ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশে কাজ করা খুবই কঠিন

বললেন সিইসি
বাংলাদেশে কাজ করা খুবই কঠিন

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কাজ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কাজ করা খুবই ডিফিকাল্ট। পার্টিকুলারলি যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে দেশটা যাচ্ছে, আপনি কাজ আদায় করে নেওয়া কিছু কিছু পক্ষের লোকের জন্য খুবই সুবিধা, আর বেশির ভাগ পক্ষের লোকের জন্য ডিফিকাল্ট। এই সিচুয়েশনে এখন দেশ দাঁড়ায় আছে।’

গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিইসি নাসির উদ্দিন। ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

কাজ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু এসব সামাল দিতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পূর্ণ আস্থা আছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের কোনো বেআইনি নির্দেশনা দেওয়া হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, কোনো বেআইনি নির্দেশনা তারা দেবেন না। কারও পক্ষে কাজ করার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতিকে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, এই বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমান কমিশন ঐতিহাসিকভাবে অনেকগুলো নতুন কাজ হাতে নিয়ে নির্বাচনি ব্যবস্থার একটা নতুন ভিত্তি দেওয়ার জন্য কাজ করছে।

জুলাই আন্দোলনের প্রধান কারণ ছিল পচা নির্বাচন : নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘জুলাই আন্দোলন যে কারণে হয়েছে তার এক নম্বর কারণ পচা নির্বাচন ও নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া।’ তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনে যদি কেউ অনিয়ম করে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। ইসি কোনো দায়িত্ব নেবে না।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সময়ের ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছি। যেসব কারণে জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে তার প্রধান কারণ দেশে ভালো নির্বাচন না থাকা। চোখ বন্ধ করে দেখেন জুলাই আন্দোলন কেন হলো? তার প্রধান কারণ পচা নির্বাচন বা নির্বাচনের নামে প্রহসন।’ মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা আর কখনও পচা নির্বাচন করব না। পক্ষাপাতমূলক দুষ্ট নির্বাচনের জন্য ইসি আপনাদের চাপ দেবে না ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলবে না। নির্বাচনে যদি কেউ অনিয়ম করে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। ইসি কোনো দায়িত্ব নেবে না।’

বর্তমান ইসি শক্ত মেরুদণ্ড নিয়ে কাজ করছে : বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) শক্ত মেরুদণ্ড নিয়ে কাজ করছে বলে একই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।

আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নিবিড়ভাবে খেয়াল করেন, দশ মাস ১০ দিনের এই কমিশন শক্ত-সমর্থ মেরুদণ্ড নিয়েই কাজ করছে। কাজেই এই কমিশনের মেরুদণ্ড যদি শক্ত না হয়, কোনো কমিশনের মেরুদণ্ড কেমন হবে আমি জানি না। কমিশন কারও প্রতি অনুরাগ, বিরাগের বশবর্তী হয়ে করে নাই, করবে না।’ মালয়েশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘অনেকেই বলছেন ৭০ শতাংশের মতো ভোট পড়তে পারে।’

এ সময় নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘জেন্ডারবান্ধব নির্বাচন করবো। নারীদের আমরা গুরুত্ব দেবো। কেননা, ওই এক দিনই কেবল নারীরা গুরুত্ব পায়। সমান অধিকার পায়।’

দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে : নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন, দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। এজন্য ভালো নির্বাচন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা ইসির ওপর আমানত। ইহকাল, পরকালে জবাবদিহিতা আছে। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, একবাক্যে সবাইকে শিকার করতে হবে, নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের অনেক অনীহা। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে অনেক অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন বিষয়ে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই এখন আর ভালো নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান খেলোয়াড় উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, এতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আসন্ন নির্বাচন চ্যালেঞ্জের : অন্ঠুানে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, অতীতের যে কোনো নির্বাচনের থেকে আসন্ন নির্বাচন চ্যালেঞ্জের। আমরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে চাই। আখতার আহমেদ বলেন, ‘ইসির চ্যালেঞ্জ দুটি। একটি হলো এআই-এর অপপ্রয়োগ, আরেকটি প্রবাসীদের ভোটাধিকার। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবো। ধাপে ধাপে কাজ করছি, ওভারনাইট কিছু হবে না। আমরা কাজ করে সব কিছু আদায় করতে চাই। ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই, এটির জন্য জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো কৃপণতা নেই। আমরা চেষ্টা করছি সব কাজ ভালোভাবে করতে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত