সাধারণত মুখের ত্বকের ওপর ব্রণ যদি দেখা দেয় তাহলে ছেলে বা মেয়েই হোক, কারোরই মনে স্বস্তি নেই। বয়োসন্ধিকালের শুরুতে বা ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সে এটি বেশি দেখা দেয়। তবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত এটি হতে দেখা যায়। টিনএজারদের মধ্যে ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রেই কম অথবা বেশি পরিমাণে এটি হয়ে থাকে। ২০ বছর বয়সের পর থেকে এটি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সাধারণত মুখে যেমন গাল, নাক, থুতনি ও কপালে হতে দেখা যায়।
ব্রণ হওয়ার কারণ : বংশগত প্রভাব একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বয়োঃসন্ধিকালে এড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবামের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই সেবাম থেকে ফ্রি ফ্যাটি এসিড তৈরি করে লোমের গোড়ার উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া। ফলে লোমের গোড়ায় প্রদাহের সৃষ্টি হয় এই ফ্যাটি এসিডের প্রভাবে। এর পাশাপাশি জমা হয় লোমের গোড়ায় কেরাটিন নামক পদার্থ। ফলে সেবাসিয়াস গ্রন্থিপথ বন্ধ হতে থাকে এই কেরাটিন, লিপিড আর মেলানিন পদার্থ দিয়ে, যা ‘ব্লাকহেড’ বা ‘হোয়াইট হেড’ হিসেবে দেখা দিয়ে থাকে। অনেকের ধারণা, তৈলাক্ত খাবার খেলে বুঝি ব্রণ হয়। সত্যিকার অর্থে কথাটি সত্য নয়।
ব্রণ ও ক্রিম : যেসব ক্রিমে তৈলাক্ত উপাদান থাকে, যাদের মুখে বেশি ব্রণ হয় তাদের সেসব ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, ক্রিম যদি তৈলাক্ত হয় তবে তা ব্রণ রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
চিকিৎসা পদ্ধতি : রোগীর ব্রণ আক্রান্তের গুরুত্ব বিবেচনা করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হয়। হতে পারে তা মলম থেকে শুরু করে খাওয়ার জন্য নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক অথবা রেটিনয়ড জাতীয় ওষুধ।
ব্যাকটেরিয়ানাশক : অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে টেট্রাসাইক্লিন ১৮৫১ সাল থেকেই ব্রণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। টেট্রাসাইক্লিন দামে সস্তা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং অত্যন্ত কার্যকরী। এই অ্যান্টিবায়োটিক ব্রণ তৈরি করার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে দমন করে। তবে সমস্যা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কয়েক মাস ধরে এই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যেতে হয়। এর দ্রুত কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায় না। সাধারণভাবে এ ওষুধ খাওযাার এক থেকে দেড় মাস পর উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। আর একটি ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে মিনোসাইক্লিন। মিনোসাইক্লিন টেট্রাসাইক্লিনের চেয়েও অধিক কার্যকর। দেখা গেছে, ৫০০ মিলিগ্রাম টেট্রাসাইক্লিনের চেয়ে ১০০ মিলি গ্রাম মিনোসাইক্লিন বেশি কার্যকর।
ব্রণ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ডক্সিসাইক্লিন একটি চমৎকার ওষুধ। এরিথ্রোমাইসিন খেয়ে যদি ব্যাকটেরিয়াা প্রতিরোধ করা যায়, সে ক্ষেত্রে ডক্সিসাইক্লিন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধ।
এরিথ্রোমাইসিন বা ক্লিনডামাইসিন : গর্ভবতী মহিলারা যখন টেট্রাসাইক্লিন খেতে পারে না, তখন এরিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্লিনডামাইসিনও অন্যান্য ওষুধের মতো একটি কার্যকরী ওষুধ।
হরমোন থেরাপি : মহিলাদের ক্ষেত্রে সেবামের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যদি ওভারি থেকে এন্ডোজেন হরমোন তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে কম ডোজের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া যাবে এবং তাতে থাকতে হবে নন-এন্ডোজেন প্রজসটিন। তবে এ ধরনের হরমোন চিকিৎসা পদ্ধতি কোনো অবস্থায়ই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেওয়া যাবে না।
সার্জারি পদ্ধতি : ব্রণের কালো দাগ, পাকা ব্রণ ও সিষ্ট জাতীয় ব্রণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি দারুণ কার্যকর। স্কালপেল দুই নম্বর ব্লেডের সাহায্যে এই ছোট অপারেশনটি করতে হয়।
ডা. দিদারুল আহসান
চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা