ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে জুলাই শহিদ পরিবারের আবেগময় স্মৃতিচারণ

চট্টগ্রামে জুলাই শহিদ পরিবারের আবেগময় স্মৃতিচারণ

চট্টগ্রাম নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’ ঘিরে ছিল এক অনন্য আবহ। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শহিদদের স্বজনরা তুলে ধরেন তাদের প্রিয়জন হারানোর বেদনার স্মৃতি, আর আহতরা ভাগ করে নেন সেই রক্তঝরা দিনের অভিজ্ঞতা।

অনুষ্ঠানমঞ্চে একের পর এক উঠে আসে শহিদ স্বজনদের স্মৃতিকথা। সেইসব স্মৃতিচারণ মুহূর্তে ভিজিয়ে দেয় উপস্থিত সবার চোখ। আবেগে ভারি হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠানস্থল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এরপর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শো’ প্রদর্শিত হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শোতে আকাশে একসঙ্গে উড়ে প্রায় ১ হাজার ড্রোন, যা ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে তুলে ধরা হয় জুলাইয়ের বিভিন্ন ঘটনা ও বীরত্বগাঁথা।

অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশপথে ছিল ‘খুনি’ আখ্যায়িত করে লাগানো জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদের ছবি। এ ছাড়াও ছিল জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে সেই আন্দোলনে নির্মমতার চিত্র নিয়ে পোস্টার প্রদর্শনী। চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কোহিনুর বেগম সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি রান্না করছিলাম, এমন সময় ওর (শান্ত) দুইটা বন্ধু আসে বাসায়। ওরা খুব স্বাভাবিক ছিল, ওরা জানতো যে আমার শান্তমণি আর নেই। আমাকে বলছে, আন্টি, আপনি রেডি হন, একটু মেডিকেলে যেতে হবে, শান্ত গুলি খেয়েছে। আমি বললাম, তোমরা এসব কী বলছো।’ ‘আমি তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে মেডিক্যালে যাই। পাঁচলাইশ থানার ওসি বলছে, শান্তর মা কই? আমি গেলাম, নামণ্ডঠিকানা সব দিলাম। আমি ভেবেছিলাম, শান্তমণি বেঁচে আছে। বললাম, আমাকে শান্তমণির কাছে নিয়ে যাও। কেউ নিচ্ছে না। মিডিয়ার লোকজন আমার দিকে আসতে থাকে। অনেককে ফিসফাস করতে দেখলাম। কিছু না বলে আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। কয়েকটা পেপারে সাইন নেওয়া হলো। আমি তো জানতাম না, এগুলো পোস্টমর্টেমের কাগজ। থানায় কিছুক্ষণ থাকার পর বুঝলাম, আমার শান্তমণি আর নেই।’

চট্টগ্রামে আরেক শহিদ দোকানকর্মী মো. ফারুকের স্ত্রী সীমা আক্তার বলেন, ‘সেদিন দুপুরে আমার বাসায় খবর আসে ফারুক নাকি গুলি খেয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে গেলাম। দেখলাম, আমার স্বামীর দেহটা পড়ে আছে। আমার স্বামী নেই, হঠাৎ করে আমার জীবনটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো! আজ আমার জীবন অন্ধকার জীবন। আমি চাই, এভাবে বাংলাদেশে আর যেন কোনোদিন কাউকে জীবন দিতে না হয়। এই স্বৈরাচার আর আমরা বাংলাদেশে দেখতে চাই না। কোথাও যেন কোনও মায়ের বুক খালি না হয়, কোনও সন্তান যেন এতিম না হয়, আমার মতো কোনও স্ত্রী যেন বিধবা না হয়।’

গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের প্রথম শহিদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামের বাবা, মা, বোন, শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। শহিদ শান্তকে নিবেদন করে গান করেন পারাবার শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত