প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৫ জানুয়ারি, ২০২১
বার্জার’স ডিজিজ কী?
পায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির ধমনীগুলোতে রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতার ফলে সৃষ্ট অবস্থার নাম বার্জার’স ডিজিজ। ধূমপানের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। আমেরিকার চিকিৎসাবিজ্ঞানী লিও বার্জার (১৮৭৯-১৯৪৩)-এর নামানুসারে রাখা হয় এর নাম। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটা কথা আছে নো স্মোকিং নো বার্জার’স। যারা ধূমপান করেন না তাদের কখনোই এ রোগটি হবে না। আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর। বার্জার’স রোগী অপারেশনের পর যদি আবার ধূমপান শুরু করে তাহলে ফের দেখা দেয় রোগটি। ধমনীতে তিনটি স্তর থাকে। সব স্তরই আক্রান্ত হয়। রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ততার জন্য পায়ে এক সময় পচন শুরু হয়।
রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ
১. রোগী পায়ে, বিশেষ করে কাফ মাসলে ব্যথা অনুভব করে। কখনও কখনও উরু কিংবা নিতম্ব অথবা পায়ের পাতায় ব্যথা হয়। ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সাধারণত রোগী হাঁটলে কিংবা ব্যায়াম করলে শুরু হয় ব্যথা। বিশ্রাম নিলে ব্যথা সেরে যায়। রোগী আবার হাঁটা শুরু করলে তা আবার ফিরে আসে। এ অবস্থা বারবার চলতে থাকে। দেখা গেছে, এর আগে রোগী যতটুকু হাঁটার পর ব্যথা শুরু হতো, পরে তার চেয়ে কম হাঁটলেই ব্যথা শুরু হয়। অর্থাৎ আগে যেখানে আধা মাইল হাঁটলে পায়ে ব্যথা হতো, সেখানে বর্তমানে সিকি মাইল হাঁটলেই একই রকম ব্যথা হয়। অর্থাৎ ক্রমেই রোগীর চলাচল এবং ব্যথার আক্রমণের মধ্যবর্তী সময়টা কমে আসতে থাকে।
২. রোগী বিশ্রামরত অবস্থায়ও যদি ব্যথা অনুভব করে, তবে বুঝতে হবে গ্যাংগ্রিন হতে আর বেশি দেরি নেই। সে ক্ষেত্রে রোগী পায়ের পাতায় বেশি ব্যথা অনুভব করে। রাতে এই ব্যথা তীব্রতর হয়। পা ওপরে তুলে বা বিছানার বাইরে ঝুলিয়ে রোগী ব্যথা থেকে মুক্তির পথ খোঁজে। কখনও কখনও শীতল মেঝেতে দাঁড়িয়ে আরাম পেতে চায়। কিন্তু ব্যথা একসময় এত অসহনীয় হয়ে ওঠে যে, রোগী ঘুমানোর জন্য বিছানা ছেড়ে চেয়ার বেছে নেয়। সারারাত কেটে যায় তার সীমাহীন অস্থিরতায়।
৩. বিশ্রামরত অবস্থায় যে ব্যথা হয়, পা ওপরে ওঠালে বা নড়াচড়া করলে সে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। রোগীর ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। দিনে দিনে আরও বিধ্বস্ত হয়ে যায় সে। তার মুখের দিকে তাকালেই যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ চোখে পড়ে।
৪. রোগীর পা টনটন করে এবং তা অসাড় বা অনুভূতিশূন্য হয়ে আসে। আক্রান্ত অংশ শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে ঠান্ডা থাকে।
৫. আক্রান্ত বা গ্যাংগ্রিনের জন্য কালো হয়ে যায় এবং কুঁচকে যায়। পচন থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে।
৬. অবিরাম ব্যথা এবং নিদ্রাহীন রাত কাটানোর ফলে রোগীর চেহারায় অসময়ে বয়সের ছাপ পড়ে এবং চোখ-মুখ ভেতরে বসে যায়। নষ্ট হয়ে যায় চেহারার লাবণ্যতা।
৭. রোগী বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসতে পছন্দ করে। চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। সে তার আক্রান্ত পা কাউকে ধরতে দিতে চায় না। এমনকি চিকিৎসকও তার পা স্পর্শ করামাত্র সে পিলে চমকানো কাতরধ্বনি করে ওঠে।
একজন চিকিৎসক রোগীর আক্রান্ত পায়ে কী পরীক্ষা করেন
প্রথমত চিকিৎসক রোগীর পা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি সুস্থ পায়ের সঙ্গে আক্রান্ত পাটি মিলিয়ে দেখেন। রোগীর পায়ের রং পরিবর্তন হয়েছে কি-না বা কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা লক্ষ করেন। আক্রান্ত পায়ের ভালো অংশের সঙ্গে খারাপ অংশের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট রেখা আছে কি-না পরীক্ষা করেন, পায়ে স্বাভাবিক লোম আছে কি-না, লোম কম কিংবা একেবারেই অনুপস্থিত কি-না, রোগীর পায়ের ত্বক শুকিয়ে গেছে কি-না বা তা কুঁচকে গেছে কি-না, ঘা আছে কি-না, নখের অবস্থা কেমন, মাংসপেশি শুকিয়ে গেছে কি-না ইত্যাদি পরখ করেন। অতঃপর তিনি হাত দিয়ে রোগীর পায়ের উত্তাপ, রক্তনালির স্পন্দন, অনুভূতি ইত্যাদি অনুভব করার চেষ্টা করেন।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
এর দুই ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। একটি সতর্কতামূলক, অপরটি শল্য চিকিৎসা। সতর্কতামূলক চিকিৎসা হলো স্রেফ রোগীকে রোগ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া। তাতে কাজ না হলে পরে রোগ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছায় যে, অপারেশন বা শল্য চিকিৎসা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
সতর্কতামূলক চিকিৎসা
* রোগীকে কড়াকড়ি ধূমপান বর্জন করতে হবে।
* পায়ের পাতা সর্বদা পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে।
* পায়ের আঙুলের নখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সতর্কভাবে কাটতে হবে।
* সর্বদা নরম এবং ঠিকমতো পায়ে লাগে এমন জুতো পরতে হবে।
* পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে।
* ব্যথানাশক এবং রক্তনালির প্রসারণের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
* প্রয়োজন হলে নিয়মিত ড্রেসিং করতে হবে এবং কোনো ইনফেকশন থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে।
মূল কথা বা চিকিৎসা হলো আজই ধূমপান ছেড়ে দিন।
ডা. মাহমুদুল হাসান সরদার (ক্যান্সার চিকিৎসক)
সরদার হোমিও হল, ৬১/সি, আসাদ এভিনিউ
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
সেল-০১৭৩৭৩৭৯৫৩৪, ০১৭৪৭৫০৫৯৫৫