ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১৫ বছরের দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়

১৫ বছরের দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মাধ্যমে নিশ্চিত হোক, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দ্বিতীয় দিনের মতো দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেন মাহমুদুর রহমান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪৬ তম সাক্ষী হিসেবে এই জবানবন্দি দেন মাহমুদুর রহমান।

মামলার অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মামলার অপর দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক আছেন। গতকাল জবানবন্দিতে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, তিনি গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের উত্থান, বিকাশ ও পতন দেখেছেন। জুলাই গণহত্যার পর যখন এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়, তখন তিনি মনে করেছেন, রাষ্ট্রের একজন বর্ষীয়ান নাগরিক হিসেবে তাঁর কর্তব্য ট্রাইব্যুনালকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। সেই সহযোগিতার অংশ হিসেবে তিনি ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করছেন। জবানবন্দিতে মাহমুদুর রহমান বলেন, তিনি চান, আসামিরা যেন সাজা পায়। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শহীদ পরিবার, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের শোক কিছুটা হলেও যেন লাঘব হয়। তা ছাড়া ফ্যাসিস্ট শাসনের বিষয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা গেলে ভবিষ্যতের সরকারগুলো সতর্ক হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেভাবে বলা হয়েছিল ‘নেভার অ্যাগেইন’ (আর কখনো নয়)। বাংলাদেশেও এই বিচারের মাধ্যমে নিশ্চিত হোক, গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।

মাহমুদুর রহমান বলেন, তাঁরা (শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধা) ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের কমান্ড রেসপন্সিবিলিটিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বিচার দেখতে চান। এই আসামিরা হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতা বন্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এই আসামিদের মধ্যে যাঁরা সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, যাঁরা এই হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতা বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি, তাঁরা সবাই কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির আওতাভুক্ত।

মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দি শেষ হওয়ার পর এই মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাঁকে (মাহমুদুর রহমান) জেরা করেন।

নির্বাচনের পরেও বিচারকাজ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ও রোডম্যাপ চান নাহিদ : নির্বাচনের পরেও জুলাই হত্যা মামলাসহ ১৫ বছরে সংঘটিত হত্যা, নির্যাতন, গুমের সব মামলার বিচারকাজ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ও রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব?্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গতকাল মঙ্গলবার হাজির হয়েছিলেন নাহিদ ইসলাম। তবে মামলার অপর সাক্ষীর জেরাতে সময় লাগতে পেরে জেনে ফিরে গেছেন তিনি। সাক্ষ্য না দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এ সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই মামলার রায় হলে রাজনৈতিকভাবে ন্যায়বিচার পাবো। তবে গত ১৫ বছরল সারাদেশে গণহত্যা ও নির্যাতন নিপীড়ন, গুমের যেসব মামলা রয়েছে সেগুলোর বিচার অব্যাহত রাখতে হবে। নির্বাচনের পরেও যেন বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হয় সেই প্রতিশ্রুতি ও রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে। রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যনালের বিচার কাজে সন্তুষ্ট। আশা করি, দ্রুত সময়ে ন্যায়বিচার পাবো।’

মামলার আসামিদের দেশে ফিরিয়া আনা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করতে হবে ফিরিয়ে আনতে। রায়ের পরে হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি প্রদান করা তখন যেকোনও সরকারের দায়িত্ব, আইনিভাবেই।

এর আগে গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন। একইদিন এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত