে সব ভোট গণনা শেষ করে অনানুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, পোলিং এজেন্টদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ এনে জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল, সংশপ্তক, সম্প্রীতির ঐক্য ও স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ প্যানেল। এছাড়া অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাও দেয় বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক।
এবারের নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন। ভোটগ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়। এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৭ জন প্রার্থী। নির্বাচনে বামপন্থি, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে সর্বমোট আটটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। ছাত্রদের ১১টি ও ছাত্রীদের ১০টি হল মিলিয়ে মোট ২১ ভোটকেন্দ্র ঠিক করা হয়। নির্বাচনে ৬৭ জন পোলিং অফিসার (শিক্ষক) এবং ৬৭ জন সহায়ক পোলিং অফিসার (কর্মকর্তা) নিয়োগ করা হয়।
ফলাফল ঘোষণার আগেই জাকসুর নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ : এবার জাকসু নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করলেন নির্বাচন কমিশনার। নানাভাবে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ আখ্যায়িত করে ও নিজের মতামত না নেওয়ায় সাংবাদিকদের সামনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। পদত্যাগকারী নির্বাচন কমিশারের নামে অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করায় শিক্ষকদের ক্ষোভ : জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয় বৃহস্পতিবার বিকালে। ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনও শেষ হয়নি ভোট গণনা। তাই কখন নাগাদ ফলাফল ঘোষণা করা হবে তাও অজানা। এদিকে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এভাবে ফলাফল গণনা করতে গিয়ে তারা পেরেশানি হয়ে যাচ্ছেন। এমনকি চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর জন্য নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন তারা। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘যে অমানুষিক পরিশ্রম আমরা করেছি, তার প্রতিদান হলো আমার সহকর্মীর মৃত্যু। আর রেমুনারেশন (সম্মানী) তো কি বলব! এর চেয়ে শ্রমিক হিসেবে কামলা দিলেও ঘণ্টা হিসেবে রেমুনারেশন বেশি পেতাম।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হলে ভোট নেওয়া হয়েছে। তাহলে ভোট কাউন্ট হলে করলে গতকাল রাত ১১টার মধ্যেই রেজাল্ট দেওয়া যেত। ২১টি হলে ভোট কাউন্ট হলে সিনেট ভবনে যে ভিড় হয়েছে সেটি এড়ানো যেতো। ভোট কাউন্টের বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা না থাকায় আমাদের অনেকেই ভোট কাস্ট করে সিনেট ভবনে রাতে ছিলাম। পরে আমি অসুস্থবোধ করায় বাসায় চলে আসি। আমাকে বলা হল, এখন রেস্ট নাও, রাত ৪টায় ডাকা হবে, তোমার হলের কাউন্টিংয়ের সময়। স্ট্রেস এবং চিন্তা নিয়ে আমি ঘুমাতে পারিনি- কখন আবার আমাকে যেতে হয় সিনেট ভবনে।’
অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘গত (বৃহস্পতিবার) রাতেই যদি ভোট কাউন্টিং শেষ হয়ে রেজাল্ট হতো, তাহলে আজকে সকালে আমার সহকর্মীর মৃত্যু দেখতে হতো না। আমার প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে? আরও সহকর্মী যে অসুস্থ হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? হলে ভোট কাস্ট করা হলো; কিন্তু গণনা সিনেট ভবনে কেন?’ তিনি বলেন, ‘২১টি হলে ভোট কাউন্ট হলে প্রতিটি হলে একটি করে টেবিল থাকলেও ২১টি টেবিলে একসঙ্গে কাউন্ট হতো...ভোট মেশিনের মাধ্যমে কাউন্ট না করে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে কার স্বার্থে এবং কেন ম্যানুয়ালি শুরু করা হলো? জান্নাতুল ফেরদৌসের এই মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই অব্যবস্থাপনাই দায়ী।’
নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে শিবির সভাপতির ক্ষোভ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে জাহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মানে ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ আইডিয়া জেনারেট হবে, এটাই আমরা জানি। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করছেন, উনারা যে কতটা সময় ও ব্যবস্থাপনা জ্ঞান রাখেন, মাসাল্লাহ জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে তা প্রমাণ দিচ্ছেন!!’ তিনি আরও লেখেন, ‘পুরো দুনিয়া সেকেন্ড হিসাব করে পথ চলে। আর আমরা দিন-মাস হিসাব করি। কী পরিমাণ প্রোডাক্টিভ সময় আমরা নষ্ট করছি, তার হিসাব কে দেবে। তাহলে কীভাবে আমরা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকব।’
পোস্টের শেষ অংশে ছাত্রশিবিরের সভাপতি লেখেন, ‘দলকানা, নিম্নমানের ব্যবস্থাপনা জ্ঞান ও সময় জ্ঞানহীন শিক্ষক ও প্রশাসন দ্বারা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। চলতে দেওয়া হবে না।’
বাগছাস বলছে জাকসু নির্বাচন ‘ত্রুটিযুক্ত’, তবে মেনে নেবে ফলাফল : জাকসু নির্বাচনকে ‘ত্রুটিযুক্ত’ বলে বর্ণনা করলেও ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা ও শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য সেটি মেনে নেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) জাবির সদস্যসচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দেড়টায় সংবাদ সম্মেলনে বাগছাসের সদস্যসচিব এবং ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম ফলাফল যা-ই হোক, মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাগছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে ভিপি পদপ্রার্থী ও বাগছাস জাবির আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল।
লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিয়াম বলেন, ‘জাকসু যে শুরু হলো, এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিশেষ করে সাত-আট হাজার শিক্ষার্থী এত প্রতিকূলতার পরে ভোট দিয়েছেন। বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এ জন্যই আমরা বলছি, এ নির্বাচনটা আমরা বর্জন করছি না। কিন্তু এই নির্বাচনটা যে ত্রুটিযুক্ত, সেটা আমরা অ্যাড্রেস করছি।’ তিনি বলেন, ‘তবে আমরা বলছি, ৩২ বছরের নো-জাকসু কাটিয়ে আমরা একটা ব্যাড ইলেকশনের মাধ্যমে হলেও যে জাকসু আমরা পেয়েছি, তা দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্য এ জাকসুটা আমাদের দরকার। আমরা মনে করি, এ জাকসু যদি আমরা বর্জন করি, এটা যদি বানচালের দিকে যায়, তাহলে হয়তো এ প্রশাসন আমাদের সামনে আবারও একটা ৩৩ বছরের জটলা আনবে। সেটি হলে জাহাঙ্গীরনগরের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলবে।’
ভোটগ্রহণের দিনও অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ তোলে বাগছাস। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিভিন্ন হলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার হয়নি বা সহজে মুছে গেছে। অনেক ব্যালটে ছবি না থাকায় জাল ভোটের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফজিলতুন্নেসা, তাজউদ্দীন ও রফিক-জব্বার হলে ভোটার পরিচয় যাচাই না করে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। আবার বেশ কয়েকটি হলে প্রার্থী ও সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তারা ভোটকেন্দ্রে লিফলেট বিতরণ, টোকেন সরবরাহ, লাইন জ্যামিং এবং প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট করেছেন।
এর আগে জাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) জাবি শাখা সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ ২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেন। এতে ভিপি পদে বাগছাসের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং জিএস পদে রয়েছেন সদস্যসচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে মালিহা নামলাহ ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে জিয়া উদ্দিন আয়ান লড়াই করেছেন।
নির্বাচন বানচালে ইন্ধন দিচ্ছেন বিএনপি নেতা, অভিযোগ শিবিরের জিএস প্রার্থীর : জাকসু নির্বাচন বানচালে ইন্ধন দিচ্ছেন বিএনপি নেতা, অভিযোগ শিবিরের জিএস প্রার্থীর বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন তিনি। মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রসাশনের ভেতরে একটি গ্রুপ রয়েছে- যারা ঠুনকো অজুহাতে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় বা বানচাল করতে চায়। নির্বাচন বানচালে মূলত ইন্ধন দিচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম স্যার। তিনি আরও বলেন, নজরুল ইসলাম স্যার মেয়েদের একটি প্রভোস্ট হয়েও আরেকটি হলে ঢুকে মব সৃষ্টি করেছেন এবং ভোট সাময়িক স্থগিতের জন্য তিনি দায়ী ছিলেন। ছাত্রদলকে ব্যবহার করেও তিনি ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও সকালে একজন শিক্ষিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এখন আবার অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির করছেন তিনি। মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একদিন পরেও ফলাফল ঘোষণা না করায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে শিবির। অভিমানী সন্তানের রাগ ভাঙাতে ছাত্রদলের দাবির মুখে ওএমআর মেশিন বাতিল করা হয়েছে। এখন সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল বানচাল করার জন্য।
নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান : দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ফলাফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। তারা অভিযোগ করেন, ভোটগ্রহণের এক দিন পরেও ফলাফল প্রকাশ না করা অগ্রহণযোগ্য।
শিবির-সমর্থিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম মাজহার বলেন, ২১টি হলের ভোট গণনা শেষ হওয়া সত্ত্বেও এখনো জাকসুর ভোটগণনা শুরু হয়নি। এটি জাকসু বন্ধের পাঁয়তারা। আমরা দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোট গণনা করে ফলাফল দিতে হবে। জাকসু বন্ধে পাঁয়তারা শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। স্বতন্ত্র সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ভোটের পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও ফলাফল দিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। এরমধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ। আমরা প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে বলছি- ফলাফল দিতে হবে, নয়তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পরে হলের কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে আনা হয় এবং রাত ১০টার কিছু পর শুরু হয় গণনা কার্যক্রম।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হলে অনুষ্ঠিত হয় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। প্রথমে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা হবে বলে জানালেও, পরে মেশিন সরবরাহ নিয়ে ছাত্রদল ও শিবিরের পারস্পরিক দোষারোপের পর হাতে ব্যালট গোনার সিদ্ধান্ত হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে নেওয়া হয় এবং সব প্রস্তুতি শেষে রাত ১০টার পর শুরু হয় গণনা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ১৯টি হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হয়।