ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাবাকে হয়তো আর কখনও দেখতে পাব না

সাক্ষাৎকারে বললেন ইমরান খানের দুই ছেলে
বাবাকে হয়তো আর কখনও দেখতে পাব না

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে কারাগারের একটি ‘ডেথ সেল’-এ রেখে ‘মানসিক নির্যাতন’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলায়মান ইসা খান। তারা বলেছেন, বন্দি থাকা বাবাকে হয়তো আর কখনও দেখতে পাব না। গত বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খানের ছেলেদের এসব কথা বলতে শোনা যায়। সাক্ষাৎকারে তারা জানান, পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দি থাকলেও কয়েক মাস ধরে তারা বাবার সঙ্গে দেখা কিংবা কথা বলতে পারেননি। ইমরান খানের ছোট ছেলে কাসিম খান জানান, তার বাবাকে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে একাকী বন্দিত্বে (সলিটারি কনফাইনমেন্ট) রাখা হয়েছে। সেখানে তিনি নোংরা পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন ও হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী বন্দিদের আশপাশে রাখা হয়েছে তাকে। কাসিমের ভাষায়, পরিস্থিতি অত্যন্ত নোংরা ও অমানবিক। তাকে মানবিক যোগাযোগ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার বাবার ওপর ‘মানসিক নির্যাতনের কৌশল’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি কারারক্ষীদেরও ইমরান খানের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই। কাসিম খান বলেন, এখন আর বেরিয়ে আসার কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। আমরা বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু একইসঙ্গে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। আমরা এখন আশঙ্কা করছি, যে হয়তো আর কখনও তাকে দেখতে পাব না। ইমরান খানের বড় ছেলে সুলায়মান খান বলেন, তার বাবা যে কক্ষে থাকেন, সেখানে তাকে দিনে প্রায় ২৩ ঘণ্টা বন্দি রাখা হয়। তিনি ওই কক্ষকে ‘ডেথ সেল’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সুলায়মান খান দাবি করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেন যে, ইমরান খান এখন আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ একাকী বন্দিত্বে আছেন। তাকে এমন ‘নিম্নমানের পরিবেশে’ রাখা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো বন্দির জন্যই গ্রহণযোগ্য নয়। কাসিম খান ও সুলায়মান ইসা খান হলেন ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী, ব্রিটিশ টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জেমাইমা গোল্ডস্মিথের সন্তান। তাদের অভিযোগ প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইমরান খানের বোনদের বক্তব্যেও। তার বোনরা আগেই অভিযোগ করেছেন যে, আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইমরান খানের বোন আলীমা খান বলেন, আমার ভাইকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে ও বেআইনিভাবে একাকী বন্দিত্বে রাখা হয়েছে। ইমরান খানের বিরুদ্ধে এই নির্যাতন বন্ধ করা উচিত। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দি ইমরান খান। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগসহ একাধিক মামলা করা হয়েছে। এদিকে, গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক পাকিস্তান সরকারকে ইমরান খানের ‘অমানবিক ও মর্যাদাহীন’ আটক পরিস্থিতি নিয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এসব পরিস্থিতি নির্যাতন কিংবা অন্য কোনো নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণের শামিল হতে পারে। নির্যাতনবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডস বলেন, ‘আমি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই, যেন ইমরান খানের আটক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মান ও বিধির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়।’

জিল এডওয়ার্ডস আরও বলেন, ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাওয়ালপিণ্ডির আদিয়ালা জেলে স্থানান্তরের পর থেকে ইমরান খানকে অতিরিক্ত সময় একাকী বন্দিত্বে রাখা হচ্ছে। তাকে দিনে ২৩ ঘণ্টা কক্ষে আটকে রাখা হয় ও বাইরের জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ অত্যন্ত সীমিত। তার কক্ষ সার্বক্ষণিক ক্যামেরা নজরদারির আওতায় রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত