
সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল। ফলন ভালো হওয়ায় শীতকালে রাতের বেলা দিনের পরিবেশ সৃষ্টি করে ড্রাগন চাষিদের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। এতে আর্থিক সচ্ছলতা ও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ড্রাগন চাষিরা। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ সেচের আওতা থেকে বাণিজ্যিকে রূপান্তর করায় কিছুটা বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
সরেজমিন দেখা যায়, রাতে যখন শত শত বৈদ্যুতিক বাতি একসঙ্গে জ্বলে উঠে দেখে মনে হয় আকাশে তারা জ্বলছে। সে এক মনোরম দৃশ্য। রাতে এই দৃশ্য দেখতে অনেকেই ছুটে আসেন ড্রাগন বাগানে।
জানা যায়, দিনের দৈর্ঘ্য কমে গেলে শীতকালে ড্রাগনের ফুল ফল ধরে না। মার্চ মাসের শেষে ফুল ধরে। তাপমাত্রা বাড়লে ফল বড় হয়। জুন মাস থেকে বাজারে ড্রাগন ফল উঠতে শুরু করে। আর ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফল ধরে না। মহেশপুর উপজেলার বেলেমাঠ, বাথানগাছি, ভাটপাড়া, কালুহুদা, পাতিবিলা, নাটিমাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা জানান, রাতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রেখে আলো জ্বালিয়ে রাখলে গাছে ফুল ও ফলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এতে যেমন ফলন বাড়ছে, তেমনি মিলছে অসময়ের ড্রাগন ফলের বাজারদর দ্বিগুণ। তারা অরো জানান, চায়না থেকে সংগ্রহ করা বিশেষ ধরনের লাইট ব্যবহার করে গতবছর এ পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই ভালো ফলনে উৎসাহ পান। শুরুতে কেউ বিশ্বাস না করলেও ফলন দেখে এখন অনেকেই এই পদ্ধতি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।সন্ধ্যার পর বাগানে জ্বলে ওঠে সারি সারি আলোকবাতি। আলোয় ঝলমলে এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয়দের কাছে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে ড্রাগন চাষ এখন এক নতুন আকর্ষণ। কৃষকের এই উদ্ভাবনী চাষাবাদে পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগও। লাইটিং প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত পরামর্শ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ড্রাগন গরম কালের ফল হলে লাইটিং পদ্ধতিতে চায় হওয়ায় শীত মৌসুমে এ ফলটি পাওয়া যাচ্ছে আর বাজার মূল্যও ভালো পাচ্ছে যার কারনে লাইাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগনের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি রোগবালাই দমন, সার প্রয়োগ ও শাখা-প্রশাখা পরিচর্যা নিয়ে আমরা নিয়মিত নির্দেশনা দিচ্ছি।
তিনি আরও জানান, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। কৃষকদের মতে, এলাকার মাটি, আবহাওয়া ও বাজার সম্ভাবনা মিলিয়ে ড্রাগন ফল এখন উপজেলার অন্যতম লাভজনক বাণিজ্যিক ফসল।
কৃত্রিম আলোয় ড্রাগন চাষ এখন অনুপ্রেরণার নতুন ঠিকানা হয়ে উঠেছে মহেশপুর উপজেলার কৃষকদের কাছে।