ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম বে-টার্মিনালের কাজ

শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম বে-টার্মিনালের কাজ

নতুন বছরের প্রথমেই শুরু হচ্ছে বহুল প্রত্যাশার বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। গেল বছরের ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিটেইল প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার নির্দেশনা দেয়া হয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে। প্রকল্পের কাজের জন্য বিশ্বব্যাংকের ইতোপূর্বে দেয়া ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সুবিধা চুক্তিও শিগগিরই সম্পাদন হতে পারে বলে জানা গেছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় সাত কিলোমিটার চ্যানেল খনন এবং ছয় কিলোমিটার ব্রেকওয়াটার নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংক এই ঋণসুবিধা প্রদান করছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে ক্রমাগত বাড়ছে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। বাড়ছে বন্দরের চাহিদা। বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা দিয়ে দেশের আগামী কয়েক বছর পরের চাহিদা মেটানোও সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় হালিশহরের সমুদ্র উপকূলে জেগে ওঠা একটি চরকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বে-টার্মিনালের সম্ভাবনা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নানাভাবে যাচাই-বাছাই করে বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে দেশের আগামী একশ’ বছরের চাহিদা মোকাবিলা করতে পারবে বলে নিশ্চিত হয়। জার্মানির হ্যামবুর্গ পোর্ট কনসাল্টিংয়ের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে কোরিয়ান কোম্পানি কুনহওয়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ সম্পন্ন করে। চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে গ্রহণ করেছে। সমীক্ষায় বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেকওয়াটার (সাগরে পাথরের বাঁধ) এবং সাত কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল ১৪ মিটার গভীর করে খনন করার পরামর্শ দেয়। তিনটি টার্মিনালের অবকাঠামো, চ্যানেল এবং ব্রেকওয়াটার মিলে পুরো বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ২.৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১ এবং ২ নম্বর টার্মিনালের প্রতিটির জন্য ৬০৯.৪৪ মিলিয়ন ডলার। ৩ নম্বর টার্মিনাল নির্মাণে ৭৫৫.১১ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে সমীক্ষায় ধারণা ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া চ্যানেল ও ব্রেকওয়াটার নির্মাণে খরচ ধরা হয় ৮৩১ মিলিয়ন ডলার। তাই দেশের আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে খ্যাত বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যাপারে বিশ্বের বন্দর পরিচালনার খ্যাতনামা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। এরমধ্যে পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের ডিপি ওয়ার্ল্ড সরকারি বিবেচনায় বেশ এগিয়ে রয়েছে। সূত্র বলেছে, বে-টার্মিনালের ১ ও ২ নম্বর টার্মিনাল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বিদেশি অপারেটর দিয়ে নির্মাণ ও পরিচালনা করা হবে। ৩ নম্বর টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশি অপারেটররা প্রকল্পটিতে টার্মিনালের অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিচালনার ব্যাপারে আগ্রহী হলেও কেউই চ্যানেল খনন এবং ব্রেকওয়াটার নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক। গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এই ঋণের জন্য চুক্তি সম্পাদন আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। তবে চুক্তি সম্পাদনের আগে অবশ্যই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন করতে হবে। আগামী মাসেই প্রকল্পের চ্যানেল খনন ও ব্রেকওয়াটার নির্মাণ কাজ একনেকে অনুমোদিত হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্প নিয়ে বিগত বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত