প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়তম সৃষ্টি। আর কোনো সৃষ্টিই তার সমকক্ষ নয়। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর সবকিছু মানুষের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। করেছেন মানুষের অনুগত। সবকিছু সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করেন মানুষ সৃষ্টি করার। একদিন ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা বা প্রতিনিধি প্রেরণ করব। তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফ্যাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তসবি পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।’ (সুরা বাকারা : ৩০)। এরপর আল্লাহতায়ালা মাটি দিয়ে হজরত আদম (আ.)-এর দেহ সৃষ্টি করলেন এবং পরে সেই দেহে প্রাণ দান করলেন। এভাবে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হলো। তিনি হলেন সর্বপ্রথম মানুষ। সব মানুষ একই উৎস অর্থাৎ হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) থেকে সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তাঁর স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী পাঠিয়েছেন।’ (সুরা নিসা : ১)।
মানুষ তার আসল সত্তাকে তখনই আবিষ্কার করতে পারে, যখন সে তার মহত্ত্ব ও মর্যাদাকে উপলব্ধি করতে পারে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদের উত্তম রিজিক দান করেছি এবং আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৭০)।
কুরআনে আমরা দেখি, মানুষ যখন আল্লাহতায়ালার বিধানের যথাযথ আনুগত্য করে, তখন সে সেরা জীবের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখে, বিপরীতে যখন সে দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না, হৃদয় দিয়ে সত্য-সুন্দরের উপলব্ধি করে না; তখন সে চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও জঘন্য হিসেবে পরিগণিত হয়। অনেক মানুষ আছে যারা নিজের সৃষ্টির সূচনা ভুলে গিয়ে আত্মণ্ডঅহংকারে ফুলে উঠে, স্বয়ং তার স্রষ্টার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়, নিজেকে সার্বভৌম দাবি করে বসে। যেমন ফেরাউন তার অধীনস্থদের বলেছিল, ‘আমিই তামাদের সবচেয়ে বড় প্রভু।’ (সুরা নাজিয়াত : ২৪)। মানুষ এমন এক প্রাণী যাকে মহান আল্লাহতায়ালা নিজের পছন্দ মোতাবেক সৃষ্টি করেছেন, বানিয়েছেন দুনিয়ায় তার খলিফা বা প্রতিনিধি। সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি জিন ও মানুষকে শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা জারিয়াত : ৫৬)।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কীভাবে- এ বিষয়ে আল্লামা ইবনে আরবি বলেন, আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির মধ্যে মানুষের থেকে সুন্দর আর কেউ নেই। কারণ আল্লাহতায়ালা তাকে জ্ঞান ও শক্তি দিয়েছেন এবং তাকে কথা বলা, কথা শোনা, দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন এবং তাকে কৌশল অবলম্বন ও প্রজ্ঞা দান করেছেন। এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালার গুণাবলি। বোখারি-মুসলিমের এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা আদম (আ.)-কে নিজের আকারে সৃষ্টি করেছেন। এর অর্থ এটাই হতে পারে যে, আল্লাহতায়ালার কিছু গুণ কোনো কোনো পর্যায়ে তাঁকেও দেওয়া হয়েছে। তবে আল্লাহতায়ালার কোনো আকার নেই (তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন : ৮/৮১৩)।
আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্ষমতাও মানুষকে দিয়েছেন। তাই কেউ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতার যথার্থ ব্যয় করে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করেছে এবং কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই আল্লাহ প্রদত্ত এ অধিকার যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর যারা এ দায়িত্বের অবহেলা করে কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ কলুষিত করে, তারা মানবতার শত্রু।