ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘জনবসতিপূর্ণ শহরে বিমান প্রশিক্ষণ কেন’

‘জনবসতিপূর্ণ শহরে বিমান প্রশিক্ষণ কেন’

উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু হতাহতের ঘটনায় একটি প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির এই নেতা বলেছেন, আমার প্রশ্ন হলো যে, একটা প্রশিক্ষণ বিমান তা-ও ফাইটার বিমানের প্রশিক্ষণ; এমন একটা জনবসতিপূর্ণ শহরে হয় কিনা। আমরা জানি, এই ধরনের প্রশিক্ষণ যেখানে জনগণ থাকে না- এরকম জায়গায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ ঢাকা শহরের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হলো কেন? গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।

গয়েশ্বর বলেন, স্বাভাবিকভাবে মানুষের প্রশ্ন রয়েছে- বিমান বাহিনীর এই সম্পর্কে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা দরকার এবং এটার জবাব কে দেবে? এটা আপনি কি জবাব দেবেন? আমাদের দেশে বছর বছর যুদ্ধ না হোক সেনাবাহিনীর এক মহড়া হয়, সেটাও আমরা জানি অনেক দূরাঞ্চলে হয়- জনাকীর্ণ এলাকায় হয় না।

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে হতাহত শিক্ষার্থীদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এই বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দলের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় ভোরে। নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেছে। এছাড়াও সকালে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে কার্যালয়ের সামনে আহতদের জন্য রক্তদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যুবদলসহ দলের নেতাকর্মীরা রক্ত দিচ্ছেন আহতদের জন্য।

বিশেষ দোয়া মাহফিলে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘সবাই আমরা শোকাহত, সান্ত¡নার কোনো ভাষা নাই। এই ক্ষতি পূরণের নয়। মৃত্যু মনে হয় ২৭ ছাড়িয়েছে। যারা বেঁচে থাকবে তারাও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে না। এই শিশুরা মরে গেল, ওদের মা-বাবার চোখের জল কী দিয়ে পূরণ করব? আমরা সারা দেশে শোক পালন করছি, আমরা মাসব্যাপী বছরব্যাপী যদি শোক পালন করি, আমরা তো তাদের ফেরত পাব না। আমরা অন্তরের অন্তরস্থল থেকে দেশবাসী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি- তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। তাদের শোকসন্তপ্ত মা-বাবাকে শোক সহ্য করার শক্তি সৃষ্টিকর্তা দিন।

উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, দেখবেন ঢাকা শহরে দিনের বেলায় কোনো প্রশিক্ষণ মোটরযান দেখবেন না। এগুলো এখন রাতের বেলায় হয়, তা-ও প্রধান সড়কে নয়। অর্থাৎ শহরের ভেতরে ছোট ছোট রাস্তায় গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ হয়। এটা সাবধানতা। আর একটা বিমানের প্রশিক্ষণ হবে সেই প্রশিক্ষণটাৃ। আরেকটা কথা আছে, সেই প্রশিক্ষণটা প্রত্যেকটা যুদ্ধ বিমানই হোক বিমানটা স্টার্ট করার আগে তার পরীক্ষা করাতে হয় অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে যে, ওই বিমানটা ওড়ানো যাবে কিনা এবং এটা সঠিকভাবে চালানো যাবে কিনা- তার একটা পূর্ব পরীক্ষার ব্যাপার আছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই প্রশিক্ষণ যারা দিচ্ছেন বা তদারকি করছেন তারা বিমানটা সচল থাকার মতো যান্ত্রিক অবস্থা ছিল কিনা- সেটা পরীক্ষা করা হচ্ছে কিনাৃ. এই বিষয়গুলো বা এই প্রশ্নগুলো আজকে জনগণের মনে উঠেছে।

গয়েশ্বর বলেন, আমি আমার কথা বলছি না, জনগণের অনুভূতি জনগণের প্রশ্নের কথাগুলো বলছি। আমার মনে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই শুনতে পাচ্ছেন। আমরা দেখতে চাই, এখানে আপনাদের কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল কিনা, আকাশের বিমানটি ওড়ানোর আগে বিমানটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে কিনা যথাযথভাবে এবং এই বিমানটা চলার মতো সক্ষম ছিল কিনা? সেজন্যই আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জনগণের পক্ষ থেকে প্রশ্নের উত্তরগুলো খুঁজে বের করা এবং জানার জন্য দাবি করছি। আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। যাতে ভবিষ্যতে এমন আরেকটা দুর্ঘটনার জন্ম না হয়, তার জন্য সতর্ক থাকতে জাতির এটা জানা উচিত। এই প্রশ্নগুলো এখানে আপনারা সবাই আছেন আপনারা কি চান না? আমি কি নিজে নিজে আবিষ্কার করেছি- না, এটা জনগণের কথা, জনগণের জিজ্ঞাসা।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত