ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই সনদ

গণভোটের বিষয়ে একমত দলগুলো

* গণভোটে একমত হওয়াকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে ঐকমত্য কমিশন * ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে * সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের পক্ষে বিএনপি * জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট চায় জামায়াত * বর্তমান সরকারের সময়েই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় এনসিপি * জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য না হলে আরেকটি অভ্যুত্থান অনিবার্য : এবি পার্টি
গণভোটের বিষয়ে একমত দলগুলো

জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং গণভোট অনুষ্ঠানের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের আলোচনার শেষে এ কথা বলেন আলী রীয়াজ।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘তাদের সম্মতির জন্য একটি গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। আমরা এটিকে বাস্তবায়নপ্রক্রিয়ার প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, এর আগে ১১, ১৪ ও ১৭ সেপ্টেম্বর তিনটি বৈঠকের পর দলগুলোর পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার জন্য কিছু সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় শেষে আজকের বৈঠকে এসে গণভোট ও সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন অবস্থান তৈরি হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত নতুন আইনসভার কাঠামো সম্পর্কেও কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। আলী রীয়াজ বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে যে আইনসভা গঠিত হবে, সেটিকে এমন বৈশিষ্ট্য দিতে হবে, যাতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংশোধনগুলো সহজে সম্পন্ন করা যায়। এ বিষয়েও কার্যত রাজনৈতিক দলগুলো একমত।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি জানান, আগে দলগুলোর একাংশ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার কথা বললেও বর্তমানে অধিকাংশ দলই মনে করছে, এর আর প্রয়োজন না–ও হতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ‘সহনশীলতা’ ও ‘অবস্থান পরিবর্তনের সাহসিকতা’কে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘তারা দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে জাতীয় ঐক্য তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটা বড় ধরনের অগ্রগতি।’

অগ্রগতির দিকটি সকালেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টা দ্রুততার সঙ্গে সুপারিশ চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

১৫ অক্টোবরের মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে দেওয়ার বিষয়ে কমিশন আশাবাদী বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এরই মধ্যে আলোচনায় যুক্ত ৩০টি দলের তিন-চতুর্থাংশ দলের পক্ষ থেকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রতিনিধিদের নামও পাঠানো হয়েছে।

আগামী ৮ অক্টোবর বিকেলে আবারও রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে নিয়ে বৈঠক হবে বলে জানান আলী রীয়াজ। পাশাপাশি আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো স্পষ্ট করার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিএনপির অবস্থান : সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটে কোনো বাধা নেই। সনদে কী থাকবে তা জনগণের কাছে উন্মুক্ত থাকবে। এই জন রায় হবে চূড়ান্ত। আগামী সংসদ গণভোটের রায় মানতে বাধ্য থাকবে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ফাইনাল স্টেজে আমরা আছি। মোটামুটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, একমত হয়েছি। এ সময় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি। নোট অব ডিসেন্ট থাকা বিষয় দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহারে থাকবে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ১০৬ অনুচ্ছেদে আওতায় বিচার বিভাগের পরামর্শ নেয়ার দাবি থেকে সরে এসেছে বিএনপি। আমরা এখন জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ নামে অধ্যাদেশ জারি এবং তার পরে গণভোটের পক্ষে বিএনপি।

জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট চায় জামায়াত: জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে ও আরও পাকাপোক্ত করতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, জুলাই সনদ সাংবিধানিকভাবে পাকাপোক্ত করতে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। জাতীয় সংসদের আগে এ গণভোট আয়োজন করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। এজন্য নভেম্বর ডিসেম্বরের দিকেই গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে বলে জানায় জামায়াত।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গণভোট হতে পারে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। গণভোট কবে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত না। আমরা মনে করি, এটি যাতে জাতীয় নির্বাচনকে কোনো ধরনের সমস্যায় না ফেলে, নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরেই এটা করা যায়। তফসিলের আগেও করতে পারেন। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো ধরনের বাধা নেই। জনগণকে একটা জটিল অবস্থায় না ফেলে বা মহাপরীক্ষায় না ফেলে সহজভাবে এগিয়ে গেলে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রচনার জন্য যদি গণভোটে যায়, তাহলে এটা হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। এটা কখনও চ্যালেঞ্জ করতে গেল তা টিকবে না। পার্লামেন্টও এটাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো দূরত্ব নেই জানিয়ে এ জামায়াত নেতা বলেন, গণভোটের রেজাল্ট যদি আমাদের বিপক্ষেও যায়, আমরা এখানে ছাড় দেব। হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আমরা সবসময় সোচ্চার ছিলাম। সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের পক্ষে সবাই মত দিয়েছেন।

বর্তমান সরকারের সময়েই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় এনসিপি : রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্নে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, এ সরকারের সময়েই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কারণ পরবর্তী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তা বাদ দিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী এ সরকারকেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটের পাশাপাশি গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালট থাকবে। যেখানে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জনগণ মতামত দেবে। এ বিষয়ে বেশিরভাগ দল একমত হয়েছে।’ তুষার বলেন, ‘ভাষাগত ভিন্নতা বাদ দিলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে দলগুলো মোটামুটি একমত। যেখানে সনদ বাস্তবায়নে জনগণ হ্যাঁ বা না ভোট দেবে। নোট অব ডিসেন্টে যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে, সেগুলো কেউ একমত বলে ধরে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের বিষয়টিও অনুসরণ করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, সব রাজনৈতিক দল একমত হলে জনগণ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পক্ষে রায় দেবে।’

জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য না হলে আরেকটি অভ্যুত্থান অনিবার্য- এবি পার্টি : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চতুর্থ দিনের আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের কাছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ‘সনদ নিয়ে আমরা যদি ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমঝোতা বা সমাধানে না আসি, তাহলে আরেকটি অভ্যুত্থান অনিবার্য। তখন কেউ পালানোর পথ পাবে না।’ মঞ্জু মনে করেন, ‘অহেতুক’ সাংবিধানিক বিতর্ক তুলে রাজনৈতিক সংকটকে দীর্ঘায়িত করা হলে পরিস্থিতি আবারও ‘অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে’। তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, জুলাই সনদের ব্যাপারে যেহেতু আমরা একমত হয়ে গেছি, এখন এটার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে অহেতুক সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে এবং মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে একটা সংবিধান আদেশ দিতে পারেন। কারণ, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা দুইটা ক্ষমতা পেয়েছি। একটা হচ্ছে সংশোধনের ক্ষমতা; আরেকটা হচ্ছে রাষ্ট্র শাসনের ক্ষমতা। এই দুই ক্ষমতা পাওয়ার পর আবার নতুন করে কেন এখতিয়ার লাগছে?’

সাংবিধানিক বিতর্ক তুলে ‘রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা অনুচিত’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছিলেন। সেটি আমরা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ফলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সমাধান এসেছে।’ এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে এবি পার্টির নেতা বলেন, ‘যদি আপনারা আবার সাংবিধানিক বিতর্ক তুলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে বিলম্বিত করেন, তাহলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়বে। তখন পাঁচণ্ডসাতটা হেলিকপ্টার লাগবে। কারণ, নতুন অভ্যুত্থানে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও ‘গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই এই সরকারের জন্ম। এখন যদি কেউ সাংবিধানিক বিতর্ক তোলে, তবে সেই বিতর্কই নতুন অভ্যুত্থানের জন্ম দেবে। তখন আমরা সবাই সেই আহ্বানের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হব। আর যারা হবেন না, তাদের হয়তো হেলিকপ্টারের টিকিট কাটতে হবে।’

তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রশ্ন নির্বাচন হবে কি না। তাই এখন এই অনৈক্য দূর করে, সাংবিধানিক বিতর্ক সরিয়ে আমাদের সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। বিএনপিকেও অনুরোধ করেছি, তারা যেন কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রত্যাহার করে নেয়। এবি পার্টির পক্ষ থেকে তিন ধাপে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেন মঞ্জু। তার মধ্যে রয়েছে- প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ‘সংবিধান আদেশ’ আকারে জুলাই সনদ জারি করবেন; এরপর জনগণের মতামত নিতে গণভোট হবে এবং এর আগে বা সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে মতামত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারি, তবে সেটি জনগণের সম্মতির ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। জনগণের সম্মতি যাচাই করতে গণভোটের বিকল্প নেই। গণভোটের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। জামায়াত বলছে, ‘সংবিধান আদেশ’ দিয়েই বাস্তবায়ন সম্ভব। আমরা বলেছি, দুই পক্ষের অবস্থানই এক জায়গায় মিলছে। কারণ, গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিশ্চিত হলে আর কেউ বলতে পারবে না, যে এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়।’

সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা শিগগিরই : শিগগির জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জুলাই সনদের বিষয়বস্তু এবং এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাবসহ ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান সম্পর্কে সভাকে অবহিত করা হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি কমিশনের সদস্যদের ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানান। কমিশনের কাজের চূড়ান্ত অগ্রগতি সম্পর্কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে জানানোর নির্দেশনা দেন তিনি। কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্য কমিশন সব রাজনৈতিক দল থেকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা পেয়েছে। এ ছাড়া গণমাধ্যমগুলো ঐকমত্য কমিশনকে অকল্পনীয় সমর্থন দিয়েছে।

জুলাই সনদে দলগুলো একমত না হলে আবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবে কমিশন : জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারকে একাধিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি রাজনৈতিক দলগুলো উদ্দেশ্য করে বলেন, যদি ৩০টি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় আসে, তাহলে আমরা আর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবোই না। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসার তাহলে সেটা আমরা বসবো। রোববার দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, এই ছয়টি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি এটাকে একটি জায়গায় আনা যায়। উপস্থিত ৩০টি রাজনৈতিক দল যদি একটি প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সানন্দে সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারবো। তিনি বলেন, আপনাদের মধ্যে যদি একমত হওয়ার জায়গা তৈরি হয় তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে। দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াসহ বিশেষত সনদকে সকলের গ্রহণযোগ্য করে সকলের স্বাক্ষরিত একটি রাজনৈতিক দলিলে পরিণত করা যায় কি না, সে বিষয়ে আমাদের তাগিদ দিয়েছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, দলের চেয়ে সবচেয়ে বড় হচ্ছে নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্ন। নাগরিকদের অবদান, আপনাদের দলের কর্মীদের অবদান, যারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা আমাদের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, যারা বেঁচে আছেন, আহত অবস্থায়, তারা আমাদের কাছে প্রত্যাশা করছেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে সেই প্রত্যাশার জায়গাটায় যেন যেতে পারি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত