
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টেবিলে সমাধান দেখছে না দেশের ৭টি বড় দল। তাই দলগুলো পিআরসহ নির্দিষ্ঠ কয়েকটি দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছে। রাজপথের আন্দোলনে ব্যাপক সারা পাচ্ছে দলগুলো। ফলে দাবি বাস্তবায়নে সরকার অনেকটা নমনীয় হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বৈশ্লেষকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকারের নঙ্গে আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না বলেই আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মনে হয় কোনো চাপের মধ্যে পড়ে সরকার শুভংকরের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, যারা দেশে আবারও কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারাই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
জামায়াত নেতারা বলেন, ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্র কাঠামো সংশোধনের জন্য এতো আলোচনা হলেও একটি দল বলছে সবকিছু পরে হবে। সবকিছু যদি পরেই হবে, তাহলে এতো আলোচনা কেনো? এসময় পিআর ইস্যুতে ‘গণভোট’ দিতে সরকারের উদ্দেশে আহ্বান জানান জামায়াত নেতারা। তারা বলেন, নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দিতে হবে।
এদিকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে ‘গণভোট’ দেয়ার আহ্বান জানালেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। ঢাকায় সাত দলের পৃথক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলটি। এসময় ফয়জুল করিম বলেন, ‘বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ৯০ শতাংশ ভোট তাদের, যদি তাই হয় তাহলে তো তারা আসন পাবে ২৭০ এর ওপরে। তারা তো এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে, সমস্যা কোথায়?’
সংস্কার ও বিচার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। সরকারের উদ্দেশে ফয়জুল করিম বলেন, ‘সংস্কার ও বিচার না করে আপনি কীভাবে নির্বাচন দেন?’ সমাবেশের পর ওই এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
চৌঠা আগস্ট অধ্যাপক ইউনূসকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বললেন নাহিদ ইসলাম : নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য চারই আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির আহ্বায়ক ও জুলাই অভ্যুত্থানের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তেসরা আগস্ট যেহেতু সরকার পতনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একদফা, ফলে এই সরকারকে আমরা আর মেনে নিচ্ছি না। আমাদের একজন নতুন সরকার প্রধানের জন্য তখন থেকেই পরিকল্পনা হচ্ছিল।’
‘সেই প্রেক্ষাপটেই আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রাথমিকভাবে ভেবে নিয়েছিলাম, অন্য আরো অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করে। এজন্য আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করি,’ বলেন তিনি।
এর আগে সকাল সোয়া ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১। সংবাদ সম্মেলনে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে সমন্বয়কদের কীভাবে জোর করে আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল সেসব বিষয় নিয়েও কথা বলেন তিনি। এছাড়া সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বা পিআর সহ অভিন্ন কিছু দাবিতে সাত দলের পৃথক কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিজেদের কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু করে দলটি। জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতি চালু করা এবং বিগত সরকারের সময় গণহত্যা ও জেল-জুলুমের বিচার দৃশ্যমান করাসহ প্রায় অভিন্ন দাবিতে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলসহ সাতটি দল।
বিকেল সাড়ে চারটায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
আসরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। একই সময়ে, উত্তর গেটে মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও।
এছাড়া বিকেল চারটায় একই স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। আর বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি বা জাগপা। প্রায় অভিন্ন দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সাতটি দল। বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার পর আজ শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে দলগুলো।