ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আন্দোলনে সাত দল চ্যালেঞ্জে বিএনপি

আন্দোলনে সাত দল চ্যালেঞ্জে বিএনপি

সরকারের ঘোষিত সময় অনুযায়ী আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আর ৫ মাসেরও কম সময় বাকি আছে। এরইমধ্যে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন, আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, আওয়ামী লীগের বিচার এবং জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা- এসব দাবিতে একই দিনে সাতটি দল কর্মসূচি পালন করেছে। সেই দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফতে মজলিসের দুটি অংশ, নেজামে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা। দলগুলো যেসব দাবিতে সরকারকে চাপ দিতে রাজপথে নেমেছে সেগুলো নিয়ে বিরোধিতা হচ্ছে মূলত বিএনপির সঙ্গে। কারণ জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলোতে ভিন্নমত আছে বিএনপির। দলটি মনে করে- যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে না, সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে ‘জনগণের কাছে যেতে হবে’। আর সংস্কারের যেসববিষয় বাকি থাকবে সেগুলো পরবর্তী সংসদে উঠবে। এছাড়া বিএনপি পিআর পদ্ধতি বা এর জন্য গণভোট কোনোটাতেই রাজি নয়। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়েও কোনো পক্ষ নিতে চায় না দলটি। তারা মনে করে, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হবে কি-না, সেটা আইন-আদালতের বিষয়। কিন্তু এই বিষয়গুলো নিয়েই বিভিন্ন ইসলামি দল একই সুরে কথা বলেছে বিভিন্ন ফোরামে। শেষ পর্যন্ত রাজপথের কর্মসূচিও পালন করেছে। আর এই বিষয়গুলো ঘটছে, এমন এক সময়ে যখন সরকার ঘোষিত নির্বাচনের বাকি আছে পাঁচ মাসেরও কম। নির্বাচন হতে হলে নির্বাচন কমিশনকে তিন মাস পরই তফসিল ঘোষণার দিকে যেতে হবে। অনেকেই মনে করছেন, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে মূলত বিএনপির বিপরীতে একটা বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের দৃশ্যমান করতে চাইছে। অর্থাৎ আন্দোলনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক জোট গড়া, যার টার্গেট বিএনপি।

যদিও বিএনপিকে টার্গেট করে জোটের চেষ্টা হচ্ছে, এমন দাবি নাকচ করছে জামায়াত। দলটি বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কোনো জোট গঠন করেননি। দলগুলো ‘নিজেদের মতো করে’ কর্মসূচি পালন করছে। এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও কোনো জোট নয়। এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়। আমরা জনগণের পক্ষে আন্দোলন করছি। আমরা সংস্কারের আইনিভিত্তি চাই, এই সরকারের আমলে বাস্তবায়ন চাই, তার ভিত্তিতে নির্বাচন চাই। এই দাবিগুলোতেই আমরা এক হয়েছি। এছাড়া পিআরসহ আরও বিষয় আছে। সামনে আরও অনেক দল এখানে আসবে।’ জামায়াতসহ দলগুলো বলছে, সরকার একটি ‘বিশেষ দলের দিকে ঝুঁকে’ আছে। ফলে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সমাধান আসছে না। এর জন্যই আন্দোলনের দিকে যেতে হচ্ছে। ‘দীর্ঘদিন ধরে টেবিলে সমাধান না পেয়েই তো আমরা রাজপথে এসেছি,’ বলেন হামিদুর রহমান আযাদ।

জামায়াতসহ কয়েকটি দলের বিক্ষোভ মিছিলের প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটার (কর্মসূচির) কোনো প্রয়োজন ছিল না। আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আলোচনা চলমান অবস্থায় এ ধরনের কর্মসূচির অর্থ হচ্ছে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা। যা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও শুভ নয়।’ গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। রাজপথে কর্মসূচি দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে নাকি- প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের পতনের পর কোনো ইস্যুতে আমরা রাজপথে আসিনি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করতে চাইছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নও আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে বলে আশা করি। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বিএনপি পিআরের পক্ষে নয়।

বাংলাদেশে পিআরের প্রয়োজনীয়তা নেই। জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেক বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে। সেগুলো সামনে আনলেই হয়। একটি বিষয় পরিষ্কার, যেটাই করা হোক জনগণের সমর্থন বড় প্রয়োজন। জনগণের সমর্থনে নির্বাচনের মাধ্যমে যে পার্লামেন্ট আসে, সেই পার্লামেন্ট সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে, সংশোধনী আনতে পারে। সেখানেই সেটা সম্ভব। ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে বিএনপি নয়।

জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থাসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির জবাবে বিএনপি রাজপথেই দেওয়ার কথা বলেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দল তার গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে, তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে মাঠে যেতে পারে, রাজপথে যেতে পারে, জনগণের সামনে যেতে পারে। আমরা সেটার (দাবির) বিপক্ষে। আমাদের যে বক্তব্য আমরাও সেটা মাঠে দেব, জনগণের সামনে দেব, মাঠের জবাব আমরা মাঠেই দেবো, জনগণ যেটা গ্রহণ করবে সেটা দেখা যাবে।

পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির অবস্থান আবার পুনর্ব্যক্ত করে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে উচ্চ ও নিম্নকক্ষ সর্বত্র। কারণ আমরা বলেছি, যাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে পিআর পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সেই বিষয়টা উল্লেখ করে জনগণের কাছে যাক। জনগণের ম্যান্ডেট যদি তারা প্রাপ্ত হয় তাহলে তারা তাদের সেই রাজনৈতিক আদর্শ বা কৌশল তখন তারা প্রণয়ন করতে পারবে, আইন প্রণয়ন করতে পারবে।’

সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া সালাহউদ্দিন বলছেন, “নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য অথবা বাধাগ্রস্ত করার জন্য যে কোনো রাজনৈতিক কৌশলকে এ দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ জনগণ দীর্ঘ ১৬-১৭ বছরের অবিরাম সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। কীসের জন্য? ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য। সবশেষে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্যের মতে, এসব বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব হবে যখন একটা সুষ্ঠ নিরপেক্ষ অবাধ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ হবে, রাজনৈতিক সরকার হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের এই পথে যারাই বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে, কৌশলে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য, দলীয় উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কাজ করবে, সেটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

সালাহউদ্দিন বলেন, এই সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচির জবাব দেওয়ার জন্য আমরা রাজপথে আমাদের শক্তি প্রদর্শন করতে পারি, আরেক দল শক্তি প্রদর্শন করতে পারে, কিন্তু সেই বিষয়টা নির্ধারিত হবে কাথায়? জনগণের সার্বভৌম ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়েই তো। আমরা সেখানে যাই।

জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা নির্বাহী আদেশে, সেটা আমরা সমর্থন করি না। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি অনেক আগে যে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার যে বিষয়টি, সেটা নির্ধারিত হোকলেট দি কোর্ট ডিসাইড।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা তো সেই কোর্টে যাওয়ার জন্য আইনটা সংশোধন করেছি। সেই আইনটা আগে ছিল না। যদিও সংবিধানের বিধানে উল্লেখ ছিল। কিন্তু সেই বিধান অনুসারে সংশ্লিষ্ট আইনে পরিবর্তনটা আগে আনা হয়নি। পরবর্তীতে আনা হয়েছে। এখন যেকোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অথবা আরও যেগুলো অপরাধের কথা বলা আছে যুদ্ধাপরাধসহ, এগুলো সংগঠন হিসেবে যেকোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যেতে পারে। সেইভাবে যদি সে সমস্ত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে, সেটা যদি আদালতে উত্থাপিত হয় এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি সেটা নির্ধারিত হয়, সেটা নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য। তার মতে, এর বাইরে অন্য যেকোনো প্রক্রিয়া, নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে যদি রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ দাবি করা হয় তাহলে সেটা হবে একটা ভয়ঙ্কর চর্চা।

বিএনপির এ নেতা বলছেন, এখন যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা চাচ্ছেন, তাদের বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে তারা সেই অভিযোগটা আদালত উত্থাপন করতে পারেন। সালাহউদ্দিন বলেন, আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি যে ‘আমি-ডামি’ নির্বাচন হলো, তাতে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সম্ভবত অংশগ্রহণ করেছে। সংখ্যাটা এদিক-ওদিক হতে পারে।

তাহলে নিষিদ্ধ যদি চাইতেই হয় স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে, ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ২৮টা দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা দলকে নিষিদ্ধ চাইতে হবে। তাহলে নির্বাচনটা কাদেরকে নিয়ে হবে? তিনি বলেন, এই দেশে যারা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে চাচ্ছে, এখন এই দাবির মধ্য দিয়ে, তাইলে তারা যদি পরে বলে যে, আমরাও নির্বাচন করব না তাহলে কি এদেশে নির্বাচন হবে?

উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে তাদের এই দাবির পেছনে যে, নিজেদের অতিরিক্ত সুবিধা সৃষ্টির জন্য হয়তোবা তারা আরো অনেক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ কামনা করতে পারে।

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি বিএনপি প্রথম করেছিল দাবি করে দলটির এই নেতা বলেন, হ্যাঁ, আওয়ামী লীগের বিষয়টা এখানে সম্পূর্ণ আলাদা। তারা গণহত্যার জন্য দায়ী, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী, তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য দায়ী, সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে, সেই সরকারের যারা প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, এমপি এবং দোসররা ছিল তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে, আরও হবে, বিচার চলছে।

এদিকে, রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে রাজপথে আবার সংঘাতের সূচনা হতে পারে কি না, সে আশঙ্কাও করছেন অনেকে। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নামার উদ্যোগ এবারই প্রথম। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে। এরমধ্যেই আন্দোলন কী বার্তা দিচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। আলোচনার টেবিলে যখন সমাধান হচ্ছে না, তখন দরকষাকষির টেবিলে আন্দোলনের চাপ হয়তো বাড়তি সুবিধা দিতে পারে জামায়াত ও সমমনা দলগুলোকে। ফলে এই পরিস্থিতি বিএনপির জন্যও একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলেই অনেকে মনে করেন। আবার রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।

সূত্রমতে, বিএনপি যা চায় তার বিপরীতে যখন একটা আন্দোলন তৈরি হচ্ছে, তখন বিএনপি সেটার জবাব কীভাবে দেবে সেটা একটা প্রশ্ন। যদিও পাল্টা কোনো কর্মসূচির পক্ষপাতি নয় বিএনপি। অর্থাৎ মাঠের কর্মসূচির বদলে বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যেই দলের প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ থাকবে এমনটাই জানা যাচ্ছে। বিএনপি মাঠে পাল্টা কর্মসূচি দিলে, সেটা পরিস্থিতিকে সংঘাতমুখর কিংবা রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে মুখোমুখি করে দিতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে নির্বাচনও অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতে পারে এমন মূল্যায়ন আছে বিএনপিতে।

এবিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তার দল এখন জোর দিচ্ছে নির্বাচনি প্রস্তুতিতে। আমাদের এখন একটাই কর্মসূচি, আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মনোনয়ন, প্রার্থী ঠিক করাসহ সকল কাজ চলছে। এর বাইরে আমাদের আর কোনো কর্মসূচি থাকার কারণ নেই। আমরা তো রাস্তা অবরোধ করতে পারবো না। আমি তো মবক্রেসি করতে পারব না।

এদিকে, জামায়াতসহ সাতটি দল রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে একটা ‘শোডাউনেরও’ চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত যুগপৎ মডেলে কোনো কর্মসূচিতে যেতে আগ্রহ দেখায়নি এনসিপি।

‘এনসিপির জুলাই সনদের আইনিভিত্তি ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের যে দাবি, তা নিয়ে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পূর্ণ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয় এনসিপির কোনো অবস্থান নেই। বরং এনসিপি শুধু উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে একমত। এছাড়া সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের দাবির সাথে এনসিপির সমর্থন থাকবে,’ বলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।

তিনি জানান, তার দল কোনো জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে গণঅধিকার পরিষদ আবার স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য কিংবা মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয় এমন কোনো কার্যক্রমে তারা থাকবে না। কোনো জোটের বিষয়েও কোনো দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি যুগপৎ আন্দোলনের নামে বিভক্ত হয়ে যাই, কোনো জোট তৈরি করি, সেক্ষেত্রে অন্য দলগুলোর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হতে পারে। আমাদের আসলে এক থাকা দরকার। এখানে যদি এখন আটটা দল-দশটা দল আলাদা হয়ে যাই, তাহলে অনৈক্য তৈরি হবে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত