আমাদের গলার নিচের অংশের সামনের দিকে থাইরয়েড গন্থি থাকে। গলার সামনে যে উঁচু হাড় থাকে তাকে অ্যাদাম অ্যাপেল বলে। এর দেড় ইঞ্চি নিচ থেকে থাইরয়েডের গন্থি শুরু হয়।
মাঝখানে ইসমাস থাকে, দু’পাশে থাকে দুই লোব। এ অংশ সাধারণত দেখা যায় না এবং নরমাল গ্রন্থি কোনো অবস্থাতেই হাত দিয়ে অনুভব করা সম্ভব হয় না। কোনো কারণবশত এটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলেই দৃশ্যমান হয় এবং একে হাত দিয়ে অনুভব করা সম্ভব। এ গন্থি বৃদ্ধির অনেক কারণ আছে।
শরীরে সাধারণত হরমোনাল পরিবর্তন থেকে বা খাদ্যে আয়োডিনের অভাব থেকে জটিল টিউমার বা ক্যান্সার থেকে থাইরয়েড গন্থি বৃদ্ধি পেতে পারে। থাইরয়েড গন্থি থেকে যে হরমোন তৈরি হয় তাকে থাইরক্সিন বলে। এ হরমোন আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। শিশুকালে এ হরমোনের ঘাটতি ঘটলে শিশু আকারে ছোট ও শিশুর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়। বোকা, বেঁটে কদাকার মানুষ তৈরি হয়, যাকে আমরা ক্রিটিন বলি।
এ হরমোন পরিমাণে বেড়ে গেলে শরীর কঙ্কালসার হয়ে পড়ে এবং আমাদের মস্তিষ্ক ও হার্ট এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়। ফলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায় না ও এ থেকে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।
থাইরয়েড গন্থি বৃদ্ধির কারণ
যখন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই (ফিজিওলজিক্যাল)
* বয়ঃসন্ধি এর সময়।
* গর্ভাবস্থায় এ গন্থি সাধারণত দু’পাশে সমান আকারে বৃদ্ধি পায়। এটি এমনিতেই চলে যায়, কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে না গেলে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
যখন চিকিৎসার প্রয়োজন (প্যাথলজিক্যাল)
* থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি যা সাধারণত খাদ্যে আয়োডিনের অভাব থেকে হয়।
* কোনো ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ গন্থি বৃদ্ধির কারণ।
* ভাইরাসজনিত থাইরয়েড গন্থির ইনফেকশন সচারচর বেশি দেখা যায় না।
* থাইরয়েড গন্থির টিউমার (অ্যাডেনোমা)।
* থাইরয়েড গন্থির ক্যান্সার (প্যাপিলারি, লিম্ফোমা)।
থাইরয়েড হরমোন স্বল্পতার উপসর্গ (প্যাথলজিক্যাল)
* বেশি ঠান্ডা লাগা।
* ওজন বেড়ে যাওয়া।
* খাবার রুচি কমে যাওয়া।
* কোষ্ঠকাঠিন্য।
* ঘুম ঘুম ভাব হওয়া।
* পালস রেট কমে যাওয়া।
* মহিলাদের মাসিকের সমস্যা হওয়া।
* মুখম-ল ফুলে যাওয়া।
* চামড়া রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়া।
* স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া।
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়