প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে তরুণ-তরুণী, এমনকি সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত তারকাদের আত্মহত্যার করুণ সংবাদ। কেন এই আত্মহনন? কেন জীবনের অপার সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে নিজেকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া? মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বরং এটি জীবনের চরম ভুল এবং এক অপূরণীয় ক্ষতি।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, আত্মহননের মূল কারণগুলো হলো- মানসিক অস্থিরতা, তীব্র হতাশা, দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন) ও ফ্রাস্ট্রেশন। তবে যারা এই পথ বেছে নেয়, তারা পরিস্থিতির শিকার মাত্র; কোনোভাবেই তারা বীর নয়, বরং নিজেদের ধ্বংসকারী। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা এবং জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা। এ প্রেক্ষাপটে, কীভাবে আমরা মানসিক চাপ সামলে প্রশান্ত থাকতে পারি, তার জন্য এখানে পাঁচটি কার্যকর টিপস তুলে ধরা হলো-
১. সাধ্যের বাইরের চিন্তা পরিহার করুন : মানুষের জীবনে চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই, কিন্তু আমাদের সব ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষমতা সীমিত। যা আমাদের সাধ্যের বাইরে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা অর্থহীন। যদি কোনো সমস্যা সমাধানযোগ্য হয়, তবে উদ্যোগ নিন। কিন্তু যদি তা আপনার ক্ষমতার বাইরে থাকে, তবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে বাস্তবতা মেনে নিন। মনে রাখবেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা আপনার বর্তমান মানসিক শান্তিকে সবচেয়ে বেশি নষ্ট করে। তাই অপ্রয়োজনীয় ভার মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন।
২. সমালোচনাকে সহজভাবে গ্রহণ করুন : সমাজের কিছু মানুষ সব সময়ই থাকবে যারা কটুকথা বলবে, সমালোচনা করবে বা আপনার কাজে খুঁত ধরবে। এসব মন্তব্যকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে তা আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে এবং মন খারাপের কারণ হয়। বরং এগুলোকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের একজনকে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি...। অর্থাৎ, এই সমালোচনাই আপনার জন্য একটি পরীক্ষা। এসব কটূক্তিকে এড়িয়ে চলুন, নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকুন এবং একটি ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলুন। আপনার সাফল্যই হবে শ্রেষ্ঠ জবাব।
৩. অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করুন : যখন আপনি মানসিকভাবে খারাপ অনুভব করছেন, তখন নিজেকে ঘরবন্দি না রেখে বাইরে আসুন এবং সাধ্যমতো মানুষের উপকার করুন। অন্যকে সাহায্য করলে আমাদের মনে এক ধরনের সুখের অনুভূতি জন্মায়। বিজ্ঞানসম্মতভাবে, তখন আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ‘ডোপামিন’ নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের আনন্দিত করে। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে দুস্থ ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো শুধু মানবিক দায়িত্বই নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখারও একটি শক্তিশালী উপায়।
৪. ডিভাইস থেকে বিরতি নিন : মন খারাপ বা হতাশার সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এসব প্ল্যাটফর্ম অন্যের ‘নিখুঁত’ জীবন দেখে আপনার হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বরং বাইরে যান, প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটান। বন্ধুবান্ধব বা সামাজিক কাজে যুক্ত হোন। প্রকৃতির সজীবতা এবং বাস্তব জগতের মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আপনার মনকে সতেজ করবে এবং হতাশা কাটাতে সাহায্য করবে।
৫. স্রষ্টা ও আধ্যাত্মিকতার দিকে মনোনিবেশ করুন : আমাদের আত্মার খাদ্য হলো আধ্যাত্মিকতা। একজন মুসলিম হিসেবে কোরআন এবং আল্লাহর স্মরণ আমাদের হৃদয়ের প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। আল্লাহ নিজেই বলেছেন, জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়। নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করুন, এর অর্থ বুঝুন এবং জীবনে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন। আল্লাহর জিকির ও সঠিক পথে চলার প্রচেষ্টা আমাদের হৃদয়কে প্রশান্ত করবে, মনোবল দৃঢ় করবে এবং জীবনের কঠিনতম মুহূর্তেও ভরসা জোগাবে। জীবন আমাদের জন্য এক অমূল্য উপহার। হতাশার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া কখনোই সমাধান হতে পারে না। বরং আমাদের উচিত ধৈর্য ধারণ করা, সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখা এবং ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া।