
ফায়ার সার্ভিসের তৈরি করা অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে যাওয়া রাসায়নিক গুদাম আলম ট্রেডার্সও ছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ডে মেইটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
তাজুল ইসলাম আরও জানান, সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি তিনবার ওই গুদামে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। এখন ওই গুদাম অভিযান চালানোর পর্যায়ে ছিল। গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। এই আগুন বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির দোতলায় স্মার্ট প্রিন্টিং নামের একটি কারখানায় টি-শার্ট প্রিন্ট করা হয়। আর তিন ও চারতলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা আছে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ১০ জনের মরদেহ শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা।
রাসায়নিকের তেজস্ক্রিয়তার কারণে গুদামে এখনো সার্চ অপারেশন চালানো যায়নি বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আরও ৩৬ থেকে ৭২ ঘণ্টা লাগতে পারে। এখন রাসায়নিক দ্রব্যগুলো পানি ছিটিয়ে অপসারণ করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ডে মেইটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার ১১টা ৪০ মিনিট থেকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছি। এই পর্যন্ত অগ্রগতি হচ্ছে গার্মেন্টস অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাশে যে কেমিক্যালের গোডাউন, যেটা আলম ট্রেডারস নামে পরিচিত, সেই গোডাউনের আগুন আমরা আজ বেলা ২টা ২০ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা করেছি।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তবে এখানে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। এটা একটা রাসায়নিক গুদাম এবং এখানে ছয়-সাত ধরনের বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে। তবে কী ধরনের রাসায়নিক বা এগুলোর মাত্রা কী, তা এখনো যাচাই–বাছাই করা যায়নি। পুরো গুদাম বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যে ভরা। পানি ছিটিয়ে এসব রাসায়নিক পরিষ্কার করা হচ্ছে। কাজটি সময় সাপেক্ষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সিস্টেমেটিক কাজ করছি। টেকনোলজি অ্যাপ্লাই করছি। ড্রোন দিয়ে দেখছি এবং আমরা বোঝার চেষ্টা করছি।’
আলম ট্রেডার্সের ভবনটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, গুদাম অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লম্বা সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এই ভবনের পিলারগুলো অনেকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে রাজউক, ভবন বিশারদ, যাঁরা দায়িত্বশীল ব্যক্তি রয়েছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন যে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে। এখানে যেকোনো অভিযান চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তার সঙ্গে ধাপে ধাপে কাজ করা হচ্ছে।
ভেতরের অবস্থার বিষয়ে তাজুল ইসলাম জানান, আলম ট্রেডার্সের মূল দরজায় তালা মারা ছিল। হাইড্রলিক স্প্রেডার ও কাটার দিয়ে এটাকে কেটে তারপর খুলতে হয়েছে। সুতরাং ধারণা করা হচ্ছে যে এখানে হয়তো মানুষ ছিল না। তারপরও সার্চ অপারেশন না চালানো পর্যন্ত বলা যাবে না, এখানে মানুষ ছিলেন কি ছিলেন না।
২৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে মিরপুরের আগুন : মিরপুরের রূপনগরে কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন প্রায় ২৮ ঘণ্টা চেষ্টা করে নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট সর্বশেষ কাজ করে ঘটনাস্থলে। ভয়াবহ এই আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে ৪টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সর্বশেষ আমাদের ৫টি ইউনিট কাজ করছিল।’
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান জানান, আমাদের কার্যক্রম চলমান, তবে দীর্ঘ সময় লাগবে কেমিক্যাল পুরোপুরি অপসারণ করতে। আমাদের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা পরে কী করবো।
