ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

টাঙ্গাইলে আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

টাঙ্গাইলে আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

টাঙ্গাইলে রোপা আমন ধান চাষে সাফল্য ধরা দেওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। ভালো বীজ ও আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ছোঁয়া এবং অনুকূল পরিবেশের ফলে বিঘা প্রতি ২ থেকে ৪ মণ ধান উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকের আনন্দ পরিবার থেকে পাড়া-গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা বাজারে আমন ধানের ভালো দাম প্রত্যাশা করেছে।

এদিকে অগ্রহায়ণের শুরু থেকে জেলার চাষিরা আমন ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছে। এলাকাভেদে পর্যায়ক্রমে রোপা আমন ধান কেটে ঘরে তুলছে কৃষকরা। এরই মধ্যে জেলায় উৎপাদনের প্রায় ৬৩ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন করা হয়েছে- বাকি ধানগুলো খেত থেকে কেটে-মাড়াই করে ঘরে তুলতে নানা কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত এখন কৃষক-কিষানিরা।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর। সরকারি প্রণোদনা ও কৃষকদের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ দেওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এরমধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে, চাষ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে। বাসাইলে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯০ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ৩৯২ হেক্টরে। কালিহাতীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৩০ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ৮ হাজার ৪৬৫ হেক্টরে। ঘাটাইলে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৪০ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪৯০ হেক্টরে। নাগরপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫১০ হেক্টরে, চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ২০১ হেক্টর। মির্জাপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে, চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর। মধুপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ১৩ হাজার ২ হেক্টরে। ভূঞাপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৩০ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ৬ হাজার ১০৫ হেক্টরে। গোপালপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টরে। সখীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ২৬০ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ১৭ হাজার ২৬৫ হেক্টরে। দেলদুয়ারে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর, চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে এবং এবং ধনবাড়ী উপজেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে, আবাদ করা হয়েছে ৯ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিন জেলার কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠেজুড়ে চলছে রোপা আমন ধান কাটার উৎসব। কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহ ও আনন্দ নিয়ে আধুনিক যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন) ব্যবহার করে ধান কাটা ও মেশিনে মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে ভালো খড় পেতে প্রায় ৮০-৮৫ ভাগ কৃষক হাতে ধান কেটে মেশিনে মাড়াই করছেন। কৃষকের উঠানে এরই মধ্যে নতুন ধানের স্তুপ জমতে শুরু করেছে। রোপা আমন উঠতে কিষাণীরাও দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছে না।

কৃষকরা জানায়, বাজারে রোপা আমন ধানের দাম আশানুরূপ পেলে তারা এ মৌসুমে লাভের মুখ দেখবেন। আর বাজার যদি কম থাকে তবে ফসল উৎপাদনের ইচ্ছাশক্তি অনেকটা মৃয়মান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কালিহাতীর সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামের কৃষক রায়হান আলী, রকিবুদ্দিন, আবু বক্কর, আব্দুর জব্বার, আমজাদ আলী, নওশের হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তুলনামূলকভাবে কম হলেও হয়নি বলা যাবে না- তাই ধানে কিছুটা চিটা হওয়ায় ফলন অনেকটা কম হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় ধানের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে খেতের ধানগুলো জমিতে নেতিয়ে পড়েছিল- এজন্য অনেক ধানের চিটা হয়েছে। সার, বীজ, কীটনাশ প্রয়োগের খরচের পর এবার আগের তুলনায় বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ ধান বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বাজার ভালো পেলে নতুন ধান বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ জানান, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষে প্রশক্ষিণ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা এবং বীজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার ফলে এবার রোপা আমন ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়ে অনেক খুশি।

তিনি জানান, এরইমধ্যে জেলার ১ লাখ ৪ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ধানের মধ্যে প্রায় ৬২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে- যা জেলায় উৎপাদিত রোপা আমনের প্রায় ৬৩ শতাংশ। ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে চলছে মাড়াইয়ের কাজও। জেলার এ বছর হাইব্রিড ও উফশী জাতের আমনের চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় জাতের আমনের চাষও হয়েছে। রোগবালাই কম থাকায় সব জাতেরই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে জেলায় রোপা আমন ধান কাটা শেষ হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত