চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ইয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা কন্টেনারগুলো নিয়ে একটি কন্টেনার লাইন চালু করার সুযোগ রয়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরের ইয়ার্ডে এই ধরনের অন্তত দশ হাজার পরিত্যক্ত কন্টেইনার রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেড়শ’ কোটিরও বেশি টাকার রাজস্ব এসব কন্টেইনারের বিপরীতে আটকা পড়ে আছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম কাস্টমস এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিলেই কন্টেইনার লাইন চালু করা সম্ভব।
শিপিং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এতে চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা উদ্ধার, কাজে গতিশীলতা সৃষ্টি, রাজস্ব আয়সহ নানাখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার রাখার ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৫৩ হাজার ১৮ টিইইউএস। এটিই বন্দরের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা। কিন্তু কন্টেইনার বেড়ে গেলে বন্দরের কাজেকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। ইকুইপমেন্ট মুভমেন্ট কিংবা গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। ইয়ার্ডে কন্টেইনারের পরিমাণ যত কম থাকে বন্দরের কাজে গতিশীলতা ততই বেশি থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে গড়ে ৪০ হাজারের মতো কন্টেইনার থাকে। কিন্তু এই ৪০ হাজার কন্টেইনারের মধ্যে অন্তত দশ হাজার কন্টেইনার রয়েছে যেগুলো পরিত্যক্ত। এসব কন্টেইনারের পণ্যও ব্যবহারযোগ্য নেই, এগুলো নিতেও কেউ আসে না, আসবে না। তবে আইনি প্রক্রিয়ার কারণে কাস্টমস নিলাম বা ধ্বংস না করায় কন্টেইনারগুলো বন্দরের ইয়ার্ডের অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। এরমধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা দশ হাজার কন্টেইনারের দখলে রয়েছে বন্দর ইয়ার্ডের অন্তত ১৮ শতাংশ জায়গা। পরিত্যক্ত কন্টেইনারের দখলে এতো বিপুল পরিমাণ জায়গা অব্যবহৃত থাকায় বন্দরের কাজে কর্মে ব্যাঘাতের পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছে। এসব কন্টেইনার থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ এক টাকাও ভাড়া আদায় করতে পারছে না। এসব কন্টেইনারের বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অন্তত দেড়শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আটকা পড়ে আছে। তবে পরিত্যক্ত এসব কন্টেইনার দেশের অনেক বড় একটি সম্পদ হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট শিপিং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কন্টেইনারগুলোর মধ্যে কিছু কিছু কন্টেনারে জং ধরেছে, কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তবে অধিকাংশ কন্টেইনারই ভালো। সামান্য কাজ করালে প্রতিটি কন্টেইনারই পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যাবে। এরমধ্যে যদি অর্ধেক কন্টেইনারও ব্যবহার করা যায় তাহলে এগুলোর দাম একশ’ কোটি টাকার বেশি হবে। বর্তমানে একটি কন্টেইনারের দাম গড়ে দুই হাজার ডলারের বেশি। কন্টেইনার লাইনগুলো একটি কন্টেইনারের জন্য প্রতিদিন এক থেকে দেড় ডলার করে ভাড়া পেয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরে জায়গা দখল করে পড়ে থাকা এসব কন্টেইনার দিয়ে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন বা বিএসসি অনায়াসে একটি কন্টেইনার লাইন গড়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর এবং কাস্টমসের সদিচ্ছা এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজটি করা হলে চট্টগ্রাম বন্দরের দীর্ঘদিনের ঝঞ্জাল লাঘবের পাশাপাশি দেশের একটি সম্পদ গড়ে উঠবে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কন্টেইনার জাহাজ কেনার চিন্তাভাবনা করছে। জাহাজ না কিনলেও নন ভ্যাসেল অপারেটিং কমন ক্যারিয়ার (এনভিওসিসি) শাখা চালু করে কন্টেইনার লাইন চালু করে চট্টগ্রামের সাথে সিঙ্গাপুর, কলম্বো এবং মালয়েশিয়ার বন্দরে চলাচলকারী জাহাজে এসব কন্টেইনার ভাড়া দিতে পারে। বিশিষ্ট শিপিং ব্যবসায়ী সী গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন জুয়েল দৈনিক আজাদীর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পরিত্যক্ত কন্টেইনারগুলো দিয়ে একটি কন্টেইনার লাইন গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিএসসি একটি কন্টেইনার লাইনের গর্বিত মালিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে আমাদের জায়গার আকাল বহুদিনের জন্য ঘুচে যাবে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধীরে ধীরে এসব কন্টেইনার নিলাম করছি। তবে সরকার যদি বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেয় সেক্ষেত্রে অনেককিছু হতে পারে। এসব কন্টেইনার নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে চাপের মুখে রেখেছে বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।