
ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছরের মাথায় প্রকাশ্যে রাজপথে নামছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। রাজনীতির মাঠে চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিষয়টি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে টানা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। প্রশাসন ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মনোবলে চিড় ধরতে পারে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের নেতাকর্মীদেরও কিছুটা হতোদ্যম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও কিছুদিন ধরে ঢাকার ভেতরে পাড়া-মহল্লায় বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল করতে দেখা গেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নিয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও, পান্থপথ, ফার্মগেটসহ কয়েকটি এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের উল্টো পাশের রাস্তা ধরে মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা মিছিল নিয়ে কারওয়ান বাজার মোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে। এর আগে আগারগাঁও, শ্যামলী, গুলিস্তান ও তেজগাঁও নাবিস্কো এলাকায় মিছিল করেন দলের নেতাকর্মীরা। এসব মিছিল থেকে ২৪৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীর ফার্মগেইট, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের পাশে পানি ভবনসহ তেজগাঁও এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের লোকজন ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন টিম এসব এলাকায় তৎপর রয়েছে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা করে। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের পাশে পানি ভবনের সামনে ককটেল উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী পথচারীরা জানান বলেন, গুলিস্তানের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ প্লাজার সামনে থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে আহাদ পুলিশ বক্সের দিকে যায়। এ সময় দলের পক্ষে তারা স্লোগান দেয়। খামারবাড়ি থেকে বের হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যান ফার্মগেটের দিকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় থাকতে পারছে না, বিষয়টি বোঝার পর দলটির শীর্ষপর্যায়ের বহু নেতা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, আবার যারা পালাতে পারেননি তারা আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এরমধ্যেই আওয়ামী লীগের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। মাঝেমধ্যে বের করছে ঝটিকা মিছিল। তবে, ঝটিকা মিছিল বের করার পরপরেই ভিডিও ফুটেজ কিংবা আশপাশে তদন্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময় অনলাইনে ‘১৯ দিনে ৬৮ মিছিল হাসিনার দলের, হিমশিম ইউনূস সরকার’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে ঢাকায় একের পর এক আওয়ামী লীগের মিছিলে ঘুম নষ্ট হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে- মিছিলের খবর পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের দায়ী করা হবে। এর মধ্যেই ‘কর্তব্যে গাফিলতির জন্য’ কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে ক্লোজ করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঢাকায় গত ১৯ দিনে ৬৮টি মিছিল হয়েছে। ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রথম মিছিলটি বের করা হয় বাড্ডা-রামপুরার প্রধান সড়কে। এরপরে, কয়েক দিনের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, ডেমরা ও উত্তরায় ঝটিকা মিছিল বের করা হয়। পরে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে মিছিল হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সব মিছিলে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৬৯ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কুমিল্লায়ও একটি বড় মিছিলের পরে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন প্রাক্তন নেতা বলেছেন, এই সব কর্মসূচিতে একদিকে যেমন দলের সমর্থকদের মনোবল বাড়ছে, তেমনই আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে ইউনূস প্রশাসন। আওয়ামী লীগের শক্তি যে বাড়ছে, তারও প্রমাণ মিলেছে দলটির সাম্প্রতিককালের একাধিক কার্যক্রমে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সব জেলায় মিছিলের পাশাপাশি ঘরোয়া বৈঠকও হচ্ছে।
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়েন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম ও তাসনিম জারাকে কটূক্তি করেন। নিউইয়র্কের আওয়ামী লীগের এমন কর্মকাণ্ডের ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
চট্টগ্রামে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের সড়কে মিছিল : চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী। নগরের খুলশী থানার সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল করা হয়। সড়কের পাশে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় অবস্থিত। ওই কার্যালয়ের পাশাপাশি দামপাড়া পুলিশ লাইনসেরও অবস্থান।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, নগরের এমএম আলী রোডের মুখে জড়ো হয়ে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ২০ থেকে ২৫ জন। তাদের হাতে একটি ব্যানার ছিল। সেখানে লেখা, ‘শেখ হাসিনা ফিরবেই, বিজয় আসবেই।’ ব্যানারের নিচে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নাম লেখা ছিল। মিছিলটি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পেরিয়ে দামপাড়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে একটি পুলিশের গাড়ি দেখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিয়ে মিছিল করছেন ২০ থেকে ২৫ জন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন বলেন, মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পরে দুপুরে সাংবাদিকেরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের সড়কে বুধবার ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। ওই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ ঢাকায় মিছিল হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের আইনের আওতায় আনতে। তারা যেন সহজে জামিন না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় মিছিলের সংখ্যা বাড়বে, সবাই মাঠে নামবে। তবে ছোটখাটো এসব (ছাত্র লীগের) মিছিল আর হবে না।’
