
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার আগে ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ও তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাক্ষাৎ করবেন। প্রথা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র তথ্য নিশ্চিত করে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে আগামী ৭ ডিসেম্বর তফসিল নিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজেরা সভায় বসবে। ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথা আগেই জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তার আগে ৭ ডিসেম্বর তফসিল নিয়ে কমিশন সভা রয়েছে। প্রথা অনুযায়ী এবারও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তফসিল চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আরপিও’র সবশেষ সংশোধনীও অনুমোদন হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে নতুন আরও দুটি দলের নিবন্ধন দেওয়াও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, কমিশন সভায় তফসিলের সময়সূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে তফসিল চূড়ান্ত করা হবে। রোববারের বৈঠকের পরে সেই সপ্তাহের যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন এ নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল বলেছেন, তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের কথা তো আমরা বলে আসছি। সেক্ষেত্রে ৮ ডিসেম্বর থেকে যেকোনো দিন হবে। আর ভোটের তারিখও হবে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে—এমন সময়। তফসিল থেকে দুই মাস হিসাব করলে একটি নির্দিষ্ট তারিখ পাওয়া যাবে।
কমিশন সভায় তফসিলের বিভিন্ন দিনক্ষণ পর্যালোচনা করে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সেরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্ধারিত দিনে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তা ঘোষণা করবেন তুলে ধরে তিনি বলেন, এবার ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির কথা বিবেচনায় রেখে ভোটের দিন ঠিক করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার বা শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারকে বেছে নেওয়া হয়। আগের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারও ইসি সচিবালয় একাধিক দিন প্রস্তাব রাখবে, তা চূড়ান্ত করবে কমিশন।
এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট হয়েছিল ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে। সেই ভোটগ্রহণের দিন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। তফসিল থেকে ভোটগ্রহণের সময়ের ব্যবধান ছিল ৫৫ দিন। ১. এবার তফসিল ঘোষণা হবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে (৮ ডিসেম্বর সোমবার, ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর বুধবার কিংবা ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবারের মধ্যে একদিন)। ২. ভোট হবে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ (৮ ফেব্রুয়ারি রোববার, ৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারের মধ্যে একদিন)। ৩. গত ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দ্বিতীয়, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদের ভোট হয়েছে রোববার; অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচন হয়েছে সোমবার; প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচন হয়েছে বুধবার। আর চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বৃহস্পতিবারে হয়েছে। ৪. সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, আর ভোট হয় পরের বছরের ৭ জানুয়ারি; ব্যবধান ছিল ৫৩ দিনের। মনোনয়নপত্র জমার সময় ছিল ১৪ দিন, বাছাই ছিল চার দিন, প্রত্যাহারের শেষ সময়ের জন্য ছিল ১৩ দিন (এরমধ্যে আপিল দায়ের পাঁচ দিন, নিষ্পত্তি ছয় দিন)। আর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারের সময় ছিল ১৯ দিন এবং প্রচার শেষের ৪৮ ঘণ্টা পর ভোট। সেই ভোটগ্রহণ হয় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
ইসির সভা ৭ ডিসেম্বর : নির্বাচন কমিশনের দশম সভা আগামী ৭ ডিসেম্বর রোববার, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে তার সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
তফসিলসহ সভার আলোচ্যসূচি : (ক) আইন ও রীতির আলোকে তফসিরের আগের ও পরের কার্যক্রমসমূহ। (খ) গণভোট আয়োজনসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা। (গ) মাঠ পর্যায়ে সর্বোচ্চ যোগাযোগ, মতবিনিময় ও সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়। (ঘ) রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয়। (ঙ) জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন পদ্ধতি পর্যালোচনা ও নিদের্শিকা নির্ধারণ। (চ) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠানে কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা এবং ২৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত মক ভোট থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ। (ছ) এনআইডির ‘পার্সোনালাইজেশন সেন্টারের’ ৯টি মেশিন বিদ্যমান অবস্থায় বিএমটিএফ হতে আইডিইএ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পে হস্তান্তর/গ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্নকরণ এবং বিএমটিএফ এর স্থগিতকৃত বকেয়া বিল পরিশোধ সংক্রান্ত। (জ) সেপ্টেম্বর ২০১৯ হতে জুন ২০২২ পর্যন্ত চুক্তির অধীনে ২ কোটি ৩১ লাখ স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশন বিল পরিশোধ করা হয়। তৎকালীন সময়ে অতিরিক্ত ১৪ লাখ স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশন বাবদ বিএমটিএফ কর্তৃক দাবিকৃত বকেয়া বিল পরিশোধ সংক্রান্ত। (ঝ) ক্রয় প্যাকেজ এনসিএস-২৭ (স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশন ও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত লেখা মুদ্রণ) এর কার্যক্রম এবং চুক্তি সম্পন্নকরণের সিদ্ধান্ত।