
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদের ভোটগণনা হবে ওএমআর পদ্ধতিতে। গতকাল রোববার দুপুরে কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম।
এর আগে গত শনিবার আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল ও রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ নামে দুটি প্যানেল রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ম্যানুয়ালভাবে করার প্রস্তাব জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দেখেছি ইভিএম এর মাধ্যমে কীভাবে ভোট কারচুপি করা হয়, রাকসুতেও এমন হতে পারে। এ ছাড়াও, ইভিএম এ ক্যারিক্যাচার করার মাধ্যমে ভোট কারচুপি হতে পারে। আমরা চাই, প্রশাসন বেশি জনবল নিয়োগ করে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করুক।
এ সময় ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গণনা করা হলে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই, দীর্ঘদিন পর যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, তাই নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। আমরা স্বচ্ছ ভোট বাক্স স্থাপন, ম্যানুয়ালি ভোট গণনাসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই ১২ দফা দাবি জানিয়েছি। ডাকসু ও জাকসুতে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। আমরা চাই না রাকসুতে এই বিতর্ক হোক। ভোটার সংখ্যা বেশি হলে আপনারা জনবল বাড়িয়ে ভোট গণনা করবেন।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা নিয়ে তারা কী রকম সমস্যায় পড়েছে সেটা আমরা দেখেছি। ছাত্রদলসহ দুটি সংগঠন ম্যানুয়ালি ভোট গণনার দাবি জানালেও তা সম্ভব নয়। কারণ, রাকসু, সিনেট ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০৫ জন। হাতে গণনা করলে নির্বাচনের ফলাফল পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তাই ওএমআর শিটে ভোটগ্রহণ হবে এবং ফলাফল গণনা করা হবে ওএমআর মেশিনে।
এদিকে রাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে তৈরি করা হচ্ছে ১০২টি ইস্পাতের ব্যালট বাক্স। এক সপ্তাহের মধ্যেই এগুলো প্রস্তুত হবে। পাশাপাশি ভোট গণনা করা হবে ইলেকট্রনিকস মেশিনের মাধ্যমে। গত শনিবার দুপুরে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ব্যালট বাক্স তৈরির কাজ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাক্স তৈরিতে খরচ হবে তিন হাজার চারশ টাকা করে।
অধ্যাপক নজরুল বলেন, আমাদের ব্যালট পেপার ভাঁজ করা যাবে না। তাই যদি স্বচ্ছ বাক্স ব্যবহার করা হয়, তাহলে ভোটাররা কাকে ভোট দিচ্ছেন, তা বাইরে থেকে দেখা যাবে। এজন্যই ইস্পাতের বাক্স তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো ভবিষ্যতের নির্বাচনেও ব্যবহার করা যাবে।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে তিনি জানান, রাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৩২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরই প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।
ভোট গণনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘সব ভোট গণনা হবে ইলেকট্রনিক মেশিনে। একাডেমিক ভবনগুলোতে ভোটকেন্দ্র থাকবে। ভোটগ্রহণ শেষে সব ব্যালট বাক্স একত্রিত করে বিশেষজ্ঞ কমিটির তত্ত্বাবধানে গণনা করা হবে।’
রাকসু হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যালট নম্বর বরাদ্দের নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন। গত শনিবার রাতে এক জরুরি সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা তিনটার দিকে সিনেট ভবনে রাকসু ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধিদের লটারির মাধ্যমে ব্যালট বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে গত শনিবার রাতে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসমর্থিত প্যানেলসহ বেশ কয়েকটি প্যানেলের ভিপি প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে যান। তাঁরা প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর বরাদ্দের আগের নিয়ম নিয়ে আপত্তি তোলেন। পরে নির্বাচন কমিশন এ নিয়ে জরুরি সভায় বসে। সভা শেষে রাকসু নির্বাচনের ব্যালট নম্বর বরাদ্দের নতুন নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা ফজলুল হক হলসহ কয়েকটি হলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই ব্যালট নম্বর বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেসব দলের প্যানেল রয়েছে, তাদের লটারির আওতায়ও আনা হচ্ছিল না। এ নিয়ে শেরেবাংলা ফজলুল হক হলের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী কাউসার হাসান পরদিন বুধবার নির্বাচন কমিশনে আসেন। তিনি ব্যালট নম্বর বরাদ্দের বিদ্যমান নীতিমালার সংস্কার দাবি করেন। সেদিন নির্বাচন কমিশন লিখিত আবেদন না গ্রহণ করলেও এ নিয়ে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায়।
এ নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় কয়েকটি প্যানেলের ভিপি প্রার্থীরাসহ অন্য প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে কথা বলতে যান। রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের আগের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীদের তালিকা প্যানেল আকারে জমা হলে লটারির মাধ্যমের প্যানেলের ক্রমধারা নির্ধারিত হবে। নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নামের তালিকা বাংলা বর্ণমালার আদ্যক্ষর ক্রমানুসারে প্রকাশ করবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫এর প্রার্থীদের প্রত্যেকের ব্যালট নম্বর প্রতিটি পদের বিপরীতে লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
ছাত্রদলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিঠুসহ ১৪ পদপ্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এদিকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদের পদপ্রার্থীরা। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্রুতই ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আজ ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
কমিশনের তথ্যমতে, ভিপি পদে ২ জন, জিএস পদে ১ জন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে ১ জন, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ১ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১ জন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১ জন, সহক্রীড়া সম্পাদক পদে ১ জন, সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১ জন সহ পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ১ জন ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ১ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
এর আগে, কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ১৯ জন, জিএস পদে ১৪ জন, এজিএস পদে ১৬ জন, ক্রীড়া ও খেলাধুলা বিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, সহকারী ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে ৬ জন, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৭ জন, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১০ জন, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১০ জন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সহকারী সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৭ জন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে ৭ জন, সহকারী মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে ১০ জন, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে ৬ জন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৮ জন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য ৪ পদে ৫৫ জন মনোনয়ন জমা দেন।