এর আগেও গত শুক্রবার চট্টগ্রামে মিছিল, গ্রেপ্তার ১১ : গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেপারীপাড়া এক্সেস রোডে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে দিতে একটি মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা কয়েক সেকেন্ডের ঝটিকা মিছিল করে পালিয়ে যায়। পরে শুক্রবার রাত ও শনিবার নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. ইমরানুল হক রোমান (৪৩), মো. আনোয়ার হোসেন (৩৮), মো. মিজানুর রহমান রিয়াজ (৩২), আবু তৈয়ব রাসেল (৪২), শওকত আলী রনি (৪৮), আব্দুল্লাহ হোসেন রাব্বি (১৮), সাজ্জাদ (১৮), সাব্বির হোসন শাওন (৩০), হাছান মুরাদ চৌধুরী রিমন (২৯), মো. সাইদুল ইসলাম (২৮), হাজী মো. নুরুল হুদা (৫৭)। ওসি বাবুল আজাদ জানান, এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এর বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। একই দিনে রাজধানী তেজগাঁও থানাধীন কারওয়ানবাজার পেট্রোবাংলার অফিসের গেটের সামনে রাস্তায় ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪ নেতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের খিলগাঁও থানা ও তেজগাঁও থানা পুলিশ।
বরিশালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল, ধাওয়া দিয়ে চারজনকে ধরল জনতা : গত রোববার রাতে বরিশাল নগরীর ফিশারি রোড এলাকা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মশাল মিছিল থেকে চারজনকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটককৃতরা হলেন- বানারীপাড়ার বাইশারী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের শিয়ালকাঠি গ্রামের মো. সালামের ছেলে মোহাম্মদ শাহিন শেখ (৪০), একই উপজেলার চাখার ইউনিয়নের দরিকর হাওলাদার বাড়ির জাকির হোসেনের ছেলে সজীব হাওলাদার (৩৭), বরিশাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের চহঠা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাহাদাত হোসেন অপু তালুকদার ও একই ওয়ার্ডের দক্ষিণ চহঠা এলাকার কাঞ্চন আলীর ছেলে মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
কুমিল্লায় ঝটিকা মিছিল : গত শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় আইরিশ হোটেলের সামনে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ অভিযানে নামলে গত রোববার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৭ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। দলটিকে নগ্নভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সাপোর্ট দিয়েছে এবং দিচ্ছে। সেখানে চাইলেই রাতারাতি আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যাবে না। এছাড়া রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবে না, কারণ বিএনপি এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নেই। বিএনপি কোন ফাঁদে পা দেবে না।
জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকার কারণে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলছেন, আইনানুযায়ী সংগঠন নিষিদ্ধ হোক বা না হোক- সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকলেই গ্রেপ্তার করা যাবে। অর্থাৎ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দিন থেকে যদি ওই সংগঠনের ব্যানারে কেউ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তবে তাকে গ্রেপ্তার বা শাস্তির আওতায় আনা যাবে। সেজন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তৎপরতা চালালে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ আমরা চেয়েছিলাম আইনগতভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু সেটি করা হয়নি। ফলে বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যখন মিছিল-মিটিং করে তখনই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে, আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এভাবে মিছিল-মিটিং করার সুযোগ পেত না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে আছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে শত শত মানুষকে হত্যা এবং দমন-পীড়নের অভিযোগে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার চলছে। এ আদালতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও আইনি কাঠামো তৈরি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মকাণ্ডে আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচন কমিশন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে, ফলে আপাতত ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ দলটির নেই। এরপরও রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে মিছিল করছে দলটির নেতাকর্মীরা।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলের ব্যাপারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য জানতে দলটির ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকারের কাছে একাধিক ফোন দিলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।