ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পল্লবী থানা হেফাজতে জনি হত্যা

দুই পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল

দুই পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল

রাজধানীর পল্লবীতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে নিহত হওয়া গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কামরুজ্জামানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। গত রোববার ও সোমবার দুই দিনব্যাপী এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। মামলার আরেক আসামি এএসআই রাশেদুল হাসানের যাবজ্জীবন দণ্ড কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এছাড়া আরেক আসামি পুলিশের সোর্স রাসেলকে সাত বছরের সাজা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। অপর আসামি পুলিশের সোর্স সুমন সাজাভোগ করে আগেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। রায়ে যাবজ্জীবন বহাল থাকা আসামিদের ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ভুক্তভোগী জনির পরিবারকে দিতে বলা হয়েছে। ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামি এএসআই রাশেদুল হাসানকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। আদালতে আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন- সিনিয়র আইনজীবী এসএম শাহজাহান, সরওয়ার আহমেদ, মো. আবদুর রাজ্জাক ও নাজমুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার। অন্যদিকে বাদীপক্ষে আইনজীবী এসএম রেজাউল করিম শুনানি করেন। মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এসময় ইশতিয়াক হোসেন জনি ও তার ভাই ইমতিয়াজকে চলে যেতে বলেন সুমন। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সুমনের ফোনে পুলিশ এসে জনি ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায় এবং থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করে। এতে জনির অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ইমতিয়াজ হোসেন একই বছরের ৭ আগস্ট মামলা করেন। সে মামলায় জাহিদুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়। এটি ২০১৩ সালে হওয়া নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে প্রথম মামলা। এক পর্যায়ে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। তদন্তকালে এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর বিচার শেষে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ। সে রায়ে জাহিদুর রহমান, রাশেদুল হাসান ও কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া সুমন ও রাসেলের সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন বিচারিক আদালত। দণ্ডিত পাঁচ আসামির মধ্যে কামারুজ্জামান শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামি সুমন সাজাভোগ করে বেরিয়ে গেছেন। এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জাহিদুর, রাশেদুল ও রাসেল ২০২০ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। ২০২১ সালে হাইকোর্ট সেসব আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। গত ৯ জুলাই এসব আপিল হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়। ৭ আগস্টের শুনানিতে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত