
ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। গতকাল শুক্রবার টার্কিশ এয়ারলাইন্সের (টিকে ৬৯২১) একটি ফ্লাইটে শহিদুল আলম তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছেন। তিনি মুক্তি পাওয়ায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, তুরস্কের সূত্র অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেলে প্রখ্যাত বাংলাদেশি আলোকচিত্রি ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলমসহ অন্য যাত্রীদের নিয়ে ইসরায়েল থেকে একটি ফ্লাইট তুরস্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ফ্লাইটটি দুপুরে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শহিদুল আলমের মুক্তি নিশ্চিত করা এবং ইসরায়েল থেকে তার প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য প্রধান উপদেষ্টা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানান। গাজায় ইসরায়েলি নৌ অবরোধ ভাঙতে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন নৌবহরে যুক্ত ছিলেন শহিদুল আলম। থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজার আটটি নৌযানও এ যাত্রায় অংশ নিয়েছিল। মোট ৯টি নৌযানের এ বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। গত বুধবার এই নৌবহরে আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা। আটকের পর থেকে শহিদুল আলমকে মুক্ত করতে তৎপর হয় বাংলাদেশ।
শুক্রবার সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, ইসরায়েলিদের হাতে শহিদুল আলমের অবৈধ আটকের ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়। জর্ডান, মিশর ও তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসকে সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে শহিদুল আলমের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অবশেষে আটকের দুই দিনের মাথায় মুক্ত হয় জনপ্রিয় এই আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী।
শহিদুল আলম বাংলাদেশের অবিচল মনোবলের এক উজ্জ্বল প্রতীক : এর আগে গত ৫ অক্টোবর এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিশ্ববিখ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম বাংলাদেশের অবিচল মনোবলের এক উজ্জ্বল প্রতীক।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০১৮ সালে হাসিনা সরকারের সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য ১০৭ দিন কারাবাসের যে সাহস, দৃঢ়তা ও অবিচল মানসিকতা শহিদুল আলম দেখিয়েছিলেন, সেই একই চেতনা ও সাহস নিয়ে তিনি গাজার অভিমুখে যাত্রা করেন। তিনি আজ বাংলাদেশের অবিচল মনোবলের এক উজ্জ্বল প্রতীক। গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া নিজের বক্তব্য উদ্ধৃত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্যের দুর্ভোগ ও পীড়নের প্রতি ঔদাসীন্য বহু দশকের পরিশ্রমে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, তা ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘এর সবচেয়ে মর্মান্তিক চিত্র আমরা দেখছি গাজায়। শিশুরা না খেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। হাসপাতাল, স্কুলসহ একটি গোটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে।’প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা শহিদুল আলমের পাশে আছি, গাজার পাশে আছি এখন এবং চিরকাল।’
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন নৌযাত্রা শুরু করেছিল গাজা অভিমুখে। সেই নৌবহরে অংশ গ্রহণ করেন তিনি। আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ গাজা অভিমুখী নৌবহর থেকে আটক অধিকারকর্মীদের একটি অংশকে ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগারে নেওয়া হয়। জাহাজ দখল নেওয়ার পর থেকে তারা ইসরায়েলের দখলদার বাহিনীর দ্বারা নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হন। কেৎজিয়েত কারাগার ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আটককেন্দ্র। এটা নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত। যেখানে আটক ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়।