রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মঙ্গলবার ফোনে কথা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধ বন্ধে উভয় নেতা দীর্ঘসময় কথা বললেও ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হননি পুতিন। তবে ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা অপাতত বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্পের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার ফোনালাপে ইউক্রেন-যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ফোনালাপ বিষয়ে বলা হয়, জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়া ও ইউক্রেন আগামী ৩০ দিন হামলা বন্ধ রাখবে- এমন প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন পুতিন। ক্রেমলিনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুতিন তাৎক্ষণিকভাবে রুশ সামরিক বাহিনীকে এ-বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন। কৃষ্ণসাগরে নিরাপদে চলাচল করার প্রস্তাবেও পুতিন গঠনমূলক সাড়া দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে মস্কো। পুতিনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে বলা হয়েছে, বুধবার রাশিয়া ও ইউক্রেন ১৭৫ বন্দি বিনিময় করবে। তাছাড়া রাশিয়ার পক্ষ থেকে ১৩ জন মারাত্মক আহত ইউক্রেনীয় সেনাকে হস্তান্তর করা হবে। পুতিন আরও বলেছেন, সংঘাতের তীব্রতা রোধ ও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে এর সমাধানের মূল শর্ত হলো বিদেশি সামরিক সাহায্য ও কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা সম্পূর্ণ বন্ধ করা। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প ও পুতিন। সংঘাতের অবসান একটি স্থায়ী শান্তির মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে উভয় নেতাই একমত হয়েছেন। হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে, জ্বালানি ও অবকাঠামোগত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হবে বলে দুই নেতা একমত হয়েছেন। তাছাড়া কৃষ্ণসাগরে সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির বিষয়ে কারিগরি আলোচনা শুরুর ব্যাপারে তারা মত দিয়েছেন। এসব আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যে শিগগিরই শুরু হবে। পুতিন ও ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য, কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এবং ইরান নিয়েও আলোচনা করেন। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পর পুতিনের সঙ্গে এটি তার দ্বিতীয় ফোনালাপ।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ফোনালাপে যুক্ত হওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষায় রাখেন পুতিন। খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনকলের ঠিক আগে পুতিন অন্য একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। যেখানে দেরি হওয়ার সতর্কতার কথা শুনে পুতিন হাসছিলেন। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট তখন মস্কোতে একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানে শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। মঙ্গলবার রাশিয়ান সময় বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে তার নির্ধারিত ফোনালাপের ঠিক আগে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। বিকেল ৪টার কিছু পরে, উপস্থাপক পুতিনকে মনে করিয়ে দেন যে তিনি ফোন করতে দেরি করছেন। এটি শুনে ভিডিওতে রুশ প্রেসিডেন্টের হাসিমুখে কাঁধ ঝাঁকানোর ফুটেজ দেখা গেছে। তিনি বিকেল ৫টার দিকে ক্রেমলিনে পৌঁছান; তখন অন্যপ্রান্তে এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন ট্রাম্প।
সেই মুহূর্তের ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। অনেকে এটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অপমান’ এবং পুতিনের ক্ষমতার খেলার জয় বলে অভিহিত করেন। একজন লিখেছেন, ‘নেতাদের অপেক্ষা করানো পুতিনের পুরনো ক্ষমতার খেলা। কিন্তু এটা বেশ নিষ্ঠুর।’