ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জলবায়ু তহবিলের ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি : টিআইবি

জলবায়ু তহবিলের ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি : টিআইবি

বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নের জাতীয় তহবিলের অর্ধেকেরও বেশি অংশ দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থার গবেষণা বলছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) থেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর ৫৪ শতাংশ বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এর আর্থিক পরিমাণ প্রায় ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২ হাজার ১১০ কোটি টাকার বেশি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরে টিআইবি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০-২০২৪ মেয়াদে বিসিসিটির মোট বরাদ্দ ছিল ৪৫৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। এর অর্ধেকের বেশি অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত। টিআইবি বলছে, রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ এবং স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে বহু প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তহবিল ব্যবস্থাপনায় থাকা কর্মকর্তারা অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে।

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশের বছরে প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস মিলিয়ে গড়ে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার—প্রয়োজনের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। জাতীয় তহবিল থেকে বার্ষিক বরাদ্দ কমেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হারে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক তহবিল বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবুও প্রয়োজনের তুলনায় তা অত্যন্ত সীমিত রয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিসিসিটির অনুমোদিত ৮৯১টির মধ্যে ৫৪৯টি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গড়ে ৬৪৮ দিনের প্রকল্প শেষ হতে সময় লেগেছে ১ হাজার ৫১৫ দিন- অর্থাৎ প্রায় ১৩৩ শতাংশ সময় বেশি। কোনও কোনও প্রকল্প, যার মেয়াদ ছিল চার বছর, তা শেষ হতে লেগেছে ১৪ বছর পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক তহবিলেও একই পরিস্থিতি- ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির মেয়াদ গড়ে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। অথচ ২০০৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার—যা অত্যন্ত অপ্রতুল।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতার অভাবেই এই পরিস্থিতি।’ ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, প্রকৃত উপকারভোগীদের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা এবং শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের সুফল পাওয়া অসম্ভব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত