
ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার নিরপেক্ষতা হারিয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, যারা রাস্তায় নেমেছিল জীবন দেওয়ার জন্য তাদেরকে আপনি (ড. ইউনূস) উপেক্ষা করে চলবেন! আপনি নিরপেক্ষ নন। আপনি কোনো একটা দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি জাগ্রত হয় কোনো জালেমকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে তিনি এই মন্তব্য করেন। দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ‘জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’ এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফয়জুল করীম বলেন, আন্দোলন করেছি আমরা, সংগ্রাম করেছি আমরা, রাস্তায় ছিলাম আমরা। জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা। আর আপনি (ড. ইউনূস) কাদের নিয়ে ঘোরাফেরা করেন? যারা স্পষ্ট বলেছে এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নয়, তাদের সঙ্গে? আপনি নিরপেক্ষ নন। আপনি কোনো একটা দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
প্রাইমারি স্কুলে গানের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সমাবেশে তিনি বলেন, আজকে প্রতিটা প্রাইমারি স্কুলে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, এটা তো আওয়ামী লীগের এজেন্ডা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ দেশের মুসলমান এবং ওলামায়ে-কেরামের আন্দোলনের কারণে এটা বাস্তবায়ন করতে পারে নাই। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা চলে গেছে; কিন্তু তার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য দোসররা এখনও ঘাপটি মেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে আছে।
ফয়জুল করীম বলেন, আপনাকে (ড. ইউনূস) সুখে থাকতে ভূতে কিলায় কেন? আপনি ভালো মানুষ, শিক্ষিত মানুষ, আমাদের দেশের গৌরব। আপনি ভারতের অ্যাজেন্ডা পালন করবেন কেন? এই গান ভারতের কৃষ্টি-কালচার, সংস্কৃতি। এটা বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি নয়। বরং এটা আমাদের জন্য হারাম। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই জাতীয়ভাবে হারাম চাপিয়ে দেবেন না। দেশের তৌহিদী জনগণ এটা সহ্য করবে না।
ইসলামি আন্দোলনের শীর্ষ এই নেতা বলেন, গান বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা নয় এবং এটি মুসলমানদের জন্য হারাম। তিনি এই প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানান এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি এরপরও গানের শিক্ষক নিয়োগের দুঃসাহস দেখানো হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে তার জবাব দেবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা জাতীয় শিক্ষা। যেহেতু ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে কোনো মুসলমান মুসলমানই হতে পারে না, কাজেই জাতীয় শিক্ষা হওয়া উচিত ধর্মীয় শিক্ষা। তাই প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। যদি নিয়োগ দিতে না চান, তাহলে আমরা সরকারকে বাধ্য করব। তিনি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, আজকে বায়তুল মোকাররমের যে সমস্ত মানুষ নামাজ পড়েছেন, যদি আমরা এই মুসল্লিরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করি, তাহলে সাহেব আপনি একদিনও টিকতে পারবেন না।
ফয়জুল করীম বলেন, বাংলাদেশ ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশ। তাই সরকারের উচিত মুসলমানদের আদর্শ ও নীতিকে সামনে রেখে আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অতীতে এদেশে যারাই শাসকরা ছিল, তারা সবসময় ইসলামকে ধ্বংস করার চিন্তাভাবনা করেছে। এ সময় সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।