ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গাজা যুদ্ধবিরতি

‘কারাগারে নয় কসাইখানায় ছিলাম’

‘কারাগারে নয় কসাইখানায় ছিলাম’

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। গত সোমবার তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় কারাগার দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ।

দু’টি ব্যাচে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এই কারাবন্দিদের। প্রথম ব্যাচটি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের রাজধানী রামাল্লার পশ্চিমাংশে ইসরাইলের মালিকানাধীন ‘ওফের’ কারাগারের। এই ব্যাচে কারবন্দিদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপরের ?দিকে বেশ কয়েকটি বাসে চেপে ওফের কারাগার থেকে পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া শহরে এসে পৌঁছেছেন এই কারাবন্দিরা।

কারাবন্দিদের জন্য বাস সরবরাহ করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইসিআরসি)।

এদিকে প্রথম ব্যাচটি পশ্চিম তীরে যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস শহরে এসে পৌঁছান দ্বিতীয় ব্যাচের ১ হাজার ৭ ১৮ ফিলিস্তিনি কারাবন্দি। দক্ষিণ ইসরাইলের নাগেভ কারাগারে ছিলেন তারা।

ইসরাইলের কেন্দ্রীয় কারা দপ্তরের বিবৃতিতে নাগেভণ্ডএর কারাবন্দিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সেখান থেকে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৭১৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হলো। এই কয়েদিদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন।’

গাজায় যেসব কারাবন্দি এসে পৌঁছেছেন, তাদের সবাইকে প্রাথমিক মেডিকেল পরীক্ষা করেছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসার মেডিকেল কমপ্লেক্স। কারাবন্দিদের স্বাগত জানাতে পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া ও গাজার খান ইউনিসে জড়ো হয়েছিলেন শত শত ফিলিস্তিনি।

‘আমরা কারাগারে নয়, ছিলাম কসাইখানায়’: ইসরায়েলে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাওয়া গাজার খান ইউনিস শহরের কয়েকজন ফিলিস্তিনির সঙ্গে কথা বলেছে আল–জাজিরা। আবদাল্লাহ আবু রাফি তাঁদের একজন। নিজের মুক্তির অনুভূতিকে তিনি বর্ণনা করেছেন এককথায় এভাবে—‘অসাধারণ’। আবু রাফি বলেন, ‘আমরা ছিলাম এক কসাইখানায়, কারাগারে নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই কসাইখানার নাম ছিল ওফের কারাগার। অনেক তরুণ এখনো সেখানে আছেন।’

গাজায় ৮০ শতাংশেরও বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে : গাজা উপত্যকার ৮০ শতাংশেরও বেশি এবং গাজা সিটির ৯২ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। গাজা পুনর্গঠনে কী কী দরকার তার চাহিদা মূল্যায়ন করছে সংস্থাটি। জেনেভায় ইউএনডিপির এক মুখপাত্র গাজার ধ্বংসস্তূপকে ‘বিধ্বংসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সংস্থাটি অনুমান করছে, সেখানে কমপক্ষে ৫৫ মিলিয়ন বা সাড়ে পাঁচ কোটি টন ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

ইউএনডিপি বলছে, তারা কিছু অপসারণ শুরু করেছে, কিন্তু অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক তাদের কার্যক্রমকে ব্যহত করছে। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কার্যক্রমের সময় অনেক মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো শনাক্ত ও সমাহিত করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তারা।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত ইতালি : ইতালি প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানিয়েছেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে শিগগিরই স্বীকৃতি দেবে ইতালি। গত সোমবার মিশরের শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত ‘গাজা শান্তি সম্মেলন’-এ ঘোষণা দেন। মেলোনি বলেন, ইতালি গাজায় যুদ্ধবিরতির অপেক্ষায় ছিলাম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ— এ ইস্যুতে একটি সময়োপযোগী পরিকল্পনা প্রস্তাব করার জন্য। এখন আমরা দেখব— পরিকল্পনাটির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটে কি না। যদি ঘটে, সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে আমাদের সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না। অর্থাৎ এক কথায় বললে, ইতালি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত এবং বর্তমানে আমরা এর খুব কাছাকাছি আছি।

এখন গাজা পুনর্গঠনের সময় : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ-সহিংসতার ভয়াল সময় পেছনে ফেলে এসেছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। এখন সময় এসেছে এই ঐতিহাসিক উপত্যকা ভূখণ্ডকে পুনঃনির্মাণ ও পুনর্গঠন করার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এখানে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছি। একটি দীর্ঘ, ভয়াবহ, যন্ত্রণাদায়ক এবং ক্লান্তিকর দুঃস্বপ্নের অবসান হয়েছে। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়ের জন্যেই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে এ যুদ্ধবিরতি। তবে এটা এত চ্যালেঞ্জিং ছিলৃ আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না এই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য যে পরিশ্রম-প্রচেষ্টা আমাদের দিতে হয়েছে, তা তিন হাজার বছরের পরিশ্রমের সমান।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত