ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আমরা ৫৪ নদীর পানির হিস্যা চাই, ভিক্ষা চাই না: রংপুরে মির্জা আব্বাস

আমরা ৫৪ নদীর পানির হিস্যা চাই, ভিক্ষা চাই না: রংপুরে মির্জা আব্বাস

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন আমরা ভারতের কাছে পানি ছাড়া অন্য কিছু চাই না। আমরা বকশিশ চাই না, ভিক্ষা চাই না। আমরা ৫৪ নদীর পানির হিসাবের পাওনা চাই। আমাদের হিসেবের পাওনা দিতে হবে। আজকে না হলে কালকে বলে দিতে হবে ।

রোববার (৪ মে) বিকেলে তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গণপদযাত্রার পূর্বে নগরীর শাপলা চত্বরে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, পানি কখনও মারণাস্ত্র হতে পারে না। পানি কখনও যুদ্ধের অস্ত্র হতে পারে না। একমাত্র ভারত বিশ্বে দেখিয়ে দিলো, পানি তারা যুদ্ধের ও মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে ভারতের অনেক কিছু আছে। আমাদের কাছে ভারতের অনেক পোর্ট আছে। মংলা পোর্ট আছে, চট্রগ্রামে আছে। আমরা এগুলো হিসেব করবো। হিসেব করার সময় এসেছে। আমাদের তিস্তার পানি দিতে হবে। ফারাক্কার পানি চাই। দিতে হবে। যেখানে যেখানে পানি দরকার সেখানে সেখানে পানি দিতে হবে। শুধুমাত্র সরকারের অপেক্ষায় আছি। কিছুদিন আগে যে সরকার ছিলো, তারা সরকারে থাকার ইচ্ছে থেকে ভারতের সাথে এসব হিসেব করেন নাই।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা অনেক আগেই পানির ন্যায্য হিস্যা পেতাম। যদি হাসিনার মতো একটা সন্ত্রাস সরকার না আসতো। এই পানি তারা ভারতের কাছে কিছু বলতে পারে নাই। এসময় তিনি আসাদুল হাবীব দুলুকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, “দুলু উত্তরবঙ্গের একজন প্রতিবাদী মুখ। একজন কৃতি সন্তান। তাই দুলু তুমি সাবধানে থাকবে। কেননা ভারত কখনও এই ধরনের প্রতিবাদী মুখ সহ্য করতে পারে না। ইতিপূর্বে শুধুমাত্র সুরমা নদীর বাঁধের জন্য আমাদের ইলিয়াছ আলীকে গুম করা হয়েছে।

মির্জা আব্বাস এসময় তিস্তা নদী নিয়ে আন্দোলনের আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং তিস্তা আন্দোলন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই আন্দোলনের সাথে থাকার অঙ্গীকার করেন।

গণপদযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এদিকে এই গণপদযাত্রাকে কেন্দ্র করে দুপুর ১ টার পর থেকেই তিস্তা নদী বেষ্টিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে। সময় যত বাড়ে লোকজনের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই” শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর এলাকা। সব শ্রেণিপেশার মানুষের যেন জনস্রোত। এসময় বন্ধ হয়ে যায় সকল সড়কে যানবাহন। নগরীর প্রধান সড়কে তিস্তা বাঁচাই আন্দোলন গণপদযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষ। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত এ গণপদযাত্রা রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পদযাত্রাটিকে এক গণ-আন্দোলনে রূপ দেয়। এই গণপদযাত্রায় তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড ও ব্যানার হাতে অংশ নেন নদীপারের মানুষসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

পদযাত্রায় রংপুর , লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম জেলায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের জনস্রোত নেমেছিল।পদযাত্রায় কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে আসা কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির অভাবে চাষাবাদ দিনদিন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তিস্তা শুকিয়ে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎও শুকিয়ে যাবে।

লালমনিরহাট থেকে আসা সাব্বির বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও জীবিকা আজ হুমকির মুখে। অবিলম্বে তিস্তা নদী পুনঃখনন, আন্তঃদেশীয় পানি চুক্তির বাস্তবায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার দাবি জানাই। প্রতি বছর আমরা বর্ষায় বন্যায় ভাসি, আর শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার করি। এটি কোনোভাবেই সহনীয় নয়। তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অংশ।

মির্জা আব্বাস,তিস্তা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত