
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে ১৭ অক্টোবর শুক্রবার। ওইদিন বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই অনুষ্ঠান হবে। এজন্য আরও তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, বিশেষ করে গণভোটের সময়সূচি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সনদে সইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সনদে কারা সই করবেন, সেটিও দলগুলো ঠিক করে রেখেছে। তবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর চূড়ান্ত কপি দেখে তারপরই সইয়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
জুলাই সনদে বিএনপির যে দুই প্রতিনিধি স্বাক্ষর করবেন : বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, দলটি জুলাই সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। দলের পক্ষে দুজন নেতা এতে স্বাক্ষর করবেন। তারা হলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। আর সার্বিকভাবে গত ১৭ বছর রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির সাংগঠনিক বিষয়গুলো তদারকি করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল। দলের স্থায়ী কমিটি তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে আরও আগেই নাম পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশনে। বিএনপির নেতাদের মতে, জুলাই সনদ সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কারের নতুন ভিত্তি তৈরি করবে। গণভোটের সময় নিয়ে তারা বাস্তবসম্মত পন্থায় ঐকমত্য চান। দলের নেতারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট হলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি- জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট-এর চেয়ে সহজ, ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর কিছু হতে পারে না। এর সঙ্গে প্রায় সবাই একমত।’
জামায়াতের যে দুই নেতা স্বাক্ষর করবেন জুলাই সনদে : জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি, বিশেষ করে গণভোটের সময় নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সনদে স্বাক্ষরের জন্য বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দল দু’জন করে প্রতিনিধির নাম ঐক্যমত্য কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও সনদে স্বাক্ষরের জন্য দুজন শীর্ষ নেতার নাম ঠিক করা হয়েছে। তারা হলেন- দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় জামায়াতের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন এতোদিন। আর দলের সেক্রেটারি তথা অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে সনদের সই করবেন পরওয়ার। জামায়াত বলছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে তাদের দাবিগুলো উপেক্ষিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জামায়াত এবার অনেক বেশি সতর্ক। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, জুলাই সনদে কীভাবে ঐকমত্য ও ভিন্নমতগুলো স্থান পাচ্ছে, গণভোটের রূপ ও সময় কীভাবে নির্ধারিত হচ্ছে- এসব বিষয় জানার পরই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
জামায়াত সংসদের উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর) পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়েও তারা সনদে কীভাবে প্রতিফলন ঘটছে, তা দেখতে চায়। শিগগিরই দলের শীর্ষ নেতারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই সনদে কী আছে, তা আগে দেখে তারপরই আমরা স্বাক্ষর করব।’
এনসিপির যে দুই নেতা জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবেন : চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে আগামী ১৭ অক্টোবর শুক্রবার। ওইদিন বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই অনুষ্ঠান হবে। জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি, বিশেষ করে গণভোটের সময় নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সনদে স্বাক্ষরের জন্য বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সব দল দু’জন করে প্রতিনিধির নাম ঐক্যমত্য কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) স্বাক্ষরের জন্য নিজেদের প্রতিনিধিদের নাম ঠিক করে রেখেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তারা হলেন- দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। দুজনই দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে জুলাই সনদে সাক্ষর করবেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এনসিপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। তিনি সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই সনদের চূড়ান্ত কপি এখনও আমরা পাইনি। পাশাপাশি এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও এখনও জানানো হয়নি। ঐকমত্য কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপর ভিত্তি করে এনসিপি এ বিষয়ে তার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। যদি এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবেন।’