
তরুণদের নিয়ে গড়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শাপলা প্রতীকের দাবি করেছে। তালিকায় শাপলা প্রতীক না থাকায় নিবন্ধন পেলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এই প্রতীক পাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। শাপলা ছাড়াই প্রতীক তালিকা চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সচিব বলেন, নিবন্ধন পাওয়ার পর দলটির কাছ থেকে নতুন প্রতীক চাইতে হবে। নির্ধারিত তালিকা থেকেই প্রতীক নিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে ইসি সচিব এ তথ্য জানান।
১১৫টি প্রতীক দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকা সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভেটিংসহ আচরণবিধি ও প্রতীক তালিকা অনুমোদন হয়েছে।
ইসি সচিব জানান, প্রতীকের নির্ধারিত তালিকায় শাপলা প্রতীক না থাকায় এনসিপিকে বিকল্প প্রতীকের প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের ১১৫টি প্রতীকের তালিকায় শাপলা প্রতীক নেই। নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক দলকে নির্ধারিত তালিকার ভেতর থেকেই প্রতীক নিতে হয়। তাই এনসিপি চাইলে অন্য কোনো প্রতীক বেছে নিতে হবে।’
এনসিপি এরইমধ্যে শাপলা, সাদা শাপলা ও লাল শাপলা প্রতীক চেয়েছে। সচিব বলেন, ‘এনসিপি প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু তালিকায় শাপলা প্রতীক না থাকায় আমরা তাদের জানিয়েছি বিকল্প প্রস্তাব পাঠাতে। নিষ্পত্তি হবে ইসি ও দলের সম্মতিতে।
তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান আছে। নিবন্ধন–সংক্রান্ত নথিপত্র এখন পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তবে প্রতীক সংক্রান্ত সমন্বয় কার্যক্রম এরইমধ্যে এক ধাপ এগিয়েছে।
এ ছাড়া তিনি জানান, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে সুশীল সমাজ, শিক্ষক, নারী নেত্রী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। পূজা ও ছুটির দিন বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে এসব আলোচনার সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে।
শিক্ষাবিদ-সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে শুরু হচ্ছে ইসির সংলাপ : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে ইসি।
সুশীল সমাজ ও শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে এ সংলাপ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবলায়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আমরা মূলত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছি। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা সংলাপ শুরু করব। ধারাবাহিকভাবে সংলাপের শিডিউল করব। পূজার ছুটি আছে এবং সাপ্তাহিক ছুটি আছে। সেগুলোকে বিবেচনা নিয়ে আমরা এটা করব। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ করব। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সঙ্গেও সংলাপ করব।
তিনি বলেন, কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা বেশ কয়েকটা কাজে এগিয়েছি। জনসম্পৃক্ততার বিষয়টা আছে, আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারস যারা আছেন যেমন সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ, নারী নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে আমাদের আলোচনাগুলো শুরু করব।
আখতার আহমেদ জানান, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ও ইসির কাছে থাকা প্রতীকের সংরক্ষিত তালিকাটি আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং শেষে আবার ইসির কাছে ফেরত এসেছে। এখন তা গেজেট আকারে জারি করবে ইসি।
তিনি আরও বলেন, ‘আরপিওর সংশোধনের প্রস্তাবটা এখন আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে অপেক্ষমান আছে। সেটাও আশা করি আমরা খুব অচিরেই পেয়ে যাব।’
নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী যে প্রস্তুতি এটা পর্যায়ক্রমিক চলবে এবং একটা ভালো নির্বাচনে পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা যোগাযোগে করব। কাজেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কার্যক্রমটা যেটা চলমান আছে তার সঙ্গে যে প্রতীকের একটা সমন্বয়ের ব্যাপার ছিল সেটা আমরা এক ধাপ এগিয়ে গেছি।
ইসি সচিব জানান, ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নথিটা এখনো পর্যন্ত পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে। যখনই এটা চূড়ান্ত হবে আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিব।’
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংলাপ শুরুর এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন আগে অংশীজনদের চিঠি দেওয়া হবে।
শুরুতে সুশীল সমাজ, নারী সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সংলাপ হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজ ও নারী সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম সম্পাদক ও সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এবং এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই সংলাপ শেষ করার কথা বলা হয়েছে।
এনসিপির মার্কা শাপলাই হতে হবে, অন্য কোন অপশন নাই: ইসি সিনিয়র সচিব মো. আখতার হামিদ জানিয়েছেন, তালিকায় না থাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ পাচ্ছে না। তার এই বক্তব্যের পর এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে সারজিস আলম জানান, ‘ইলেকশন কমিশন সচিব বলেছেন মার্কার তালিকায় শাপলা নেই তাই এনসিপি শাপলা প্রতীক পাচ্ছে না। তারমানে কোনো আইনগত বাধা নয় বরং তালিকায় না থাকার কারণে তারা এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে পারছে না।’
তিনি আরও লেখেন, ‘যেদিন এনসিপি প্রথম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে সেদিনই স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল এনসিপি শাপলা মার্কা চায়। তাহলে ওই তালিকায় শাপলা মার্কা যুক্ত করা কাদের কাজ ছিল? এতদিন কি তারা নির্বাচন কমিশনে বসে বসে নাটক দেখেছে? নাকি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে বসে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান, দল বা এজেন্সির কথামতো উঠবস করেছে? ‘সারজিস আলম বলেন, ‘সকল ধরনের ভন্ডামিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে। যেহেতু কোন আইনগত বাধা নেই তাই এনসিপির মার্কা শাপলাই হতে হবে। অন্য কোন অপশন নাই।’
ফেসবুকে পোষ্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘নাহলে কোন নির্বাচন কিভাবে হয় আর কে কিভাবে ক্ষমতায় গিয়ে মধু খাওয়ার স্বপ্ন দেখে সেটা আমরাও দেখে নিব।’
এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব জানান, প্রতীক সংক্রান্ত ভেটিং প্রক্রিয়া শেষে সংশোধিত তালিকা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে ওই তালিকায় শাপলা প্রতীক অন্তর্ভুক্ত নেই। এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক চেয়ে আবেদন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।