ঢাকা রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভুয়া ছবি ও ডিপফেক এখন সাংবাদিকতার বড় চ্যালেঞ্জ

বললেন শফিকুল আলম
ভুয়া ছবি ও ডিপফেক এখন সাংবাদিকতার বড় চ্যালেঞ্জ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দ্রুত বদলে দি”েছ সাংবাদিকতার চেনা কাঠামো। কাজের গতি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ভুল তথ্য, ভুয়া ছবি ও ডিপফেকের ঝুঁকি। এই বাস্তবতায় সাংবাদিকতার মূল নৈতিকতা অটুট রেখে এআই ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘এআই-পাওয়ার্ড জার্নালিজম : অপারচুনিটি, রিস্ক অ্যান্ড ডিজিটাল সিকিউরিটি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গেমপ্লিফাই এক্সওয়াইজেডের সিইও মাহফুজুর রহমান এবং ডিআরইউ তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাহমুদ সোহেল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকতা এআই-নির্ভর হোক বা না হোক- এর গোল্ডেন স্ট্যান্ডার্ড বা মৌলিক নীতিমালা কখনোই বদলাবে না। প্রতিটি তথ্যের সুনির্দিষ্ট সূত্র থাকতে হবে এবং প্রতিটি উদ্ধৃতি হতে হবে শতভাগ নির্ভুল। এই জায়গায় কোনো আপসের সুযোগ নেই।’

প্রেস সচিবের মতে, সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এআই সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত সক্ষমতা বহুগুণ বাড়াতে পারে। আগে যেখানে একজন সাংবাদিকের উৎপাদনশীলতা ৩০ শতাংশের মতো ছিল, সেখানে এখন তা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এআই টুলের সহায়তায় একজন সাংবাদিক একাই কোনো নির্দিষ্ট খাত– যেমন শিপিং, কৃষি গবেষণা বা জলবায়ু– নিয়ে বড় আকারের ওয়েবসাইট বা তথ্যভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করতে পারেন। এতে যেমন ক্যারিয়ারের নতুন সুযোগ তৈরি হ”েছ, তেমনি গভীর ও বিশেষায়িত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রও প্রসারিত হ”েছ।

তবে এআইয়ের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হিসেবে তিনি তুলে ধরেন ভুয়া ছবি, ভিডিও ও ফটোকার্ডের অপব্যবহার। এআই ব্যবহার করে দীর্ঘ বক্তৃতা বা বক্তব্যকে এমনভাবে কাটছাঁট ও বিকৃত করা যায়, যা দেখে বা শুনে সাধারণ মানুষের পক্ষে আসল বক্তব্য বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের কনটেন্ট সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং পরিকল্পিতভাবে জনমতকে প্রভাবিত করার হাতিয়ারে পরিণত হ”েছ বলে সতর্ক করেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ডিপফেকের কারণে এখন প্রতিনিয়ত ফটোকার্ডের অত্যাচার শুরু হয়েছে। আমিই এর শিকার হয়েছি। আমার ২৭ মিনিটের বক্তব্য এমনভাবে জোড়াতালি দিয়ে এক মিনিটে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা অবিশ্বাস্য। তাই যারা এআই জানেন না, তাদের সাংবাদিকতা করা উচিত নয়। এআই জানা এখন আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। আর যতদিন আমরা প্রযুক্তিগতভাবে স্বনির্ভর না হব, ততদিন সাংবাদিকদের ফ্যাক্টচেকারের ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা এক্সের মতো বড় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ‘ফ্রিডম অব প্রেস’-এর যুক্তি দেখিয়ে অনেক সময় ঘৃণা ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর সুযোগ করে দি”েছ। অথচ এসব প্ল্যাটফর্মের কার্যকর দায়বদ্ধতা নেই।

প্রেস সচিব স্মরণ করিয়ে দেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ঘৃণামূলক প্রচারণার কারণে রোহিঙ্গাদের মতো সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জীবন বিপন্ন হয়েছে এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। নিজস্ব প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা না থাকায় অনেক দেশই এসব বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

এআইয়ের অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠছে বলে মনে করেন শফিকুল আলম। নির্বাচন প্রভাবিত করা, সামাজিক অ¯ি’রতা তৈরি করা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলার মতো ঘটনা বাড়ছে। এ কারণে এআই ব্যবহারে নৈতিকতা ও কার্যকর নজরদারি জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মত দেন তিনি।

প্রেস সচিব আরও বলেন, এআই লিটারেসি বা এআই শিক্ষা একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। এটি ছাড়া বর্তমানে সাংবাদিকতা করা অসম্ভব। এটি কেবল ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য নয়, বরং ভুয়া তথ্য ও ডিপফেক শনাক্ত করে গণতন্ত্র ও সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্যও প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত