ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শ্রেণিকক্ষে ফিরলেন শিক্ষকরা

শ্রেণিকক্ষে ফিরলেন শিক্ষকরা

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থ দুই ধাপে পাবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ১৫ শতাংশের মধ্য ৭ দশমিক ৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) কার্যকর হবে এ বছরের ১ নভেম্বর থেকে। আরও ৭ শতাংশ ৫ কার্যকর হবে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির পর আন্দোলন প্রত্যাহার করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে- প্রধান উপদেষ্টা : এমপিওভুক্ত শিক্ষক- কর্মচারীদের দাবি নিয়ে গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তাদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক- কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে। তবে বাস্তবতা হলো, ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গতিশীল হলেও এখনই মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির মতো সামর্থ্যে অর্থনীতিতে ফেরেনি। তাই সরকারকে বাস্তবতার নিরিখে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’ প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, আন্দোলনরত শিক্ষকরা নবউদ্যমে শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে অবদান রাখবেন।

শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের : বাড়িভাড়া বাড়ায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষক-কর্মচারীরা। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ- প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আমাদের সব আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। আজ থেকে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরছি।’ দেলাওয়ার হোসেন বলেন, আন্দোলন চলাকালে ৮ দিন তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বার্ষিক পরীক্ষার আগপর্যন্ত প্রতি শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখবেন।

আন্দোলনে সংহতি জানানোয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।

এর আগে গতকাল সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি জানায় এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যেখানে শিক্ষকদের বেতন রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি হওয়া উচিত, সেখানে শিক্ষকেরা বেতন পান মাত্র সাড়ে ১২ হাজার। যতক্ষণ শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হবে, ততক্ষণ এনসিপির নেতৃবৃন্দ শিক্ষকদের সঙ্গে শহিদ মিনারে অবস্থান নেবেন বলেও ঘোষণা দেন তিনি। সেখানে তার সঙ্গে সারওয়ার তুষার, হান্নান মাসুদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত ছিলেন।

যা বলল শিক্ষা মন্ত্রণালয় : শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আজকের এই মুহূর্তটা শিক্ষা বিভাগের জন্য সত্যিই ঐতিহাসিক। এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের জন্য চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) এবং ২০২৬ সালের জুলাই থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মোট ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া কার্যকর হবে। শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী শতাংশ হারে এই ভাতা নিশ্চিত করতে পেরে একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, শিক্ষকেরা আরও অধিক সম্মানের দাবিদার এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রের সচেষ্ট থাকা দরকার। উপদেষ্টা আরও বলেন, এই পথ সহজ ছিল না। নানা মতভেদ, বিতর্ক, অভিযোগ—সবকিছুই ছিল। কোনো বিতর্কের উত্তর না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ক্রমাগত একটা ন্যায্য, টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে গেছে। শিক্ষা উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উপদেষ্টা পরিষদ, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাজ করে গেছে, যেন শিক্ষকদের দাবি শোনা হয়, বোঝা হয়।

মন্ত্রণালয় মনে করে, ‘এটি কারও একার জয় নয়; এটি যৌথ সাফল্য। শিক্ষকদের আন্দোলন তাদের বাস্তবতা বুঝিয়েছে, সরকার দায়িত্বশীলভাবে সাড়া দিয়েছে। আর সবাই মিলে মঙ্গলবার এমন এক অবস্থানে এসেছি, যেখানে সম্মান, সংলাপ আর সমঝোতাই জিতেছে। এখন সময় ক্লাসে ফিরে যাওয়ার, শিক্ষার্থীদের কাছে, আসল কাজের জায়গায়। এই সমঝোতা হোক নতুন সূচনা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও শিক্ষাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আর গুণগত মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আমরা একটি মর্যাদাসম্পন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।’ প্রসঙ্গত, সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক- কর্মচারীদের বাড়িভাড় মূল বেতনের ৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে গত ১২ অক্টোবর থেকে টানা আন্দোলন করে আসছিলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত