
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে আজ। তবে, জুলাই সনদে স্বাক্ষর হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে মতানৈক্য রয়েছে। এই মতানৈক্য দেশের রাজনীতিতে গভীর সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় গত বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ স্বাক্ষরের কথা জানান। জুলাই সনদের তিনটি ভাগ আছে। প্রথম ভাগে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে সনদ বাস্তবায়নের ৭ দফা অঙ্গীকারনামা। সনদের অনেকগুলো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিসহ কিছু কিছু রাজনৈতিক দল।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলামটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা এবং সেই ভিত্তি দেওয়ার ধরন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না পেলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপি ‘থাকবে না’। তিনি বলেন, ‘ শুক্রবার যে অনুষ্ঠানটা হতে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে- জুলাই সনদে স্বাক্ষর। যেই আইনি ভিত্তির কথা আমরা বলছি, সেই আদেশ জারির আগে এমন স্বাক্ষর কিন্তু একটি আনুষ্ঠানিকতা। জুলাই সনদ এরমধ্যেই প্রণীত হয়েছে। সেই সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া আগাবে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রেরও একটা আইনিভিত্তি দেওয়ার কথা বলেছিলাম। সেটা হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রের টেক্সট বা শব্দচয়নেও একটা একটা প্রতারণা করা হয়েছে। সেটা আমাদের দেখানো হয়নি। আগে যেটা দেখানো হয়েছে ঘোষণাপত্র পাঠের সময় সেটা অনেক পরিবর্তিত ছিল এবং অনেক কমপ্রোমাইজ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আমরা আরেকটা ঘটনার সাক্ষী হতে চাই না যেটার কোনো মিনিং নাই। আমরা আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চিয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করলে মূল্যহীন হবে। পরবর্তীতে সরকার কিসের ভিত্তিতে আদেশ দেবে সেই নিশ্চিয়তা পাচ্ছি না। এই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অংশীদার হব না।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকার ‘ছলছাতুরির আশ্রয় নিয়েছিল’ বলে দাবি করেন নাহিদ। ওই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে তিনি ও তার দল অংশ নিয়েছিল। নাহিদের বক্তব্যে নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে সেটা আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর গঠিত গণপরিষদ থেকেই করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দাবি ছিল ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ এবং নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা। শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য এই অভ্যুত্থান হয়নি। সেই সূত্র ধরেই আমরা নতুন বাংলাদেশ ও সংস্কারের কথা বলেছি। জুলাই সনদ তৈরির প্রসঙ্গ যখন আসল তখন আমরা বলেছিলাম এটার একটা আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কতগুলো বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে আসাই বড় কথা নয়। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসলে সেটা বস্তবায়ন করবে, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। অতীতে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও দেখেছি এই ঘটনাগুলো ঘটেনি।’
এনসিপির দাবিগুলো জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলন বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেগুলো হচ্ছে-
১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ‘টেক্সট’ এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। ২. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। যেহেতু তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে আদালতের মতামত নেওয়া হলেও তার ক্ষমতার বৈধতার মূলে রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান।
৩. জুলাই সনদের যে ৮৪টি বিষয় রয়েছে সেগুলো একত্রে গণভোটে যাবে। সেখানে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারীতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে।
৪. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর কোনো কার্যকরীতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের উপর প্রদত্ত গাঠনিক ক্ষমতা বলে সংবিধান সংস্কার করবে। সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে- বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬। নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের এই দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার পরই তবেই তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন। বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর আয়োজনটা জনগণের সঙ্গে একটা ছলছাতুরির মত হবে। আমরা জনগণকে অন্ধকারে রাখতে চাই না। একটা বিষয় অস্পষ্ট রেখে সবাই এক জায়গায় এসে একটা বিশাল সেলিব্রেশনের মাধ্যমে স্বাক্ষর করার আয়োজনের কোনো অর্থ নেই,’ বলেন তিনি।
গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়, একদিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট- ডা. তাহের : বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়; একদিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট আলোচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে। ডা. তাহের বলেন, বিএনপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে আগে দ্বিমত করলেও পরে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে আমরা এক জায়গায় আসছি এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেসব বিষয়কে একটি প্যাকেজ করে তার ওপরে গণভোট হবে। গণভোট কখন হবে- এ নিয়ে আবার আমাদের ভেতরে কিছুটা ডিফারেন্স।
আমরা বলেছি, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। ‘গণভোটে এমন কিছু দিক আছে যেগুলা যদি হ্যাঁ/না ভোটে না হয়, তাহলে তার ভিত্তিতে নির্বাচনের ক্যারেক্টারে কিছু পরিবর্তন হবে। যেমন আপার হাউস বা পিআর পদ্ধতি। নির্বাচনের আগেই ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় নির্বাচনে আপার হাউজের ভোট হবে। যদি এটি জাতীয় নির্বাচনের দিনেই হয় তাহলে তো আপার হাউস নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আর পাস হলো না’- বলেন এ জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, একদিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে ভোট কাস্টিং একেবারেই অপ্রতুল হবে। কারণ, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের কোনো গুরুত্বই থাকবে না। ডা. তাহের বলেন, আশা করি, ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবো এবং কোনো অনিশ্চয়তা আমরা দেখি না।
স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশ, তাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না সিপিবিসহ চার দল : জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না বাম ধারার চারটি দল। দলগুলো হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দলগুলো। জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে তাতে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে দলগুলো। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের যাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে শুধু সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
আমরাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলাম এবং ঐকমত্য কমিশনের সব সভায় উপস্থিত থেকে আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। কিন্তু জুলাই সনদের যে চূড়ান্ত কপি গত ১৪ অক্টোবর আমাদের কাছে পাঠিয়েছে, সেখানে দেখলাম সর্বসম্মত বিষয় ছাড়াও নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করেছে। আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।’ দলগুলো কেন জুলাই সনদে সই করবে না, তার কারণগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, জুলাই সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। অথচ জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে; পটভূমিতে অভ্যুত্থান–পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা আগে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসব বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বিদ্যমান চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হয়- এমন কোনো সনদে ভিন্নমত দিয়ে আমরা স্বাক্ষর করতে পারি না।’ তা ছাড়া জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার ৩ নম্বর-এ ‘জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না’ বলে যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এটি নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে মনে করে দলগুলো। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এত দিনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে কেবল সেসব বিষয়েই সবার স্বাক্ষর নেওয়া যেতে পারে। ভিন্নমতগুলো অতিরিক্ত (এনেক্স) প্রতিবেদন হিসেবে সনদে সংযুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করে তারা।
ভিন্নমত থাকলে জুলাই সনদের অঙ্গীকার কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘অঙ্গীকারনামার ২ নম্বর ধারায় জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে বা যথোপযুক্ত স্থানে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আমরাও সর্বসম্মত জুলাই সনদ সংবিধানে যুক্ত করার পক্ষে। কিন্তু নোট অব ডিসেন্টসহ কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
জুলাই সনদ নিয়ে এনসিপির সিদ্ধান্ত দুঃখজনক- আলী রীয়াজ : বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্থাপিত কমিশনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া না দেখে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তরুণদের দিয়ে গড়া দলটির এমন সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি, এটা তাদের একটি রাজনৈতিক অবস্থান। তবে এখনো আমরা আশাবাদী, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা (এনসিপি) সনদে স্বাক্ষর করবে।’ আলী রীয়াজ বলেন, ‘কমিশন আগেই বলেছে সনদ স্বাক্ষরের পর বাস্তবায়নের সুপারিশ যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে দেবে। আমরা আশা করি, তারা সনদে স্বাক্ষর করবে।’ আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তাদের ভিন্নমত নেই। এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তারা একটা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। প্রতিটি দল থেকে জুলাই সনদে সই করবেন দুইজন প্রতিনিধি। এরই মধ্যে জুলাই সনদে সই করতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো দুইজন করে প্রতিনিধির নাম ঐকমত্য কমিশনে পাঠায়।
কয়েকজন উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন- জামায়াতের সেক্রেটারি : কয়েকজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, আপনি যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছেন, দুই-একজন উপদেষ্টা আপনাকে চারিপাশে ঘিরে, আপনার এই গণতন্ত্রের উত্তরণের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য একটি বিশেষ দলের সাথে গোপন সম্পর্ক রেখে নানাভাবে আপনাকে নানান সময় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এর থেকে আপনি সাবধান থাকবেন, সতর্ক থাকবেন।’ গতকাল রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মাল্টিপারস মিলনায়তনে ‘জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি: গণভোট ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘একটা বড় দল তো এটাকে বলেছিলেন যে আমরা আগামী পার্লামেন্টে এটা আলোচনা করে ঠিক করি। আবার বলেছেন, আদালতে চলেন, নানা ধারার কথা বলেছিলেন। তার অর্থ হলো এগুলোকে আদালতে নেওয়া, আর আগামী পার্লামেন্টের কথা বলে ভেতরে পাকানো নতুন ষড়যন্ত্রের দিকে বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, নিঃস্বার্থভাবে জাতির নতুন মুক্তির স্বপ্ন যারা দেখছেন, সেই সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে ঐক্যমত কমিশনে যে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেই ভূমিকার কাছে ওই সব বড় দল দাবিদারদের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে।’