ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এলএনজি আমদানি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করবে : আইইএ

এলএনজি আমদানি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করবে : আইইএ

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা আগামী এক দশকে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। গতকাল বুধবার প্রকাশিত সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক ২০২৫ প্রতিবেদনে’ একথা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, দ্রুত বাড়তে থাকা জ্বালানি চাহিদা, দেশীয় গ্যাস কমে যাওয়ার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সরবরাহব্যবস্থার ঝুঁকি- এই তিন চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ। একসময় প্রাকৃতিক গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ এখন মোট চাহিদার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ আমদানি করছে। আইইএ’র হিসাব অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্মিলিত এলএনজি আমদানি প্রায় ৮০ বিলিয়ন ঘনমিটারে (বিসিএম) পৌঁছাতে পারে- যা ২০২৪ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি।

আইইএ বলছে, দেশীয় গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে এলএনজি এখন যৌক্তিক বিকল্পে পরিণত হলেও উচ্চ আমদানি মূল্য, সীমিত অবকাঠামো এবং ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত এই খাতের স্থিতিশীলতায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় বাংলাদেশের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হয়ে ব্যাপক গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছিল, যার প্রভাবে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়। আইইএ বলছে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে উপকূলীয় স্থাপনাগুলো জলবায়ু ঝুঁকির মুখে কতটা অরক্ষিত। আইইএ বলছে, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামোয় বিনিয়োগ না বাড়ালে গ্যাস সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা ভবিষ্যতেও বড় ঝুঁকিতে থাকবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বায়ুদূষণে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষের অকালমৃত্যু ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দূষণজনিত ক্ষতি জিডিপির ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আইইএ বলছে, বাংলাদেশ শিল্প খাতে নির্গমন নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ নিলেও বায়ু মান উন্নয়নের টেকসই পথ হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর। কানাডা ও চীনে কয়লা বিদ্যুৎ বন্ধের পর কয়েক বছরের মধ্যেই বায়ু মান দুই-তৃতীয়াংশ উন্নত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ ২০২২ সালে শতভাগ বিদ্যুৎ প্রবেশাধিকার অর্জন করেছে। তবে এখনো লাখো পরিবার কাঠ বা গোবরের মতো ঐতিহ্যবাহী জ্বালানিতে রান্না করে, যা ঘরের ভেতরের দূষণের প্রধান উৎস। আইইএ’র অনুমান, সরকারগুলো শেষ প্রান্তের সংযোগে বিনিয়োগ ও সাশ্রয়ী বিকল্প (যেমন বৈদ্যুতিক চুলা) সহজলভ্য করলে ২০৩৩ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল এশিয়ায় পরিষ্কার রান্নার জ্বালানির সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।

আইইএ জানিয়েছে, ২০৩০-২০৩৫ মেয়াদে এশিয়ায় এলএনজির গড় দাম প্রতি এমবিটিইউ ৭ দশমিক ৫ ডলারে নেমে আসতে পারে- বর্তমানের তুলনায় যা ৪০ শতাংশ কম। এতে বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে চাহিদা বাড়বে। তবে অবকাঠামো সংকট ও অর্থায়নের ঘাটতির কারণে এই প্রবৃদ্ধি বাস্তবে সীমিত হতে পারে।

বিশ্ব এখনও ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমা রক্ষা করতে ব্যর্থ- আইইএ’র প্রতিবেদনে এমন সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রেকর্ড বিনিয়োগ সত্ত্বেও, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে, কিন্তু এর বাস্তব অগ্রগতি ধীর গতিসম্পন্ন। আইইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ ও আমদানি নির্ভরতা না বাড়িয়ে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ দ্রুত সম্প্রসারণ করাই এখন জরুরি। এতে জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুদূষণ- দুই দিকেই উন্নতি সম্ভব।

আইইএ’র মতে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু জ্বালানির ধরন নয়, বরং জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতার ওপরও। বর্তমানে দেশটি প্রতিবছর বিপুল অর্থ ব্যয় করছে জ্বালানি আমদানি ও জলবায়ু অভিযোজনের পেছনে। যা ক্রমাগত অর্থনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত