
২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১৮.৯৫ শতাংশ কম। এ বছর ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সব শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফলাফল প্রকাশ করেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেছেন। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন পুরুষ ও ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন নারী শিক্ষার্থী। সারা দেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৪.৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯.৪০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৪৮.৮৬ শতাংশ, যশোরে ৫০.২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২.৫৭ শতাংশ, বরিশালে ৬২.৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১.৮৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭.৪৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১.৫৪ শতাংশ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২.৫৭ শতাংশ।
কোন বোর্ডে কতজন জিপিএ ৫ পেয়েছেন : এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়ছেন ২৬ হাজার ৬৩ জন, রাজশাহীতে ১০ হাজার ১৩৭ জন, কুমিল্লায় ২ হাজার ৭০৭ জন, যশোরে ৫ হাজার ৯৯৫ জন, চট্টগ্রামে ৬ হাজার ৯৭ জন, বরিশালে ১ হাজার ৬৭৪ জন, সিলেটে ১ হাজার ৬০২ জন, দিনাজপুরে ৬ হাজার ২৬০ জন, ময়মনসিংহে ২ হাজার ৬৮৪ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৪ হাজার ২৬৮ জন এবং কারিগরিতে ১ হাজার ৬১০ জনসহ মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন।
পিছিয়ে ছেলেরা, এগিয়ে মেয়েরা : ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা-তিনটি বিভাগেই ছেলেরা পিছিয়ে পড়েছে মেয়েদের তুলনায়। এবারের ফলাফলে দেখা যায়, ছেলেদের গড় পাসের হার ৫২ দশমিক ১৭ শতাংশ, আর মেয়েদের ৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মোট ১২ লাখ ২৫ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয় এ পরীক্ষায়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮৭ জন ছাত্র ও ৫ লাখ ৫৮ হাজার ১৫৫ জন ছাত্রী।
ছেলেদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নেয় ১ লাখ ২৮ হাজার ১০০ জন, মানবিক বিভাগে ২ লাখ ৬২ হাজার ৫৮২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯৮ হাজার ৪০৫ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ১৭৬ জন, যা অংশগ্রহণকারীর ৫২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, মেয়েদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নেয় ১ লাখ ৭ হাজার ৭৭ জন, মানবিক বিভাগে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৪৯ হাজার ৯৬৪ জন। এদের মধ্যে মোট পাস করেছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৯০ জন, যা ৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, তিন বিভাগেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে পাসের হারে।
২০ বছরের ইতিহাসে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন ফল, যা বলছেন বিশ্লেষকরা : এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর চেয়ে কম পাসের হার ছিল ২০০৪ সালে। ওই বছর এইচএসসিতে পাস করেছিলেন ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। ২০০৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরপর এইচএসসিতে পাসের হার আর কখনও এর চেয়ে নিচে নামেনি। সেই হিসাবে গত ২০ বছরের মধ্যে এবারই পাসের হার সবচেয়ে কম। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ বছর ফেল করেছেন ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন, যা গত বছরের চেয়ে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন কম।
দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেননি। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার শূন্য। গত বছর শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৫টি। আবার শতভাগ পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে ১ হাজার ৪৩টি। সার্বিক দিক বিবেচনায় এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০০২ সাল পর্যন্ত ডিভিশন পদ্ধতি অর্থাৎ, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ছিল। ২০০৩ সাল থেকে জিপিএ পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে পাঁচটি স্কেলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। নতুন এ পদ্ধতি চালুর পর শিক্ষার্থীদের বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। জিপিএ পদ্ধতি চালুর প্রভাব পড়ে ২০০৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে। সে বছর পাসের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০০৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশে। এরপর থেকে পাসের হার ক্রমেই বাড়তে থাকে।
২০০৫ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া ২০০৬ সালে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬৫, ২০০৭ সালে ৬৫ দশমিক ৬০, ২০০৮ সালে ৭৬ দশমিক ১৯, ২০০৯ সালে ৭২ দশমিক ৭৮, ২০১০ সালে ৭৪ দশমিক ২৮, ২০১১ সালে ৭৫ দশমিক ০৮, ২০১২ সালে ৭৮ দশমিক ৬৭, ২০১৩ সালে ৭৪ দশমিক ৩০, ২০১৫ সালে ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এরপর ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১৯ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয়, ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি -শিক্ষা উপদেষ্টা : আমরা অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয় বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। তিনি বলেন, আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছিল। পাশের হার সাফল্যের প্রতীক জিপিএ এর সংখ্যা ছিল তৃপ্তির মানদ-। ফলাফল ভালো দেখাতে গিয়ে অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। আজ আমি এবং আমরা এই মন্ত্রণালয় সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় শিক্ষা সচিব রেহেনা পারভীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের তুলনায় পাসের হার ২০ শতাংশ কমেছে, সেটা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমাদের করার কী ছিলো। তাহলে কি আমরা নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে অতীতে যে রকম হয়েছে বলে আমরা জানি। মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়ার কথা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষকরা সময় নিয়ে খাতা দেখেছেন। শিক্ষকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা যেটা প্রাপ্ত নম্বর, শিক্ষকরা সেটা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে জিপিএ-৫ এর প্রতিযোগিতা চলছে। যিনি যোগ্যতা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন, আর যাকে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে জিপিএ-৫ দেওয়া হচ্ছে। এতে যোগ্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে না কি? বাস্তবতাটা কঠিন, এটা ঠিক। চলেন- আমরা সকলে মেনে নেই।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয় বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয় কিন্তু প্রয়োজনীয়। কারণ আজ যদি আমরা সাহস করে বাস্তবতাকে স্বীকার না করি, তাহলে মেধাবীদের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি আমরা অন্যায় করব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় হিসেবে আমরা কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারি না এই ফলাফলের জন্য। এই মন্ত্রণালয়ের কর্ণধার হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব হলো নিজেকে এবং আমাদের পুরো ব্যবস্থাকে মূল্যায়নের আওতায় আনা। এই ফলাফলকে আমি আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। আমরা এখন এমন এক সময় আছি, যেখানে নিজেদের শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রে শেখার ভবিষ্যৎ নিয়ে সততার সঙ্গে কথা বলার সময় এসেছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ভালো ফলাফল মানে শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি পরিবার আশা পরিশ্রম এবং ভবিষ্যতের গল্প। প্রথমেই আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই যারা ভালো ফল করেছে তাদের সাফল্য, আমাদের একই সঙ্গে যাদের ফল প্রত্যাশা মতো হয়নি আমি তাদের প্রতিও সহানুভূতি জানাই। আমি জানি হতাশা আছে; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই মুহূর্ত শেখার অংশ তোমাদের পরিশ্রম কখনোই বৃথা যাবে না।
তিনি বলেন, এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনেককে বিস্মিত করেছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম এমন প্রশ্ন উঠেছে কেন? এর উত্তর জটিল নয় বরং সহজ কিন্তু অস্বস্তিকর। বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় খুব শুরুর দিকে। প্রাথমিক স্তর থেকেই ঘাটতি তৈরি হয় এবং সেই ঘাটতি বছরের পর বছর সঞ্চিত হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাইনি।
ভুলত্রুটি ছাড়াই ফল প্রস্তুত হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পরীক্ষকদের সম্মানী -পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক : ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, দীর্ঘ প্রস্তুতি ও নিবিড় মূল্যায়নের পর ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেন কোনো ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের সম্মানী বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বোর্ডের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর এস এম কামাল উদ্দিন বলেন, আজ খুবই সুখের দিন। আমরা দীর্ঘদিন কাজ করার পর আজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করতে পেরেছি। এ বছর পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা যথাযথভাবে কাজ শেষ করতে পারেন। তিনি বলেন, এবার পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের আমরা সময় বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। ফলে তারা খাতা মূল্যায়নের পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন এবং খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছেন। একইসঙ্গে প্রায় এক দশক পর এবারই প্রথম পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের সম্মানী বোর্ডের নিজস্ব তহবিল থেকে বাড়ানো হয়েছে। আমরা এর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। ফলে পরীক্ষকদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল।
খাতা মূল্যায়নে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অভিযোগ আমরা দেখেছি। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ১৪ জন শিক্ষক ও প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের বোর্ডের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি সবকিছু নির্ভুল রাখতে।
এবার ফল প্রস্তুতে কোনো ভুলত্রুটি হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দিনাজপুর বোর্ডে ৪৩ কলেজে কেউই পাস করেনি : এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে বড় ধস নেমেছে। এ বোর্ডে এবার পাসের হার ৫৭.৪৯ শতাংশ, যেখানে ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৭৭.৫৬ শতাংশ। সে হিসাবে এ বছর পাসের হার কমেছে ২৭.০৭ শতাংশ। এবার ৬৬৬টি কলেজের মধ্যে ৪৩টি কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি। গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল ২০টি। অন্যদিকে, শতভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যা ১১টি। এ বছর পরীক্ষায় অনিয়মের কারণে ২৭ জন শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মীর সাজ্জাদ আলী এই ফলাফল নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের আট জেলার ৪৩টি কলেজ থেকে ১৮২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে রংপুর জেলার ৪টি কলেজ থেকে অংশ নেয় ১৫ জন শিক্ষার্থী।
এছাড়া নীলফামারীর ১০টি কলেজের ৪০ জন, কুড়িগ্রামের ৯টি কলেজের ৫৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৬টি কলেজের ২৫ জন, লালমনিরহাটের ৫টি কলেজের ১৪ জন, দিনাজপুরের ৪টি কলেজের ১৭ জন, পঞ্চগড়ের ৩টি কলেজের ১১ জন এবং গাইবান্ধার ২টি কলেজের ৬ জন শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।
যেসব কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি : রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ৯ জন, বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর বিলাতেরা হাই স্কুল ও কলেজের ৪ জন, পীরগাছা উপজেলার কান্দিরহাট স্কুল ও কলেজের ১ জন এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়াইবাড়ী কলেজের ১ জন।
নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার বাগুলাগাড়ী স্কুল ও কলেজের ১৫ জন, চৌধুরানী হাই স্কুল ও কলেজের ৬ জন, গোলমুন্ডা আদর্শ কলেজের ৩ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার নয়নখান স্কুল ও কলেজের ৫ জন, ডিমলা উপজেলার নওতারা বালিকা স্কুল ও কলেজের ৩ জন, জিলা পরিষদ স্কুল ও কলেজের ২ জন, ডিমলা সীমান্ত কলেজের ২ জন, গয়াখড়িবাড়ী বালিকা কলেজের ২ জন, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপা সৃজনশীল কলেজের ১ জন এবং সাতপাই হাই স্কুল ও কলেজের ১ জন পরীক্ষার্থী পাস করেনি।
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার চার চর শৌলমারী আদর্শ মহিলা কলেজের ১৫ জন, টাপুর চর স্কুল ও কলেজের ৪ জন, ফুলবাড়ী উপজেলার রাশেদ খান মেনন কলেজের ১২ জন, রাজারহাট উপজেলার সিংড়া দাবড়িহাট কলেজের ১০ জন, নাগেশ্বরী উপজেলার চিলাখান মডেল কলেজের ৬ জন, কুটিপাড়া ডাঙ্গা স্কুল ও কলেজের ৩ জন, সমাজকল্যাণ মহিলা কলেজের ১ জন, উলিপুর উপজেলার বাগুয়া অনন্তপুর স্কুল ও কলেজের ২ জন এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ডোলডাঙ্গা স্কুল ও কলেজের ১ জন অকৃতকার্য হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর মহিলা কলেজের ৮ জন, আমানতুল্লাহ ইসলামিয়া একাডেমি স্কুল ও কলেজের ৫ জন, ঠাকুরগাঁও নিউ মডেল কলেজের ৪ জন, রানীশংকৈল উপজেলার গোগড় কলেজের ৫ জন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রত্নাই বাগুলাবাড়ী হাই স্কুল ও কলেজের ২ জন এবং পীরগঞ্জ উপজেলার এখতিয়াপুর শহীদ সালাহউদ্দীন স্কুল ও কলেজের ১ জন পরীক্ষায় অংশ নিলেও কেউ পাস করেনি।
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সোনারজাট স্কুল ও কলেজের ৫ জন, শিয়ালখাওয়া কলেজের ৩ জন, দক্ষিণ ঘানাশ্যাম স্কুল ও কলেজের ২ জন, হাতিবান্ধা উপজেলার আমিনুর রহমান কলেজের ২ জন এবং আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী স্কুল ও কলেজের ২ জন অকৃতকার্য হয়েছে।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার কবিরাজহাট কলেজের ১০ জন, বিরামপুর উপজেলার বেপারীটোলা আদর্শ কলেজের ৩ জন, ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর হাই স্কুল ও কলেজের ২ জন এবং হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় স্কুল ও কলেজের ২ জন পাস করতে পারেনি। পঞ্চগড় জেলার বোদা পাইলট বালিকা স্কুল ও কলেজের ৮ জন, তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীন কলেজের ২ জন, বোদা উপজেলার মারেয়া মডেল হাই স্কুল ও কলেজের ১ জন এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গাগর হাই স্কুল ও কলেজের ৫ জন ও সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী মহিলা কলেজের ১ জনও পাস করতে পারেনি।