ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের প্রতি কক্ষে ভাঙচুর

সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের প্রতি কক্ষে ভাঙচুর

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরের সহিংস পরিস্থিতি বেলা তিনটার পর কমে যায়। আড়াইটা পর্যন্ত ভাঙ্গা গোলচত্বর ও আশপাশে হাজারো মানুষ অবস্থান করছিলেন। তিনটার পর থেকে ধীরে ধীরে লোকজন ঘরে ফিরে যান। বিকেল নাগাদ গোলচত্বর ফাঁকা হয়ে যায়।

গতকাল সেমাবার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া হামিরদী বাসস্ট্যান্ড ও নওপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ ও সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডে অবরোধকারীরা অবস্থান করেন। এতে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। সোমবার বেলা পৌনে একটা থেকে সোয়া একটার মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা চালানো হয়। অফিসার্স ক্লাবসংলগ্ন গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়; তাঁদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গা থানার সামনে অন্তত চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরোনো থানার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ। মিলনায়তনের চেয়ার-টেবিল, শোকেস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে জানালার কাচ। উপজেলা পরিষদের পুরোনো ভবনের নিচতলার সব কার্যালয় ও নতুন তিনতলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষেও হামলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে একাধিক মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসার্স ক্লাবসংলগ্ন গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাবের এসি, লুট হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

সোমবার ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল ভাঙ্গা থানায় অবস্থান করেন। ঘটনা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। থানার ওসি, সার্কেল এএসপির সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বিকেলে বলেন, ‘জনগণ ঘরে ফিরে গেছে। মহাসড়ক বন্ধ ছিলো এখন ফাকা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রহরী মো. সামসু বলেন, তিনি হামলার সময় দোতলায় ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় শত শত লোক উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। তার আগে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যেসব অফিস খোলা ছিল, প্রতিটিতে ভাঙচুর চালায়। তবে যেসব কক্ষ বন্ধ ছিল সেগুলো ভাঙার চেষ্টা করেনি। কাউকে মারধরও করেনি। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস সহকারী মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘পৌনে একটার দিকে এই হামলা শুরু হয়। উপজেলা পরিষদের পূর্ব দিক থেকে চিৎকার করতে করতে সহস্রাধিক লোক ভেতরে প্রবেশ করে। পরিস্থিতি দেখে আমরা দ্রুত আত্মরক্ষার জন্য অফিস থেকে বের হয়ে যাই। বেলা পৌনে দুইটার দিকে ফিরে এসে দেখি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা থেকে ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় আন্দোলনকারীরা সড়কের পাশে অবস্থান নেন। তবে বেলা ১১টার দিকে তাঁরা ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আলগী ইউনিয়নের সোয়াদী এলাকা থেকে শুরু হওয়া ‘লং মার্চ টু ভাঙ্গা’ দুপুর ১২টার মধ্যে গোলচত্বর এলাকায় এসে পৌঁছায়। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠি দেখা গেছে। তখন ভাঙ্গা গোলচত্বরসহ আশপাশের এলাকায় হাজারো মানুষ নিয়ন্ত্রণ নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অল্পসংখ্যক পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের ধাওয়া করে বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ সদস্যরা ভাঙ্গা মডেল মসজিদে আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পর থানা ও উপজেলা পরিষদে হামলা হয়।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। এর পর থেকে ভাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত রোববার থেকে তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন স্থানীয় জনতা।

এদিকে বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্ব ঘোষিত মঙ্গলবার ও বুধবারের অর্ধদিবস হরতাল প্রত্যাহার করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। এর পরিবর্তে জেলা ও জেলার সব উপজেলায় অর্ধদিবস নির্বাচন অফিসের সামনে ওই দুইদিন অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদেরকে কেনাকাটা ও আনন্দ উৎসবে যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় তার জন্য এরল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির কো কনভেনার ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম এ সালাম এ ঘোষণা দেন।

এ সময় জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর রহমান আলমসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। । জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, আমরা সর্বদা জনগণের পাশে আছি। ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখে সাধারণ মানুষের চলাচলে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তাই হরতাল প্রত্যাহার করেছি। তবে আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আগামী দুই দিন অর্ধদিবস নির্বাচন অফিস ঘেরাও অব্যাহত থাকবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রোববার অবস্থান কর্মসূচি, সোমবার সকাল- সন্ধ্যা, মঙ্গল ও বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছিল সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি।

গেল ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটবাসী। এরপরেও ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসনইজারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসন বিন্যাস গণ মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।

চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ ( বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা)ও বাগেরহাট-৩(কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)। দীর্ঘদিন থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। তখনকার সীমানা: বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২(বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত