ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিশুর নাম রাখা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা

ফারহান হাসনাত
শিশুর নাম রাখা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলামে নাম রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো মানুষের পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক মাধ্যম হচ্ছে তার নাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে উম্মতকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। ভালো নাম রাখতে বলেছেন। মন্দ ও অসুন্দর নাম রাখা থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক করেছেন। মন্দ নামের পরিবর্তে ভালো নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সুন্দর নাম শুনলে মানুষের মনে এক রকম ভালো লাগা কাজ করে। সুন্দর প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। তাই তো ভালো নাম থাকলে ভালো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া যায়। আর মন্দ নাম হলে মন্দ। নবজাতক শিশুদের সুন্দর নাম রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সুন্দর নাম হলো আবদুল্লাহ এবং আবদুর রহমান।’ (মুসলিম : ২১৩২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মন্দ নাম পাল্টাতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মন্দ নাম বদলে দিতেন।’ (তিরমিজি : ২৮৯)।

আলি (রা.) বলেন, “হাসান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আমি তার নাম রাখলাম হারব (যুদ্ধ)। রাসুল (সা.) এসে বললেন, ‘আমার দৌহিত্র আমাকে দেখাও, তোমরা তার কী নাম রেখেছ?’ আমরা বললাম, ‘হারব’। তিনি বললেন, ‘বরং তার নাম হাসান।’ পরে হুসাইন ভূমিষ্ঠ হলে তার নাম রাখলাম হারব। রাসুল (সা.) এসে বললেন, ‘আমার দৌহিত্র আমাকে দেখাও, তোমরা তার কী নাম রেখেছ?’ আমরা বললাম, ‘হারব’। তিনি বললেন, ‘বরং তার নাম হুসাইন।’ এরপর তৃতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার নামও রাখলাম হারব। এরপর রাসুল (সা.) এসে বললেন, ‘আমার দৌহিত্র আমাকে দেখাও, তোমরা তার কী নাম রেখেছ?’ আমরা বললাম, ‘হারব’। তিনি বললেন, ‘বরং তার নাম মুহাসসিন। এরপর তিনি বললেন, আমি হারুন (আ.)-এর সন্তান শাবার, শুবাইর ও মুশাব্বিরের নামানুসারে এদের নাম রাখলাম।” (মুসনাদে আহমাদ : ৭৬৯)।

শুধু তাই নয়, বড়দের মধ্যে কারও নাম অপছন্দ হলে তাদের নামও তিনি পাল্টে দিতেন। ইবনে মুসাইয়িব (রহ.) থেকে বর্ণিত, “একবার তার পিতা রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার নাম কী?’ তিনি বললেন, ‘হাজন (শক্ত বা প্রতিকূল)।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘বরং তোমার নাম ‘সাহল’। তিনি বললেন, ‘আমার পিতার দেওয়া নাম আমি পাল্টাব না।’ ইবনে মুসাইয়িব (রহ.) বলেন, ‘সেই থেকে আমাদের মাঝে সব সময় প্রতিকূলতা লেগেই থাকে।’ (বোখারি : ৫৮৩৬)।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গোলাম বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, “জাহেলি যুগে বশির (রা.)-এর নাম ছিল জাহম ইবনে মাবাদ। তিনি হিজরত করে রাসুল (সা.)-এর কাছে চলে আসার পর রাসুল জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার নাম কী?’ তিনি বললেন, ‘জাহম’। তা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, ‘বরং তোমার নাম বশির।” (আবু দাউদ : ৩২৩০)।

উসামা ইবনে আখদারি (রা.) বলেন, “রাসুল (সা.)-এর কাছে আসা প্রতিনিধি দলের মাঝে এক ব্যক্তির নাম ছিল আসরাম। রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার নাম কী?’ সে বলল, ‘আসরাম’। রাসুল (সা.) বললেন, জুরআ।” (আবু দাউদ : ৪৯৫৪)। প্রতিটি মুসলমানের উচিত, সন্তানের অর্থবোধক ও উত্তম নাম রাখা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত