ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড ১২ মৃত্যু

* ঢাকার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন উদ্যোগ নেই * ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন নাজুক হয়ে গেছে * এডিস নির্মূলে কৌশল জানা নেই সংস্থাগুলোর
ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড ১২ মৃত্যু

সারা দেশে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। গতকাল রোববার একদিনে ডেঙ্গুতে চলতি বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনই মারা গেছেন বরিশাল বিভাগে। এ নিয়ে এডিস মশাবাহিত এ রোগে আগ্রান্ত হয়ে চলতি বছর দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৯ জনে। আর এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪১ হাজার ৮৩১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪৪ জন পুরুষ এবং ২৯৬ জন নারী। একই সময়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮৩ জন রোগী।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন নাজুক হয়ে গেছে। এখন যে অবস্থা তাতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে, সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু মোকাবিলায় কোনো নতুন ধরনের উদ্যোগ দেখা গেল না। সেই গতানুগতিক ধারাতেই চলছে সবকিছু।

মুশতাক হোসেন আরও বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে জোরদার কোনো পদক্ষেপ নেই। সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারে কোনো জনপ্রতিনিধিরা নেই। আগে যখন ছিলেন, তখন যে খুব ভালো অবস্থা ছিল, তা বলা যাবে না। কিন্তু একটা ন্যূনতম জবাবদিহি ছিল। এখন যারা আছেন, তারা রুটিন কাজ করেন।

বিভাগভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন জন ও দুজন বরগুনায় মারা গেছে। বাকি সাতজনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির হাসপাতালগুলোতে তিনজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় দুজন এবং চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছে। সর্বশেষ মৃত্যুর তালিকায় শিশু থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ সর্বোচ্চ ছিল, তবে একদিনে এত বেশি মৃত্যুর নজির এ বছর প্রথম। এ মাসের ১১ তারিখ ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকালের আগে ওইদিন ছিল একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সভিত্তিক রোগী ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। দেশে ২০০০ সালে যখন নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়, তখন তা ছিল মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক রোগ। কিন্তু দিন দিন এটা ছড়িয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গত বছর থেকেই ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ছড়িয়েছে ব্যাপকহারে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৫৪ জন। আর ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৭৭ জন।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখানে বিশেষ করে মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ আছে। কিন্তু দেশের অন্যত্র এটা প্রায় অনুপস্থিত। ঢাকার বাইরে, বিশেষ করে পৌরসভাগুলোতে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় কোনো উদ্যোগই নেই। আবার ঢাকার বাইরে বেশির ভাগ জায়গায় ডেঙ্গুর চিকিৎসারও কোনো কাঠামো গড়ে ওঠেনি। চলতি বছর দেশে প্রায় ৫০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর অর্থ হলো, বেশির ভাগ রোগী একেবারের মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছেছে।

ঘন ঘন বৃষ্টি এবং বাতাসের আর্দ্রতার আধিক্য ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলছে। এবার লক্ষণীয় দিকটি হলো, রাজধানীর চেয়ে দেশের অন্যত্র ডেঙ্গু বিস্তারের পরিমাণ অনেক বেশি। সাধারণত একটি এডিস মশার ডিম পাড়তে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে বলে মনে করেন বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলছিলেন, মশাকে তার উৎসেই নির্মূল করতে হবে। কিন্তু সেই চেষ্টাই তো নেই। সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্য স্থানে মশা নির্মূলের দায়িত্বে থাকা লোকজন কিউলেক্স মশা মারার কাজে এত দিন নিয়োজিত ছিল। কিন্তু ডেঙ্গুর বাহক এডিসের নির্মূল কৌশল ভিন্ন রকম। তা তাদের জানা নেই।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০৫ জন এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত