
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা মূল বেতনের পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাক্ষাণ করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপণের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ১৩ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন শিক্ষকরা।
বাড়িভাড়া নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া অর্থ বিভাগের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিতে অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রদান চিঠিতে বলা হয়, সরকারের বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের পাঁচ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) দেওয়া হলো।
চিঠিতে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- ক. ওই বাড়িভাড়া ভাতা পরবর্তী জাতীয় বেতনস্কেল অনুসারে সমন্বয় করতে হবে। খ. ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১’, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস্য ডিপ্লোমা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন-আদেশ-পরিপত্র-নীতিমালা অনুসরণপূর্বক নিয়োগের শর্তাদি পালন করতে হবে। গ. বর্ণিত ভাতাদি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনও বকেয়া প্রাপ্য হবেন না। ঘ. ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সব আর্থিক বিধি-বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে। ঙ. এ ভাতা সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনও অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ ওই অনিয়মের জন্য দায়ি থাকবেন। চ. প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জিও জারি করে জিও-এর ৪ (চার) কপি অর্থ বিভাগে পৃষ্ঠাংকনের জন্য পাঠাতে হবে। এর আগে, দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগ। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়া হবে।
সরকার ঘোষিত এ নতুন বাড়ি ভাড়ার সুবিধা বাস্তবে আরও বেশি আর্থিক বৃদ্ধি আনবে বলে এক ব্যাখ্যায় দাবি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, ঘোষিত বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি এবং ন্যূনতম মাসিক দুই হাজার টাকা সংযোজনের ফলে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাতা বৃদ্ধি হবে ১২ শতাংশের বেশি। গতকাল রোববার ফেসবুকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল পেজে দেওয়া পোস্টের এক ব্যাখ্যায় এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাড়িভাড়ার ব্যাখ্যায় বলেছে, বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম মাসিক ২০০০ টাকা বিবেচনায় আনলে ৫৬ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া বাড়বে ১২ শতাংশের বেশি। বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম মাসিক ২০০০ টাকা বিবেচনায় আনলে ৭৫ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়িভাড়া বাড়বে ৯ শতাংশের বেশি। ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম মাসিক ২০০০ টাকা বিবেচনায় আনলে ৮৯ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া বাড়বে ৮ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পোষ্টে আরও বলা হয়েছে, এই প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত, যা তাদের নির্ধারিত অর্থনৈতিক পরিসীমার মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই কাঠামো তৈরি করেনি, তবে আমরা সবসময়ই শিক্ষক সমাজের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তাব তুলে ধরেছি এবং তা অব্যাহত রাখব। আমরা জানি, শিক্ষক সমাজ এর চেয়ে অধিক প্রাপ্য-আমরাও চাই শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান ও সুবিধা আরও বাড়ুক। বর্তমান বাস্তবতার মধ্যে এটি একটি প্রথম ধাপ, এবং আমরা আশা করি শিক্ষক সমাজ শ্রেণিকক্ষে ফিরে এসে শিক্ষার্থীদের শেখার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন, যাতে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও ন্যায্য সমাধান বাস্তবায়ন করা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবসময় শিক্ষক সমাজের পাশে থাকবে এবং তাদের ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাবে।
ট্রাম্পের বরাদ্দ কমানোর পদক্ষেপের মধ্যেও রেকর্ড আয় যেভাবে করল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই চিঠি দেয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ (সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব আগেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখনো তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ অষ্টম দিনের মতো শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মসূচি চলছে। এখন তাঁরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। এর মধ্যে গতকাল অর্থ বিভাগ বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) করার সিদ্ধান্ত দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিল।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এতদিন মাসে এক হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া পেয়ে আসছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁদের বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ বিভাগ সম্মতিপত্র দিয়েছিল। যদিও শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে সেটি কার্যকর করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং তারা শতাংশের হিসাবে বাড়িভাড়া দিতে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল। এতে চারটি ভাগ (৫, ১০, ১৫, ২০ শতাংশ) করে হিসাব করে দেখানো হয়েছিল, কত টাকা লাগবে। সেখান থেকে সরকারের সামর্থ্য অনুযায়ী বাড়িভাড়া বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছিল।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ‘ভুখা মিছিল’ আটকে দিল পুলিশ : মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া নির্ধারণসহ সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘ভুখা মিছিল’ আটকে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল রোববার বিকালে মিছিল নিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকে যাওয়ার পথে হাই কোর্টের মাজার গেইটে বাধার মুখে পড়েন তারা। সেখানে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের মুখোমুখি অবস্থান নেন তারা। এরপর বিকাল পৌনে ৫টায় তারা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে ফিরে যান। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় শহীদ মিনার থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ভুখা মিছিল নিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকে রওনা হন।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা এখন শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন, আশা শিক্ষা উপদেষ্টার: বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) ঘোষণার পর আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন বলে আশা করছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবসময় শিক্ষকদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে চেষ্টা করেছে। এবং সেই ধারাবাহিকতায় বাড়িভাড়া সংক্রান্ত যে অগ্রগতি, সেটা হয়েছে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এ কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, আমরা মনে করি শিক্ষক সমাজের অনেক বেশি পাওয়া দরকার। কিন্তু বর্তমান সীমাবদ্ধতার কারণে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করেছে। সেটা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করেছি যথেষ্ট। আমি মনে করি, এখন আন্দোলনরত শিক্ষক যারা রয়েছেন, তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন। শিক্ষা কার্যক্রম স্কুলগুলোতে শুরু হবে।
চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, যেসব জায়গায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, আমরা আশা করি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আমরা যতটুকু করেছি, শিক্ষক সমাজ সেটাকে গ্রহণ করে তারা যেন ফিরে যান এবং ক্লাস যাতে তারা শুরু করেন। এই আবেদন আমি তাদের কাছে রাখছি।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে জানানো হয়, সরকারের বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) করা হলো। এ আদেশ নভেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে সন্তুষ্টি, যা বললেন শিক্ষক নেতা : বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করা হবে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন আশ্বাসে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জাতীয়করণ আন্দোলন ঐক্য জোটের শিক্ষক নেতারা। গতকাল রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে এ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
বৈঠক শেষে সংগঠনের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন আজীজী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব আমাদের দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের দল ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ—বাস্তবায়ন করা হবে। আজীজী জানান, মির্জা ফখরুল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন। শিক্ষকদের প্রস্তাব ও আর্থিক দিকগুলো নিয়ে সেখানেও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
শিক্ষক প্রতিনিধি দল বৈঠকে প্রস্তাব করে, আপাতত যদি ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে অন্য দাবিগুলো পরবর্তী সময়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলে সরকারকে অনুরোধ জানাতেও তারা কাজ করছেন বলে জানান আজীজী। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিবের আন্তরিকতায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তিনি শুধু আশ্বাসই দেননি, বাস্তবায়নের দিকেও মনোযোগী হয়েছেন- এটা আমাদের আন্দোলনে নতুন প্রেরণা দিয়েছে।