তিনি বলেন, গোডাউনে থাকা বিভিন্ন কেমিক্যালের ধোঁয়া থেকে টক্সিক গ্যাস তৈরি হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে গেছে। এছাড়া ক্লোরিন গ্যাস ছড়িয়েছে; যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, ফুসফুস, হার্ট ও ত্বকের সমস্যা হতে পারে, যা ঘনবসতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান সিরাজ বলেন, কেমিক্যালের টক্সিক গ্যাস মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এখানে অনবরত অক্সিজেন নিচ্ছি, এই অক্সিজেনের সঙ্গে টক্সিক গ্যাস মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে। ফুসফুসের এমন ক্ষতি করবে, যা কেউ জানবেও না। এজন্য সবার কছে অনুরোধ কেউ যেন ভিড় না করে। সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি এবং মাস্ক ব্যবহার করি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ৩০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় বসবাসকারীদের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, কারণ আগুনের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এখনো বাতাসে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে।
তদন্ত কমিটি গঠন, আর্থিক সহায়তার ঘোষণা : রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে শাহ আলম কেমিক্যাল গোডাউন ও পাশের একটি গার্মেন্টস কারখানায় আগুনের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লস্কার তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের এ কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এছাড়া নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, নিহত শ্রমিকের প্রত্যেক পরিবারকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে ২ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে।
এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সুপারিশ ওই তদন্ত কমিটি। এছাড়া কমিটি আহত ও নিহতদের তালিকা প্রণয়ন, পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় কোনও গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা, কারখানার ঝুঁকি নিরূপণ, ঝুঁকি নিরসনের সুপারিশ এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।
মরদেহ নিতে ঢাকা মেডিকেলে স্বজনদের ভিড় : রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে মরদেহ নিতে হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছেন তাদের স্বজনরা। স্বজনদের উপস্থিতিতে মরদেহগুলো শনাক্তে কাজ করছে রূপনগর থানা পুলিশ। চলছে তথ্য সংগ্রহের কাজ।
এসময় মরদেহ দাবিদার স্বজনদের সব প্রকার তথ্য ও নিহত ব্যক্তির সব তথ্য সংগ্রহ করতে দেখা গেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
দায়িত্বরত রূপনগর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখানে মরদেহের দাবিদার যারা আছে তাদের সব প্রকার তথ্য সংগ্রহ করেছি। এরপর মরদেহগুলো ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত হলে হস্তান্তর করা হবে। শনাক্ত না করে মরদেহ হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। কারো মুখের কথায় মরদেহ হস্তান্তর করার কোনো সুযোগ নেই। পরে অন্য কেউ মরদেহের দাবি করলে তখন কি হবে? এছাড়া এখন পর্যন্ত ৫ মরদেহের কোনো দাবিদারও নেই।
আগুন সম্পূর্ণ নেভানোর পর বলা যাবে আর কোনো মরদেহ রয়েছে কি না : রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানা বা গোডাউনের ভেতরে আর কোনো মরদেহ রয়েছে কি না তা অগ্নিনির্বাপণ প্রক্রিয়া পুরোপুরি সমাপ্ত হওয়ার পর জানা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। গতকাল বুধবার আগুন লাগা কেমিক্যাল গোডাউনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক বলেন, আমাদের অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কেমিক্যাল অপসারণ এবং সম্পূর্ণভাবে আগুন নির্বাপণ করতে আরও সময় লাগবে। ঠিক কত সময় লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কাজী নজমুজ্জামান বলেন, গার্মেন্টসের আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়েছে। কিন্তু কেমিক্যালের আগুন নির্বাপণে সময় লাগবে। এসব কেমিক্যালের কারণে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস তৈরি হয়েছে, যা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা করছে। ঘনবসতির কারণে আমাদের কার্যক্রমেও সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা মাইকিং করে সবাইকে দূরে থাকতে বলছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোডাউনের বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি ভেতরে আর কোনো মরদেহ নেই। তবে ভেতরে যেহেতু প্রচুর ধোঁয়া রয়েছে, পুরোপুরি অগ্নিনির্বাপণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পর বলতে পারব আর কোনো মরদেহ রয়েছে কি না।
মিরপুরে ফায়ার সার্ভিসের হ্যাজমেট টিমের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন : রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে কসমিক ফার্মা নামের কেমিক্যাল গোডাউনে ফায়ার সার্ভিসের হ্যাজমেট টিম (বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল) দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, সকালে পাঁচজন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য কেমিক্যাল ফায়ার স্যুট পরে গোডাউনের ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি আরও জানান, তারা আগুনের ধোঁয়ার উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করতে ভেতরে কাজ করছেন। ধোঁয়ার উৎস শনাক্ত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিরপুরের অগ্নিকাণ্ড তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার : রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে গার্মেন্টস কারখানা ও কেমিক্যাল গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মৃত্যু এবং আরও কয়েকজন আহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রোমে অবস্থানরত প্রধান উপদেষ্টাকে মিরপুরের এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের খবর জানানো হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন এবং নিহতদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন বলে রোম থেকে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আছি”। শফিকুল আলম বলেন, অতীতেও দেশে কেমিক্যাল কারখানায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেখা যায়, কিছু লোক এখনো অবৈধভাবে এ ধরনের কারখানা স্থাপন করে।
তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর বৈধ লাইসেন্স এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অগ্নিনিরাপত্তা ছাড়পত্র ছিল কি না, তা যাচাইয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জনবহুল এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো উৎখাত করা দরকার : জনবহুল এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এর আগেও পুরান ঢাকায় এ রকম অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সেই কারণে ওই জায়গা থেকে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরানো হয়েছে। জরুরিভাবে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো উৎখাত করা দরকার। এজন্য পলিসি পরিবর্তন করা দরকার হলে সেটিই করতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গুদাম পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, আমি এখানে দেখতে এসেছি এ ধরনের কেমিক্যাল যেখানে রাখা হয়, এগুলো হচ্ছে বেআইনি জায়গা। সরকারকে ইমিডিয়েট ইনভেস্টিগেশন করতে হবে।কেমিক্যাল মজুতে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের স্ট্রং পলিসি থাকতে হবে। যেন জনবহুল এলাকায় এ ধরনের ক্ষেত্রগুলো না থাকে।
তিনি বলেন, যে মানুষগুলো মারা গেছেন তাদের বিষয়ে সরকার কাজ করছে। হাসপাতালের হেল্প ডেস্ক ও সমাজকর্মীরা এ বিষয়ে ফলোআপ করবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য নিয়ে বসবে। তাদের বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। নিখোঁজদের বিষয় ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। ইনভেস্টিগেশন করতে হলে এক্সপার্টদের সাহায্য লাগবে। উপদেষ্টা বলেন, এক্সপার্টদের বুদ্ধি নিয়ে কাজটি করতে হবে। এখানে পুলিশসহ অনেককে লাগবে। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে সবকিছু নিয়ে ফলোআপের দায়িত্ব আমার মন্ত্রণালয়ের এবং আমি সেটি করব। আমার যেটা করণীয় আমি সেটি অতি দ্রুত করতে চাই।
অবৈধ রাসায়নিক গুদাম নির্মাণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান : প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা রোধে অবৈধ রাসায়নিক গুদাম নির্মাণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।
রাজধানীর মিরপুরে শিয়ালবাড়ি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহবান জানান।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি আরও বলেন, অবৈধ রাসায়নিক গুদাম স্থাপনের বিরুদ্ধে সবাইকে আওয়াজ তুলতে হবে। এধরনের গুদাম চিহ্নিত করে প্রশাসন বা ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় সেগুলো উচ্ছেদ করার আহ্বানও জানান তিনি।
গত মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব অবৈধ রাসয়নিক গুদাম বন্ধ হলে কিছু মানুষ হয়তো ক্ষতির মুখোমুখি হবেন, তবে বহু সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা হবে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামাল জানান, মিরপুরের রাসায়নিক গুদামের আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, আগুন বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সম্পূর্ণ নেভাতে আরও সময় লাগবে। সম্প্রতি টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদামের আগুন নেভাতে গিয়ে তিন ফায়ারফাইটার প্রাণ হারিয়েছেন।