ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভোটের প্রচারে সরগরম রাবি ক্যাম্পাস

ভোটের প্রচারে সরগরম রাবি ক্যাম্পাস

ডাকসু ও জাকসু নিবাচনের আমেজের হাওয়া লাগছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসু)। চলতি মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।

কমিশনের তথ্য অনুসারে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনে ২৩টি পদের বিপরীতে মোট ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৪৮ জন, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি পদে ৫৮ জন ও ১৭টি হল সংসদে ৫৯৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। রাকসুতে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ এবং ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন।

ঘোষিত নয়টি প্যানেল হচ্ছে- ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ‘রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জ’, ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’, ‘অপরাজেয় ৭১, অপ্রতিরোধ্য ২৪’, ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’, ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’, ‘সচেতন শিক্ষার্থী পরিষদ’ ও ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’।

জানা গেছে, রাকসুতে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) ১৩ ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ জন। রাকসুর অন্যান্য পদের মধ্যে ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, সহকারী ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ৬, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ১০, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৬, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৮ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় এসেছে। এ ছাড়া মিডিয়া ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৬, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১২, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৬ এবং নির্বাহী সদস্যপদে ৫৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা: নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোট গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগপর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে। প্রচারণার সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। গত রোববার বিকেলে ব্যালট নম্বর বরাদ্দ এবং রাতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে বিকেল থেকে বৃষ্টি থাকায় প্রচারণায় নামতে পারেননি প্রার্থীরা। আচরণবিধিতে নির্বাচনী সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রার্থী ও ভোটার ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারণায় শুধু সাদা-কালো পোস্টার ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ভবনের দেয়ালে নির্বাচনসংক্রান্ত লেখা ও পোস্টার লাগানো যাবে না। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

হল সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৪২ প্রার্থী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ৪২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ জন নারী প্রার্থী। এর মধ্যে সম্পাদকীয় পদে ২৯ জন ও নির্বাহী সদস্য পদে ১৩ জন। এদিকে ছাত্রীদের চারটি হলে চারটি পদে কোনো প্রার্থী দাঁড়াননি। এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া হলে সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক এবং রোকেয়া, রহমতুন্নেছা ও জুলাই-৩৬ হলে একটি করে নির্বাহী সদস্য পদ ফাঁকা রয়েছে। রাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

কোন হলে কতজন নির্বাচিত: চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া হলে। এ হলে সম্পাদকীয় ছয়টি পদ ও নির্বাহী চারটি পদে একজন প্রার্থী থাকায় সবাই জয়ী হচ্ছেন। এরপর রোকেয়া হলে ৯ জন, রহমতুন্নেছা হলে ৯ জন, জুলাই-৩৬ হলে ৭ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ৩ জন, বিজয়-২৪ হলে ৩ জন এবং মন্নুজান হলে ১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। বিজয়ীদের নাম: বেগম খালেদা জিয়া হলে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক আশরাফি বুলবুল, সহকারী কমনরুম সম্পাদক তাসমী তামান্না, ক্রীড়া সম্পাদক রোকাইয়া খাতুন, সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক নাফসে মুতমাইন্না, সংস্কৃতি সম্পাদক তাহেরা আক্তার, সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক সায়মা জাকিয়া। নির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন উম্মে হাবিবা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদাউস, সুমাইয়া, উম্মে হানী। রোকেয়া হলে সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক তাহমিনা উর্মি, কমনরুম সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা, সহকারী কমনরুম সম্পাদক আফসানা আক্তার, ক্রীড়া সম্পাদক নাজমুন নাহার, সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক নাশরিফা তুন নাঈম ও সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক রুদবা জাহান। নির্বাহী সদস্য হিসেবে রিফা সানজিদা, জে এন হুমায়রা ও আসনারা খাতুন। রহমতুন্নেছা হলে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক রেবেকা সুলতানা, সহকারী বিতর্ক সম্পাদক সাদিয়া আফরিন, কমনরুম সম্পাদক শামসি আরা, সহকারী কমনরুম সম্পাদক খাদিজা খাতুন, ক্রীড়া সম্পাদক লাবণী খাতুন, সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক তাবাসসুম কবীর। নির্বাহী সদস্য আয়েশা তাসনীম, জান্নাতুল ফেরদৌস ও জেসমিন খাতুন। জুলাই-৩৬ হলে সহকারী বিতর্ক সম্পাদক ফাতেমাতুজ সানিহা, সহকারী কমনরুম সম্পাদক জোবাইদা খাতুন, সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক উম্মে জাহান, সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক খাদিজা খাতুন। নির্বাহী সদস্য হাবিবা খাতুন, সাকিয়া জান্নাত ও জান্নাতুল আফরিন।

তাপসী রাবেয়া হলে সহকারী কমনরুম সম্পাদক শাহনাজ আরফিন, সংস্কৃতি সম্পাদক মহুয়া মল্লিক জেবা, সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক মুসলিমা খাতুন। বিজয়-২৪ হলে বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক নাজমুল আকতার, সহকারী কমনরুম সম্পাদক মুহাম্মদ রিদোয়ানুল ইসলাম, সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক শাহেদ হোসেন। মন্নুজান হলে সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক ফাইরোজ মোকারমা। এ বিষয়ে রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের একটি হলে তিনজন এবং ছাত্রীদের কয়েকটি হলের বিভিন্ন পদে ৩৯ জন নারী প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা থেকে অ্যাওয়ার্ড পেল দ্বীপ মাহবুব: দেশপ্রেম বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ‘ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ পেলেন আসন্ন রাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী দ্বীপ মাহবুব। গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০২৪ জুলাই বিপ্লব আন্দোলনে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের গুলিতে একটি চোখ হারান। দীর্ঘ ৫ মাস গুলিবিদ্ধ মস্তিষ্কে আঘাত নিয়ে এখনো চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। দ্বীপ মাহবুব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইবিএ এর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্ধ ইউনিয়নের কামারদুলিয়া নিবাসী মৃত আব্দুল হাই শেখের কনিষ্ঠ সন্তান। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রামের তাঁতীবন্ধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাঁতিবন্ধ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হোন রাজশাহী শাহ মাখদুম কলেজের মানবিক শাখায়। সেখান থেকে জিপিএ ৫ নিয়ে সফলতার সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। ইয়ুথ ভলানটিয়ার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বীপ মাহবুব বলেন, সকল শুকরিয়া মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি, যিনি আমাকে এতটা সম্মানিত করেছেন।

চব্বিশের জুলাইতে দেশের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ, অন্য কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। কোটার যৌক্তিক সংস্কার ও আমার ভাইয়েদের খুনের বিচারের দাবিতে রাজপথে নামা এবং সর্বশেষ দেশের জন্য নিজের একটা অঙ্গ (চোখ) উৎসর্গ করার সৌভাগ্য হয়। আজকে আমি যে সম্মান পেয়েছি সেটা জুলাইতে একটু বলিদানের প্রতিফলন হিসেবে দেখছি। ধন্যবাদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে আমার এই ক্ষুদ্র ত্যাগকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন, জুলাই পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আমাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, সমস্যা নিয়েই আবারো পড়াশোনা এবং পূর্বের ন্যায় সকল কাজে অংশগ্রহণ করি। তারই অংশ হিসেবে বর্তমানে রাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে লড়ছি। এছাড়া ইউনিস্যাব রাজশাহী ডিভিশনের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও কাজ করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত