
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তথ্য পেতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেয় দুদক। চলতি বছরের জুনে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করার অপরাধে সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের নামে মামলা করে দুদক। যেখানে শেয়ারবাজার থেকে ২৫৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এবার সেই মামলার তদন্তের সঙ্গে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা। শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তোপের মুখে সাকিব : চব্বিশের ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী দোসর ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে হাসিনার সঙ্গে তোলা একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে এই ক্রিকেটার লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন আপা’। শেখ হাসিনাকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোপের মুখে পড়েন সাকিব। নেটিজেনরা তাকে ‘আওয়ামী দোসর’ ও ‘দালাল’ বলে অ্যাখ্যা দেন। কেউ কেউ বলছেন, গণহত্যাকারী হাসিনার জন্য এত দয়া কেন? মুরাদ হাসান নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, প্রকাশ্য গণহত্যাকারী ও তার অনুসারী হলো সাকিব আল হাসান। রানা নামে একজন সাকিবকে উদ্দেশে করে লিখেছেন, আপনার সব ঠিক আছে, মাগার দালালি ছাড়লেন না।
ফখরুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, এজন্যই ২০২৪ এর জুলাইয়ে যখন নির্বিচারে মানুষ হত্যা হচ্ছিল, তখন আপনি পরিবার নিয়ে আনন্দ ভ্রমণের ছবি দিয়েছিলেন। শেম অন ইউ সাকিব। সাকিবকে উদ্দেশ করে সানা উল্লাহ বলেন, কত বড় স্বৈরাচারের দোসর!
অহিদুজ্জামান অহিদ বলেন, এখনো ভালো হননি, ভাবলাম একটু অপরাধী মনোভাব থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালো হবেন। তৌহিদুল ইসলাম নামে আরেকজন লেখেছেন, দুই হাজার নিরীহ মানুষের খুনের অপরাধী একজন ইতিহাসের ঘৃণিত নারীর জন্মদিন পালন করা মানুষদের প্রতি ধিক্কার জানাই। ওই অহঙ্কারী মহিলার একটুও অনুশোচনা হয়নি। সিয়াম মাহমুদ লিখেছেন, কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, এত গণহত্যা দেখেও তোমার লেজটা সোজা হলো না ভাই, এখনো সেই আওয়ামী লীগই করো।
আসিফ-সাকিবের পালটাপালটি পোস্ট, ফেসবুকে তোলপাড় : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রিকেটার ও দ্বাদশ সংসদের সাবেক এমপি সাকিব আল হাসান। এর পরপরই যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে তৈরি হয় নতুন আলোচনা। গত রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোস্ট দেন সাকিব। ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন আপা’। সঙ্গে ২০১৫ সালে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে তোলা একটি ছবি সংযুক্ত করেন। অল্প কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে পোস্ট দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি লেখেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। কিন্তু, আমিই ঠিক ছিলাম। আলোচনা শেষ।’ আসিফের এই পোস্ট ঘিরে নেটিজেনদের মাঝে সাড়া পড়ে যায়। কমেন্ট বক্সে অনেকেই সাকিবের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আসিফের ‘একজনকে পুনর্বাসন না করা’ মন্তব্যের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেটি সাকিবও বুঝতে পেরেছেন বলে ধারণা পাওয়া যায়। কারণ কিছুক্ষণ পরই তিনি নিজের ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে সাকিব লেখেন, ‘যাক, শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেয়া হলো না, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারলাম না! ফিরব হয়তো কোনো দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ।’
শহিদ সৈকতের বোনের আক্ষেপ : সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় অভ্যুত্থানে শহিদদের স্বজন ও আহতরা ভীষণভাবে মর্মাহত হয়েছেন। এ ইস্যুতে ফেসবুকে আক্ষেপ প্রকাশ করে শহিদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্ত লিখেছেন, ‘আমার ভাই সৈকত ক্রিকেট খেলতে অনেক ভালোবাসত! ছোট থেকেই তার ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ক্রিকেটার হবে! কিন্তু সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবার কাছে আসলে এই চাওয়াগুলো বেশি বেশি, তাই আর আমার ভাইয়ের ক্রিকেটার হওয়া হলো না! এই ক্রিকেট খেলা নিয়ে কত যে মাইর-বকা খাইসে বাসায়! একবার রেজাল্ট খারাপ করছিল বলে ওর ক্রিকেট ব্যাট ও উঠায়ে রাখা হইছিল!’
ক্রিকেট মানেই শিশু-কিশোরদের কাছে ছিলেন সাকিব—এমনটাই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে, ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের কাছে, বাচ্চাদের কাছে, ক্রিকেট মানেই সাকিব! আমাদের সাকিব-আল-হাসান! আমার ভাই সাকিব বলতে অজ্ঞান ছিল! আমার বিশ্বাস, যতগুলো বাচ্চা মারা গিয়েছিল আন্দোলনে, সবারই তাই! যেই বাচ্চাগুলো এখন আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিয়েছে, তারাও তাই! সাকিব ফ্যান!’
সেবন্তী বলেন, ‘এই সাকিব, যেদিন শহীদ নাফিজ মারা গেল, রিকশায় তার মৃতদেহের কপালে বাংলাদেশের পতাকা বাঁধা ছিল—আমরা সবাই তার পোস্টের আশায় আশায় ছিলাম যে এবার তো সাকিবের পক্ষ থেকে একটা প্রতিবাদমূলক পোস্ট পাবই! কিন্তু না, সে আমোদণ্ডফুর্তিতে পোস্ট করল, আ ওয়েল স্পেন্ট ডে ইন টরন্টো! এই পুরো জেনারেশনের মন সেদিন এই সাকিব ভেঙে দিয়েছিল!’ নিজের শহীদ ভাইয়ের প্রতি ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করে সেবন্তী বলেন, ‘তবু সুশীলরা আস্তে আস্তে তাকে মাফ করে দিচ্ছিল, যে কিই-বা করার ছিল, তার ক্যারিয়ার নষ্ট করবে নাকি সে? ব্যক্তি সাকিব আর খেলোয়াড় সাকিব আলাদা ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু এই সাকিবই আবার যখন একটা গণহত্যাকারী খুনির জন্মদিনে তাকে আপা সম্বোধন করে শুভেচ্ছা জানায় আমাদের সবার বোঝা হয়ে যায় কার অবদান কতখানি, কে কতখানি দালাল। আমার ভাইরে সামনে পাইলে এখন থাপড়াইতাম, দেখাইতাম যে দেখ, এই দালালের ফ্যান ছিলি তুই! তোর, তোদের মৃত্যুতে এই দালালের বাচ্চাদের কিচ্ছু হয়নাই, তারাও সমানভাবে দায়ী!’