ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হঠাৎ মুখ বেঁকে গেলে করণীয়?

হঠাৎ মুখ বেঁকে গেলে করণীয়?

আনিকা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে, হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে গিয়ে দেখে তার মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে গেছে, ডান চোখ বন্ধ হয় না, কুলি করতে গেলে অন্য পাশে চলে যায়, আনিকা তো ভয়ে চিৎকার-কান্নাকাটি শুরু করে। চিৎকার শুনে আনিকার মা দৌড়ে এলো, মেয়েকে দেখে মা ও চিন্তায় পড়ে গেল, আনিকার বাবা অফিসে চলে গেছে, মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলেন।

সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন; কিন্তু কোন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাবেন চিন্তায় পড়ে গেলেন। কারণ একদিকে মুখের সমস্যা, অন্যদিকে চোখ বন্ধ হয় না, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন। এমন সময় আনিকার এক আত্মীয় বললেন, আমার এই ধরনের সমস্যা হয়েছিল। একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসায় আমি ভালো হয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে ওই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার রোগের বর্ণনা শুনে আশ্বস্ত করলেন, ‘বললেন, এটাকে ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি বলা হয়, এ রোগ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, তবে শুধু ওষুধে এটা ভালো হয় না। ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে ও কিছু ব্যায়াম ও নিয়মকানুন মেনে চললে ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।

আনিকার বাবা-মা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলেও টেনশনমুক্ত হতে পারলেন না, কারণ সামনে মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা। তাই আনিকার বাবা মেয়েকে নিয়ে গেলেন আরেকজন নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে। তিনিও একই কথা বললেন। কিছু ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে বললেন, তারপর আনিকার বাবা-মা নিশ্চিত মনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করলেন।

আসুন এখন আমরা আনিকা যে রোগে আক্রান্ত হলো, তার কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিই

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কি?

এটা এক ধরনের প্যারালাইসিস, আমাদের সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভটিকে ফেসিয়াল নার্ভ বলে। যখন এটি আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায়, তখন তাকে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা পালসি বলা হয়। জন বেল নামের এক ভদ্রলোক এ রোগটি প্রথম আবিষ্কার করেন, সেজন্য একে বেলস পালসিও বলা হয়।

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কাদের বেশি হয়?

এটি যেকোনো বয়সের মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে, তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এ রোগটি বেশি দেখা যায়।

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি কেন হয়?

বেলস পালসি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য

১। ভাইরাল ইনফেকশন

২। মধ্য কর্নে ইনফেকশন

৩। ঠান্ডাজনিত কারণে

৪। আঘাতজনিত কারণ

৫। মস্তিষ্কের স্ট্রোকজনিত কারণ

৬। ফেসিয়াল টিউমার

৭। কানের অপারেশন পরবর্তী সময়ে ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি ইত্যাদি।

ফেসিয়াল পালসি বা বেলস পালসি’র চিকিৎসা কি?

এ রোগের চিকিৎসা কারণের ওপর নির্ভর করে। ওষুধ কারণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন, তবে সবক্ষেত্রেই ওষুধের পাশাপাশি মূল চিকিৎসা হলো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।

এ রোগে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট প্লান করে থাকে তার মধ্যে

- প্রোপ্রাইওসেপ্টিভ নিউরো মাস্কুলার ফ্যাসিলিটেশন

- ইনফ্রা রেড রেডিয়েশন থেরাপি

- ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন থেরাপি

- এক্টিভ ও প্যাসিভ ফ্যাসিয়াল মাসল এক্সারসাইজ

- স্পীচ রি-এডুকেশন থেরাপি

- ব্যালুনিং এক্সারসাইজ

- রিঙ্কলিং এক্সারসাইজ ইত্যাদি

তবে এই রোগের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২ থেকে ৩ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।

ডা. এম ইয়াছিন আলী

বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ

কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান ফিজিওথেরাপি বিভাগ

প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

চিফ কনসালটেন্ট ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল

ধানমন্ডি, ঢাকা।

মোবা : ০১৭৮৭১০৬৭০২

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত